ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবাধ্য সন্তান ও পিতামাতার দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ২৪ মার্চ ২০২০

অবাধ্য সন্তান ও পিতামাতার দুর্ভোগ

প্রত্যেকটি পিতামাতা চায় সন্তান যেন মানুষের মতো মানুষ হয়। সন্তানের কারণে পিতামাতা সুখী, আবার সন্তানের কারণে পিতা-মাতা দুঃখী। এমন কিছু সন্তান আছে যাদের কর্মকাণ্ড, ব্যবহার, আচার আচরণে বাবা-মা শুধু কষ্টই পান না রীতিমতো বিরক্ত হন। অভিযোগ আসে স্কুল থেকে, পাড়া প্রতিবেশী থেক। সন্তানের কারণে মা-বাবার মুখ মলিন হয়ে যায়, ছোট হয়ে যায়। এমন অনেক বাবা-মাকে বলতেও শুনেছি ও মরে গেলেও বাঁচি-এমন একটি রোগের নাম কন্ডাক্ট ডিজ অর্ডার। কন্ডাক্ট ডিজ অর্ডার শিশু-কিশোরদের মন ও ব্রেনের অসুখ যা সাধারণত আচরণের ত্রুটি হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। আবার অনেকে বলে অবাধ্য সন্তান। পরিসংখ্যান মতে, ৪% শিশু-কিশোরদের মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে প্রায়ই। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে ৪গুণ বেশি। এই আচরণ ও ব্যবহারের সমস্যা সম্পর্কে আত্মীয়স্বজনদের ধারণা থাকে, বয়স হলে এমননিতেই ঠিক হয়ে যাবে। আর চিকিৎসার পরিভাষায় এটি একটি রোগ, যা সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় চিকিৎসা করা প্রয়োজন। নতুবা এই শিশু-কিশোররা পরবর্তীতে পরিবারের ও সমাজের বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হতে পার। কেন এই আচরণে ত্রুটি তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় বাবা-মার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি, ঝগড়া বিবাদ, মারামারি, সংসার ভেঙ্গে যাওয়া, আলাদা জীবনযাপন করা। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যদি ছোটবেলায় শিশুরা পিতামাতা থেকে দূরে যেমন হোস্টেলে বড় হয়, তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা দিতে পারে। আর বিশেষ কারণ হিসেবে বংশগত ধারাবাহিকতা ও দীর্ঘদিন বাবা-মার মদ্যপানের অভ্যাস। আর বায়োলোজিক্যাল কারণের মধ্যে ব্রেনের বিভিন্ন বায়োকেমিক্যালের পরিবর্তন, মৃগী রোগ ও মাথায় আঘাত উল্লেখযোগ্য। লক্ষণসমূহ ১। বাবা-মাকে বিভিন্ন জিনিসের জন্য চাপ সৃষ্টি করা-যেমন সুমন ছেলেটি আগে বাবার কাছ থেকে ১০ টাকা পেলেই খুশি হতা। তারপর ধীরে ধীরে ২০, ৫০, ১০০ টাকা নিত এখন ৪০০ টাকা তাকে দিতে হাত খরচ বাবদ। না দিলে শুরু হয় জিনিসপত্র ভাংচুর ও বিভিন্নভাবে অত্যাচার। ২। প্রতিটি মায়েরও অভিযোগ থাকে ছেলেটা একদম কথা শোনে না, পড়তে বসে না, বই ছিঁড়ে ফেলে এমনকি শিক্ষককের কথাও শুনতে চায় না। ৩। এসব বাচ্চার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ আসে। ৪। এই বাচ্চারা কাউকে ভয় পায় না। ৫। কেউ কেউ বড়দের সঙ্গে এমন সব কথা বলে ও ব্যবহার করে যা অবাক করার মতো। ৬। স্কুল ফাঁকি দেয়া রীতিমতো অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়। স্কুলের কথা বলে ভিডিও গেম খেলা, সিনেমা দেখা ও বাইরে ঘুরে-বেড়ানো এদের অভ্যাস। ৭। ঘরের অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, মারামারি, ঝগড়া এমনকি বাবা-মার সঙ্গেও মারামারি করে ফেলে। ৮। ধীরে ধীরে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হতে থাকে যেমন-চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মিথ্যা কথা বলা, নেশা করা ইত্যাদি। ৯। মোট কথা এদের মধ্যে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন থাকে না। বাবা যদি বলে, ডানে যাও সে যাবে বামে। এই রকম আরও অনেক অসামাজিক কথা-বার্তা, আচার ব্যবহার, করে বেড়ায়। চিকিৎসা: দেখা গেছে এইসব শিশুর সাইক্রিয়াট্রিস্টদের দ্বারা চিকিৎসা করলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়। অতএব নিজে সচেতন হন এবং অন্যকে সচেতন করুন এবং এসব শিশুকে চিকিৎসায় এগিয়ে আসুন। ডা. দেলোয়ার হোসেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
×