ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুজিববর্ষে মুজিবনগর দর্শন

প্রকাশিত: ১২:১১, ২২ মার্চ ২০২০

মুজিববর্ষে মুজিবনগর দর্শন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০-২১ সালকে মুজিববর্ষ ঘোষণা করেছে সরকার। ১৭ মার্চ বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বছরব্যাপী উদযাপন। মুজিববর্ষে ঘুরে আসার সুযোগ হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগর থেকে। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে শিক্ষা সফরের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল এই স্থান। দিনটি ছিল সোমবার। সকাল ৮টার দিকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের পেছন থেকে বিভাগের চতুর্থ বর্ষ এবং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুটো বাসে রওয়ানা হয় মুজিবনগরের উদ্দেশ্যে। আমরা ১২৪ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে ছিলেন বিভাগের ৪ জন শিক্ষক। প্রায় ৫ ঘন্টা পর পৌঁছালাম মেহেরপুরের আমঝুপিতে। সেখানে রান্নার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নামিয়ে রেখে আবার রওয়ানা দিলাম মুজিবনগরের উদ্দেশ্যে। দুপুর ২টায় আমরা পৌছালাম সেখানে। প্রথমেই দেখলাম আ¤্রকানন বা আম বাগান। চমৎকার এই বাগানটির মালিক ছিলেন কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের ভবের পাড়ার জমিদার বৈদ্যনাথ বাবু। তাঁর নামানুসারেই জায়গাটির নাম হয় বৈদ্যনাথ তলা। বৈদ্যনাথ তলাতে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করেন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা। পাঠ করা হয় বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। শপথ গ্রহণ এবং ঘোষণাপত্র পাঠের পর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ একটি বিবৃতি পাঠ করেন এবং বৈদ্যনাথ তলার নাম রাখেন মুজিবনগর। সেই থেকে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলার নাম হয় মুজিবনগর। আ¤্রকাকননের সৌন্দর্যে আমরা বিমোহিত হয়ে গেলাম। আ¤্রকাননের সৌন্দর্য উপভোগ করে খানিক রাস্তা হেঁটে চলে আসলাম বাংলাদেশের মানচিত্রের কাছে। যুদ্ধকালীন অবস্থার রূপক এই মানচিত্র। কোন এলাকায় যুদ্ধ হয়েছে, শরণার্থীরা কীভাবে দেশ ছেড়েছিল সেসবই তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযুদ্ধে ১১টি সেক্টরকে ভাগ করে দেখানো হয়েছে মানচিত্রে। মানচিত্রের পাশেই মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ স্থাপনার মূল বৈশিষ্ট্য ১৬০ ফুট ব্যাসের গোলাকার স্তম্ভের উপর মূল বেদীকে কেন্দ্র করে ২০ ইঞ্চির ২৩টি দেয়াল। দেয়ালগুলো উদিয়মান সূর্যের প্রতীক। ৩০ লাখ শহীদকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য স্মৃতিসৌধের মেঝেতে ৩০ লাখ পাথর বসানো হয়েছে। সৌধের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে লাল মঞ্চ, ২৩টি স্তম্ভ, ১ লাখ বুদ্ধিজীবীর খুলি, ৩০ লাখ শহীদ, ১১টি সিঁড়ি, বঙ্গোপসাগর, ২১ ফেব্রুয়ারি, রক্তের সাগর এবং ঐক্যবদ্ধ সাড়ে সাত কোটি জনতা। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ফিরে এলাম আমঝুপিতে। দেখলাম আমঝুপি নীলকুঠি। কুঠিতে রয়েছে একটি মনোমুগ্ধকর গেট, গেট পেরিয়েই আম্রকানন (আমবাগান এবং প্রাচীন ভবন যা আগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং স্কুল ছিল)। হাতের বাম পাশে ডিসি ইকো পার্ক এবং বিশাল মাঠ তার পাশে বয়ে চলেছে কাজলা নদী। মোঘল সেনাপতি মানসিংহের বিজয় রথ ছুটেছে, এই পথে ভাস্কর প-িত বর্গীদল ধূলি উড়িয়ে গেছে লুণ্ঠনের কালো হাত বাড়িয়ে, বাংলা-বিহার, উড়িষ্যার অধিপতি নবাব আলীবর্দ্দী খাঁর মৃগয়ার স্মৃতিও রয়েছে এইখানে। পলাশীর পরাজয়ের নীল-নকশাও রচিত হয়েছিল এই আমঝুপিতে। জনশ্রুতি আছে এখানেই রবার্ট ক্লাইভের সঙ্গে মীরজাফর ও ষড়যন্ত্রকারীদের শেষ বৈঠক হয়েছিল এবং ফলে শুধু নবাব সিরাজউদ্দোলারই ভাগ্য বিপর্যয় ঘটেনি। বাঙালী জাতি হারিয়েছিল তার স্বাধীনতা। রান্না শেষে চললো খাবার পর্ব। পরে বিভিন্ন খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলায় বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। এবার বিদায়ের পালা। বেশ আনন্দ উল্লাস করেই ফিরলাম ক্যাম্পাসে। তবে মনে গেঁথে গেল মুজিবনগর। চির অম্লান হয়ে থাকবে স্বাধীন বাংলাদেশের এই জন্মস্থান।
×