ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ২৪ মার্চ ২০২০

ঢাকার দিনরাত

শনিবার অফিসে বসেই অপ্রত্যাশিত সংবাদটি পেলাম। দেশে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ঢাকা শহর আংশিক বা পুরোপুরি লকডাউন করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তথ্যটি দিয়েছেন সাঈদ খোকন। অপ্রত্যাশিত এ অর্থে যে, ভাবিনি ভেতরে ভেতরে এতটা ঝুঁকির ভেতরেই আছি আমরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে নিশ্চয়ই তথ্য-উপাত্ত রয়েছে এমন পরামর্শ প্রদানের নেপথ্যে। এখন আমরা পরামর্শ নেব কিনা, না নেয়ার পেছনে কী কী যুক্তি আছে, সে সব বিচারে না গিয়েই এই কলামে শুধু এ সত্যটুকুই লিখে রাখা যায় যে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর বিশ্বের যেসব দেশের যেসব শহর লকডাউন করা হয়েছে, তার বাসিন্দারাই এই মহামারীর লাগাম টেনে ধরতে সমর্থ হয়েছে। সোমবার এ লেখা প্রেসে যাওয়ার সময় খবরে পড়লাম ঢাকা লকডাউনের কথা বলেনি ডব্লিউএইচও। অবাক কাণ্ড! খোকন সাহেব এখন কী বলবেন? করোনাকালে লকডাউনের সময় এক জার্মানি নাগরিক এবিসি টিভির এক টক শোয়ে তুলে ধরেছেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেছেন, ‘মার্চের ১ তারিখ রাতে বাসায় ফেরার পর ডিনার শেষে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে টিভি ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম দেখি সিটি মেয়র শহরটিকে লকডাউন করেছেন। এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে সবখানে। এর পরই আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্পাহন একটি সংবাদ সম্মেলনে বলছেন, করোনাভাইরাসটি আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে চাপের মধ্যে ফেলবে। সাধারণ মানুষের সুরক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই তবে বেঁচে থাকতে হলে চূড়ান্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমি এ শহরের একটি কলেজে তুলনামূলক বিশ্বসাহিত্য পড়াই। আলবেয়ার কামুর ‘দ্য প্লেগের’ কথা মনে পড়ল। কারণ আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আতঙ্ক ও সুরক্ষা বিষয়ে এক লাইনে পরস্পরবিরোধী কথা আমাকে ভাবিয়ে তুলল। কারণ রাজনীতিবিদরা যখন চাপে থাকেন তখনই এমন কথা বলেন। যাক, লকডাউন মানে আর বাসা থেকে না বেরুলেও চলবে। কিন্তু খাবার তো কিনিনি যথেষ্ট। অষুধ সেও নেই। সকালে মাস্ক ও গ্লাভস, ফ্লিফিথ ওভারকোট পরে বেরুলাম ওসব কিনতে। পুরো জিনিসগুলো কিনলাম মুভি চলাকালে যান্ত্রিক ত্রুটি হলে যেভাবে কোন চরিত্র একবার এদিকে যায় তো আরেকবার অন্যদিকে সে রকম অবস্থায়। মানে নিয়ন্ত্রণ নেই নিজের ওপর। বাসায় ফিরে হোম কোয়ারেন্টাইনে গেলাম। শহরের সবারই এক অবস্থা।’ ইউরোপ স্বীকার করছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন সর্বব্যাপী কোন সঙ্কটে তারা পড়েনি। পৃথিবীর তাবত বড় অর্থনীতির দেশ এই বিপদ মোকাবেলায় নাস্তানাবুদ হচ্ছে। যা হোক, ঢাকা শহরের কথা বলি। খালি চোখে যা দেখছি একেবারে ঈদের মতো না হলেও ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে। গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও কমে এসেছে সড়কে। ফলে নেই যানজট। কিন্তু আছে এক অস্বাভাবিকতা। সমর সেনের কবিতায় আছেÑ ‘বাতাসে ফুলের গন্ধ/ আর কিসের হাহাকার’। অদৃশ্য শত্রুর ভয়ে সবাই যেন আচ্ছন্ন। নিজেকে হাল্কা রাখতে মনোবল অটুট রেখে বন্ধুদের সঙ্গে কিছুটা মশকরা করারও চেষ্টা করি আমরা মাঝেসাজে। মজা করেই পোস্ট দিলামÑ ‘করোনাকালের কষ্ট, মূর্ত-বিমূর্ত’ শিরোনামে। ১. বার বার এ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়েও ভালবাসার মানুষের অনুমতি না পাওয়া, দেখা সাক্ষাত থেকে বঞ্চিত থাকা। ২. উবারে বসে ভাবনা : আমার আগে এই সিটে কোন বিদেশী-প্রবাসী বসেননি তো! চালক ভাইরসামুক্ত কিনা... ৩. বাসে উঠলে দস্তানা-মুখোশ-টুপি-রোদচশমায় ঢাকা আমাকে দেখে যাত্রীদের সন্দেহযুক্ত নজরবাণ ৪. সন্তানের জন্য দুর্ভাবনা সারাক্ষণ, বাসায় সহপাঠীদের ডেকে আড্ডা দিচ্ছে কি? ৫. পত্রিকায় সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয় স্তম্ভ প্রসব করে কতই না সমালোচনা করি, পরামর্শ দিই; এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টাও করে থাকি। অথচ যথেষ্ট যুক্তি তুলে ধরেও ঘরে বসে অফিসের কাজ করার অনুমতি মিলছে না! নাই নাই নাই! আপনি এই ফার্মেসি থেকে ওই ফার্মেসিতে দৌড়াচ্ছেন কিন্তু কাক্সিক্ষত ওষুধটি পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে হতাশা আসা স্বাভাবিক। করোনাভাইরাস থেকে প্রতিরোধমূলক প্রচেষ্টা হিসেবে আপনার কয়েকটি অস্ত্র থাকা অত্যাবশ্যক। এক, মাস্ক ২. হ্যান্ড স্যানিটাইজার ৩. গ্লাভস বা দস্তানা (অনেকে হাতমোজাও বলেন)। মাস্কের আকাল পড়েছিল বটে, কিন্তু দ্রুততম সময়ের ভেতর হাতে তৈরি মাস্ক সুলভ হয়ে যায় ফুটপাথে পর্যন্ত। কিন্তু ওষুধের দোকানে সচরাচর এটি এখন আর পাবেন না। কম দামে বিক্রি করে কম লাভে তাদের আগ্রহ কম। মানুষের উপকার করা বা জনতার প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করাÑ এসব নীতির তারা ধার ধারেন না। আর সে জন্যই তারা হ্যান্ড স্যানিটাইজার সংগ্রহে আগ্রহী নন। আমি বড় ছোট অনেক ফার্মেসিতে গিয়েছি। তারা ক্রেতাদের এ দুটি আইটেম চাওয়ার উত্তরে রোবটের মতো আচরণ করছেন। দম দেয়া পুতুলের মতো একটি ধ্বনিই উচ্চারণ করছেন- ‘নাই’। আর গ্লাভস? ১০০টি গ্লাভসের প্যাকেট ৪০০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন চাইছেন ১২০০ টাকা পর্যন্ত। এরাও তো মুনাফাখোর। তবে আশার কথা হলো শীঘ্রই হ্যান্ড স্যানিটাজার বাজারে চলে আসবে কেরু কোম্পানির উৎপাদনে। একটি সুপারশপ তাদের মূল কোম্পানির তৈরি স্যানিটাইজার নতুন করে উৎপাদন করছে, শোরুমে রাখছে। ফর্মেসিগুলো চাইলে ক্রেতার সুবিধার কথা ভেবে তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে এনে নিজেদের দোকানে রাখত। হ্যান্ড গ্লাভসের কথা জানি না। হাতের সুরক্ষার জন্য এটি অত্যন্ত দরকারি ছিল। অথচ এ নিয়ে কোন খবর চোখে পড়ছে না। আরেকটি জিনিসের কথা খুব শোনা যাচ্ছে। সেটি হলো পিপিই বা পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপন্টে। ডাক্তার-নার্সদের জীবাণুরোধক পোশাক। এই পোশাকের ভেতর বিশেষ চশমা, টুপি এবং জুতাও সংযুক্ত। করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা; বিশেষ করে চিকিৎসক ও নার্সরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, পুরো পৃথিবীতে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কাজে নিয়োজিত লোকবলের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী। চীনের হুবেই প্রদেশে (যেখান থেকে কোভিড-১৯ এর উদ্ভব বলে ধারণা করা হচ্ছে) স্বাস্থ্য কর্মীদের ৯০ শতাংশই নারী। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় হিসাব অনুযায়ী, সে দেশে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নারী ৭৬ শতাংশ। আমাদের দেশেও এই সংখ্যা কম হবে না। ফলে যে রোগের এখনও কোন প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি, সেই রোগের ক্ষেত্রে বিশাল ঝুঁকির মুখে রয়েছে এই খাতের নারীরা। পিপিই নিয়ে আমাদের ডাক্তারদের নানা অভিযোগের ভেতর সুখবর মিললো। একদল তরুণ চিকিৎসক নিজেরাই নিজেদের সুরক্ষার পোশাক তৈরি করে নিয়েছেন। এই মানবিকতাবোধ ও কর্তব্যবোধই বেশি জরুরী এমন দুর্যোগকালে। চিকিৎসকেরা দাবি তুলবেন, সমালোচনা করবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের, এটি স্বাভাবিক। কিন্তু তার চেয়েও স্বাভাবিক ছিল আপৎকালীন সময়ে কিছু একটা ব্যবস্থা নেয়া। নিজেদেরই উদ্যোগী হওয়া। আর ৫০টা পেশার সঙ্গে তারা যদি নিজেদের পেশাকে মিশিয়ে ফেলেন তাহলে আর কী বলার আছে? এই লেখা তৈরির সময়ে ইতালির করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা করতে কিউবার ডাক্তার-নার্সদের একটি দল রওনা দিয়ে দিয়েছেন। এসব দেখে আমাদের চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িতরা যদি অনুপ্রাণিত না হন, তাহলে কষ্টই লাগে। যাহোক, শেষ পর্যন্ত দেশেই এই পিপিই তৈরি শুরু হয়ে গেছে। প্রথম দফায় চার লাখ তৈরি হবে। গার্মেন্টস সেক্টরের দুঃসময়ের মধ্যে তাদের এই তৎপরতা (মাস্ক তৈরিও তাদেরই উদ্যোগ) মন ভাল করে দেয়। আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কাছ থেকে এই ক্রান্তিকারে এ ধরনের মানবিক উদ্যোগই তো আমরা প্রত্যাশা করি। কিন্তু তারা কি ঘুমিয়ে নাকি আতঙ্কগ্রস্ত! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে পাস করা জান্নাতুন নাহার নিজের বাসাতেই তৈরি করছেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। আর তাঁর বানানো হ্যান্ড স্যানিটাইজারগুলো বিতরণ করছেন ছিন্নমূল পথশিশু বা যাদের কেনার সামর্থ্য নেই তাদের মধ্যে। তার প্রশংসা করব নিশ্চয়ই। সালাম জানাব গরিবের ‘মাস্ক আপা’ মিলিতাকেও। বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা বাজারে গ্রামের গরিব মানুষের মধ্যে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করতে নিজে বাড়িতে বসে মাস্ক তৈরি করেছেন তিনি। ভুলে যাচ্ছি না ঢাকায় এনামুলের সুলভ মূল্যের মাস্ক বিক্রির কথা। দেশে যেদিন করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষের খবর প্রকাশিত হলো, সেদিন এক ক্রেতা তাকে বলেছিলেন মাস্কের চাহিদার বিষয়টি। পরদিনই ১০০ মাস্ক কেনেন ১৮ টাকা করে। ৩০ টাকা করে সেগুলো বিক্রি করেন এনামুল। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিনে আমি প্রায় ১২ হাজার টাকা লাভ করি। কিন্তু যাদের কাছ থেকে ১৮ টাকা করে প্রথম দিন কিনেছিলাম, তারা একই মাস্ক বিক্রি করছিল ১০০ টাকা পর্যন্ত।’ মাস্ক বিক্রির সময় তার মনে আঁচড় কাটে একটি ব্যাপার। যেমনটি তিনি বলেন, ‘দামের কারণে অনেককে দেখতাম কিনতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন।’ তিনি ভাবলেন, কেউ কেউ যদি মাস্ক না পরে, তাহলে লাভ কী, এক সময় সবাই তো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। এই বোধটা তার মধ্যে জোরালো হলো। এনামুল বলেন, ‘আমার তো প্যান্টের ব্যবসা। মাস্ক বিক্রি করে এই আয়ের টাকা বাড়তি। তাই এই টাকা দিয়ে আরও কিছু মাস্ক কিনলাম। সেগুলোই ২০ টাকা করে বিক্রি করতে শুরু করলাম।’ খুব অবাক লাগে করোনাভাইরাসের জন্য সতর্কতার প্রাথমিক স্তরেই রয়েছে মাস্কের ব্যবহারের বিষয়টি। অথচ মাস্কের অতি চাহিদার খবর প্রকাশিত হলে অনেক কর্তা ব্যক্তি বলেছেন এটির প্রয়োজন নেই। সে সময়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখেছিলেনÑ ‘মাস্ক পরার যদি কোন প্রয়োজনই না থাকে তাহলে হাসপাতালগুলাতে নার্স আর ডাক্তাররা কেন হ্যাজম্যাট পরে থাকে? আমি ভাই হাত তো ধোবোই, মাস্কও পরব, গ্লাভসও পরব। আমার আশপাশের সবাইকেও পরতে বলব। চীনের এত কাছে থাকার পরেও হংকংয়ে এত কম ইনফেকশনের অনেক কারণের একটা ছোট কারণ হংকংয়ের মানুষজন প্রায় সারা বছরই মাস্ক পরে। হংকংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়া ওয়াশিংটন পোস্টের একটা লেখায় দেখলাম করোনা বিস্তার রোধে হংকংয়ের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে পাবলিক হেলথের একজন প্রফেসর, যিনি আগে ডব্লিউএইচওতে কাজ করতেন, এটার উল্লেখ করছে। তবে তাদের সাফল্যের আসল কারণ, জিনিসটাকে সবার আগে গুরুত্ব দেয়া এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া। তারা এ্যালার্ম রেইজ করছে জানুয়ারির শুরুতে যখন এটা এত ছড়ায়নি। কারণ সতর্ক হতে হবে ঝড় আসার আগে। আইসা গেলে আর কিছু করার নেই।’ শুধু হাত ধুয়ে আর ঘরে বসে জাতির উপকার আমার এক লেখক বন্ধু সুন্দর বলেছেনÑ ইতিহাসে এমন অভূতপূর্ব সময় আর কখনও আসেনি যখন শুধু হাত ধুয়ে আর ঘরে বসে থেকে নিজের, জাতির, দেশের, মানবতার এত বড় উপকার করা যায়। আজকের লেখা শেষ করব একজন গণিত শিক্ষক মহিউদ্দিন খালেদের বক্তব্য দিয়ে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য। ‘করোনাদের কোন নেতা নেই। কোন সংগঠন নেই। কাজেই তাদের সঙ্গে সমঝোতায় আসার কোন পথ খোলা নেই! করোনারা কোন ধর্মে বিশ্বাসী নয়, কোন জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী নয়, তাদের কোন আবেগ অনুভূতি নেই। তারা শুধু পোষকদেহ চেনে এবং সেই পোষকদেহ কি মুসলমানের নাকি খ্রীস্টানের নাকি হিন্দুর নাকি ইহুদির নাকি নারীর, নাকি শিশুর, নাকি বৃদ্ধের, নাকি যুবকের, নাকি খাটাশের, নাকি বাদুড়ের সেটা নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা নেই। পোষকদেহের ভেতর ঢুকে বংশবৃদ্ধি করে নিজের প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখাটাই তার একমাত্র মাথাব্যথা। আর কিছু নয়! কাজেই আমরা শুধু একটা কাজ করতে পারি এবং সেটা হলো, করোনাদের আগ্রাসনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারি! করোনাভাইরাস বাহিনী সারাদেশে মার্চ করে ঢুকতেছে। পোষকদেহে ঢুকতে না পারলে তারা এমনিতেই মরে যাবে। তারা পোষকদেহে ঢোকার ব্রিজ হলাম আমরা। আমরা যদি বেশিরভাগ ব্রিজ অকেজো করে দিই অর্থাৎ আন্তঃদেশীয়-আন্তঃজেলা-আন্তঃএলাকা-আন্তঃপাড়া-আন্তঃবাসা-আন্তঃফ্ল্যাট যোগাযোগ যতটুক সম্ভব বন্ধ করে দিই, সকল প্রকার গণজমায়েত অর্থাৎ সমস্ত সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক- বৈজ্ঞানিক-ধর্মীয় জমায়েত বন্ধ করে দেই তাহলে তাদের বিস্তার গাণিতিক হারে কমে আসবে এবং একসঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা আমাদের হাসপাতালগুলোর ধারণ ক্ষমতার মধ্যে থাকবে।’ শেষকথা বলি: জ্বর এলেই ভয় নয়। হাঁচিকাশি মানেই করোনা নয়। বাইরে বের হলে মাস্ক-দস্তানা পরবেন। ঘরে ফিরেই সব কাপড় ধুতে দেবেন। মোবাইল সেটও জীবাণুমুক্ত করবেন। এবং নিজেও ভালোমতো সাবান মেখে গোসল করবেন। তারপরও করোনা ছুঁলে হয়ে যাবেন একঘরে। আর লেবু খাবেন, প্রচুর পানি পান করবেন। চাই পূর্ণ বিশ্রাম। মনোবল অটুট রাখুন। যুদ্ধে আপনারই জিৎ হবে। ২২ মার্চ ২০২০ [email protected]
×