ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছাড়াই টার্মিনালগুলোতে ঘরমুখো মানুষের ভীড়

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২৪ মার্চ ২০২০

পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছাড়াই টার্মিনালগুলোতে ঘরমুখো মানুষের ভীড়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পরা প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস ঠেকাতে সোমবার ১০দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। যা আগামীকাল ২৬ মার্চ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা আছে। এই ঘোষণায় সোমবার রাত থেকে রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনালে ঘরে ফেরা মানুষের হিড়িক। ভাইরাস প্রয়োরোধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই গ্রামের পথে সবাই। মঙ্গলবার সকাল থেকে ট্রেন-লঞ্চ-বাস বন্ধের ঘোষণায় দুপুরের আগে থেকেই ভীড় আরো বাড়তে থাকে। লঞ্চ ও ট্রেন বন্ধ হওয়ায় আটকা পড়েছেন হাজারো যাত্রী। তারা ক্ষোভ জানিয়েছেন সংশি^লষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আতঙ্কে ঢাকা ছাড়ছেন নগরীর মানুষ। গত কয়েকদিন কিছুটা ভীড় কম থাকলেও সোমবার রাত থেকে যেন ঈদের চাপ। বাসে টিকেট নেই। ট্রেনে টিকেটের জন্য হাহাকার। লঞ্চে ঠাঁসা মানুষ। গাদাগাদি করে ছুটে চলা। সবদিনের চাপে রাজধানী একেবারেই ফাঁকা। গত দুই মাসের বেশি সময় রাজধানী ঢাকা দূষণের নগরীর তালিকায় বেশিরভাগ দিন প্রথম থাকলেও এখন ১০এর বেশি স্থানে রয়েছে। অর্থাত মানুষ কমার সঙ্গে কমেছে দূষণের মাত্রা। কমেছে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণও। মঙ্গলবার সকাল থেকে একের পর এক যোগাযোগ সেক্টর লকডাউনের খবর আসতে থাকে। টেলিভিশন গুলোতে চলে ব্রেকিং নিউজ। এ খবরে ঘরমুখো যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নেয়া মানুষের মধ্যে আরো বেশি আতঙ্ক ছড়ায়। প্রকৃত খবর কি তা জানতে অনেকেই জনকণ্ঠ অফিসে ফোন করেন। তারা বাড়ি ফেরার জন্য পরামর্শ নেন। ২৬ মার্চ থেকে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর সোমবার রাতে সোয়া ১০টার হাওর এক্সপ্রেসে নেত্রকোণার পথে রওনা দিতে রাত আটটায় স্ত্রীকে নিয়ে কমলাপুর রেল স্টেশনে যান দিলীপ কুমার। টিকেট পাননি। পরদিনের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে এমন আতঙ্কে স্ট্যান্ডিং টিকেট নিয়ে রাতভর দাঁড়িয়ে ভোরে নেত্রকোনা পৌঁছেন তিনি। বলেন, মহা দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। ট্রেনে মানুষ আর মানুষ। দাঁড়ানোর পর্যন্ত সুযোগ নেই। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত সারা পৃথিবী। এখন পর্যন্ত কোনো ওপ্রতিষেধক আবিস্কার হয়নি এ ভাইরাস দমনের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মতে আপাতত জনসমাগম এড়িয়ে চলাই এ রোগ প্রতিরোধের উপায়। তাতে করে এতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু দেশে এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। বাস, ট্রেন, লঞ্চ সহ ফেরীঘাটে হাজার হাজার মানুষের ভীড়। গাদাগাদি করে ছুটে চলার দৃষ্য অনেককে অবাক করেছে। তবুও ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন নিরুপায় মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে মাওয়া ফেরী ঘাটের এক ফেরীতে অসংখ্য মানুষ পারাপারের ছবি। ছবি দেখে অনেকে মন্তব্য করে বলেছেন, ‘মহা সর্বনাশের দৃশ্য’। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে গেটের প্রবেশমুখে একজন যাত্রীদের হাতে হ্যান্ড সেনিটাইজার দিচ্ছেন। আরেকজন যন্ত্রের সাহায্যে জ¦র মাপার চেষ্টা করছেন। যাত্রীদের তুলনায় এ সেবা অপ্রতুল হলেও শেষ মুহূর্তে তা চালু করায় রেল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন যাত্রীদের অনেকেই। আবার ট্রেনের ভেতর কোন রকম স্প্রে করার ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকে। কয়েকদিন নিত্যানন্দ ফাউন্ডেশন নামের বেসরকারী সংগঠনের পক্ষ থেকে ট্রেনের ভেতরে জিবানুনাশক স্প্রে করতে দেখা গেছে। রেল স্টেশন ঘুরে দেখা যায় ছুটি ঘোষণার পর ঘরমুখো মানুষের ব্যাপক ভিড়। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরছেন অনেকে। করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনতারও অভাব বেশিরভাগ মানুষের মাঝে। এমন জনসমাগম থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তথ্য মতে, করোনা প্রতিরোধের অংশ হিসেবে সরকার মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে সেনাবাহিনী মাঠে নামিয়েছে। জনসমাগম এড়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখা হয়েছে। প্লাটফর্মে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের সময়ের মতো লাইন ধরে প্রবেশ করছেন যাত্রীরা। ট্রেনে উঠছেন একে অপরের গায়ে ঘেঁষে। নূন্যতম দূরত্বও বজায় রাখছেন না যাত্রীরা। দাঁড়িয়ে চলাচল করছেন লোকজন। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার সব ট্রেনই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে গেছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি বলে জানান তিনি। এদিকে মহাখালি আন্তজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, সকাল থেকেই ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে টার্মিনালে। বিকাল থেকে ট্রেন ও লঞ্চ বন্ধের খবরে চাপ আরো বাড়ে। আমরা সাধ্যমত যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। তবে জনবল না থাকার কারণে করোনা ভাইরাস রোধে তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। যাত্রীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই অনেকটা নিশ্চিত করে বাড়ির দিকে গেছেন। সায়েদাবাদ, গাবতলি, গুলিস্তান বাস টার্মিনালে একই ধরণের চিত্র লক্ষ করা গেছে। এদিকে বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা নদী বন্দরের (ট্রাফিক) যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ি যাত্রীবাহি লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে হটাত করে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ায় টার্মিনালে হাজার হাজার যাত্রী আটকা পড়েন। তারা ক্ষোভ জানান। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই। তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছি। সন্ধ্যার পর ঢাকা নদী বন্দর অনেকটাই জনশূণ্য হয়। করোনা ভাইরাস রোধে নৌযান বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, নৌ-যান বন্ধের ঘোষণায় যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু ভাইরাস সংক্রমণ ঠেতাতে এই পদক্ষেপ নেয়ার কোন বিকল্প ছিল না।
×