ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিশ্বে বর্তমান পরিস্থিতি

প্রকাশিত: ২২:২৯, ২৫ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিশ্বে বর্তমান পরিস্থিতি

অনলাইন ডেস্ক ॥ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষণা করা দেশব্যাপী লকডাউন শুরু হয়েছে আজ থেকে। মধ্যরাতে শুরু হওয়া এই লকডাউন চলবে টানা ২১ দিন। টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে মিস্টার মোদী বলেছেন, "বাড়ির বাইরে ঘোরাফেরার উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকবে।" তার এই ঘোষণার পর পরই দেশটিতে শুরু হয় কেনাকাটার হিড়িক। রাজধানী দিল্লীসহ অন্য শহরগুলোতে ফার্মেসি ও সুপারমার্কেটের বাইরে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ওষুধ আর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে দেখা গেছে মানুষকে। তবে লকডাউন ঘোষণার পর এক টুইটার বার্তায় জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি লিখেছেন, "প্রয়োজনীয় জিনিস এবং ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। এগুলো নিশ্চিত করতে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার একসাথে কাজ করবে।" ভারতে এ পর্যন্ত ৫১৯ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং মারা গেছে ১০ জন। বিশ্বে সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি কী? যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে চার লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ। আর মৃতের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজারের কাছাকাছি। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশ চীন যেখানে ৮১ হাজারের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এরপরেই রয়েছে ইতালি যেখানে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এ তালিকায় থাকা অন্যদেশগুলো যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র (৫৩,৭৪০), স্পেন(৩৯৮৮৫), জার্মানি(৩২৯৮৬), ইরান, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাজ্য। করোনাভাইরাস আক্রান্ত এসব দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে ইতালিতে। সেখানে এ পর্যন্ত ৬৮২০ জন মারা গেছে। এছাড়া চীনের হুবেই প্রদেশে ৩১৬০, স্পেনে ২৮০৮, ইরানে ১৯৩৪, ফ্রান্সে ১১০০, যুক্তরাষ্ট্রে ৭৭৫ এবং যুক্তরাজ্যে ৪২২ জন মারা গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দশটি দেশের মধ্যে নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও বেলজিয়ামেও শতাধিক প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। নিউ ইয়র্কে সংক্রমণ 'বুলেট ট্রেনের' গতিতে : নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো হুঁশিয়ার করে বলেছেন তার রাজ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বুলেট ট্রেনের চেয়েও বেশি গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এমন অবস্থায় চিকিৎসা সহায়তা চেয়েছেন তিনি। "আক্রান্তের সংখ্যা আমাদের আশঙ্কার চেয়ে বেশি এবং এর গতি আমাদের চিন্তার বাইরে," মিস্টার কুমো মঙ্গলবার একথা বলেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সংকট মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় সরকার কোন রাজ্যেই পর্যাপ্ত জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে না। নিউইয়র্কে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং ২১০ জন মারা গেছে। তিনি বলেন, "আমাদের কেন্দ্রীয় সহায়তা দরকার এবং সেটা এখনি দরকার।" বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মঙ্গলবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র করোনাভাইরাস সংক্রমণের নতুন কেন্দ্র হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন বললেন যে, আগামী মাসে ব্যবসার জন্য আবারো খুলে যাবে যুক্তরাষ্ট্র, ঠিক সে সময়েই এই হুঁশিয়ারি এসো। গভর্নর মিস্টার কুমো জানান, কেন্দ্রীয় সরকার নিউইয়র্কে মাত্র ৪০০ ভেন্টিলেটর পাঠিয়েছে যেখানে রাজ্যটিতে প্রায় ৩০ হাজার ভেন্টিলেটর দরকার। তিনি অভিযোগ করেন, "তোমরা ২৬০০০ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছো কারণ তোমরা মাত্র ৪০০টি ভেন্টিলেটর পাঠিয়েছো।" নিউইয়র্কে বর্তমানে ৭০০০ ভেন্টিলেটর রয়েছে। নেটোর সহায়তা চেয়েছে স্পেন : এদিকে, স্পেনে একদিনে ৫১৪ জনের মৃত্যু এবং সব মিলিয়ে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নেটোর কাছে মানবিক সহায়তা চেয়েছে দেশটি। দেশটির সরকার লাখো সার্জিক্যাল মাস্ক, গ্লাভস, গাউন, থার্মোমিটারসহ অন্যান সরঞ্জাম সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছে। "আমরা ভাইরাস আক্রমণের শুরুর ধাপে রয়েছি, এর থেকে মহামারির সর্বোচ্চ পৌঁছানোর লড়াই শুরু হবে," দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালভাডর ইলা বলেন। ইউরোপে ইতালির পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশ স্পেন। সংক্রমণের হারে শঙ্কিত অস্ট্রেলিয়া : এক সপ্তাহর ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬০০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩০০ জনে। দেশটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ব্রেনডান মারফি গত রাতে বলেন, "আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। কারণ এটা মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি।" বুধবার মধ্যরাত থেকে মানুষের শেষকৃত্য এবং বিয়েতে অংশ নেয়াকে সীমিত করা হচ্ছে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো, পারিবারিক জমায়েতকে নিরুৎসাহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। নিউ সাউথ ওয়েলস যেখানে ১০০০ এর বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, সেখানে দুই মাসের শিশুসহ দশ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। লিবিয়ায় প্রথম রোগী: লিবিয়ার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল দেশটির প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হবার ঘোষণা দিয়েছে। অসমর্থিত খবর বলছে, রোগীটি রাজধানী ত্রিপলির একটি হাসপাতালে আছেন। কঙ্গোতে জরুরি অবস্থা : ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক কঙ্গোতে জরুর অবস্থা জারি করা হয়েছে। একইসাথে রাজধানী কিনহাসাকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দেশটির সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জারি করা হয়েছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। রাজধানী থেকে প্রদেশগুলোতে বিমান, সড়ক এবং নৌ যোগাযোগ বন্ধ করা হয়েছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×