ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাক প্রতিবন্ধী মুন্নির রং তুলিতে বঙ্গবন্ধু

প্রকাশিত: ০৮:১৭, ২১ মার্চ ২০২০

 বাক প্রতিবন্ধী মুন্নির রং তুলিতে বঙ্গবন্ধু

বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হয়েও জীবন যুদ্ধে থেমে থাকেনি তার সুপ্ত প্রতিভা। মুখে ভাষা নেই। জন্ম থেকেই বধির মুন্নি। মানুষের মুখে উচ্চারিত ‘শেখ মুজিব’ নামটি শোনার সৌভাগ্য তার হয়নি। মুখ ফুটে বলতে পারে না, হে জাতির পিতা তোমায় ভালবাসি! তাই তো রং তুলির আঁচড়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে অঙ্কন করে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ছবি। হৃদয়ে তার বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। অপলক তাকিয়ে থাকে আঁকা ছবির দিকে। তার চাহনিতে ফুটে ওঠে মহান নেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালবাসার ভাব। জানলাম ঘাটাইল উপজেলার বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী সুইটি আক্তার মুন্নীর মনের কথা। সৃষ্টিকর্তা তাকে কথা বলার ক্ষমতা দেননি। কিন্তু দিয়েছেন সৃষ্টিশীল দুটি হাত। কথা বলতে না পারলেও, তার আঁকা ছবি ঠিকই কথা বলে। চোখের দেখা যে কোন দৃশ্য বা মানুষের ছবি অবলীলায় আঁকতে পারে সব ধরনের ছবি। এমনি এক প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী শ্রবণ প্রতিবন্ধী সুইটি আক্তার মুন্নি (১৯)। জন্ম শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার কাহনীয়া গ্রামে। বাবা পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল মালেক ও গৃহিণী মা সুফিয়া বেগমের তিন মেয়ের মধ্যে বড় মুন্নি। বাবার চাকরি সুবাদে পুরো পরিবারের স্থায়ী বসবাস এখন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পৌর এলাকার সবুজবাগে। তার বাবার নাম আব্দুল মালেক। বাক ফোঁটার আগেই মাত্র ছয় মাস বয়সে মুন্নি আক্রান্ত হন নিউমোনিয়ায়। পরিবারের ধারণা হয়তোবা এ রোগই চিরতরে কেড়ে নিয়েছে তার মুখের ভাষা। অন্য সাধারণ শিশুর মতোই পরিবারে সে বেড়ে ওঠে। সুস্থ স্বাভাবিক ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ২০১৭ সালে সে এসএসসি এবং ২০১৯ সালে এইচএসসি পাস করে। এখন সে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর সরকারী ইব্রাহিম খাঁ কলেজের ম্যানেজমেন্টের অনার্স প্রথমবর্ষের ছাত্রী। তার স্বপ্ন ছিল চারুকলায় পড়া। কিন্তু বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যায়। মুন্নির মা সুফিয়া বেগম জানান, গত বছর কবি নজরুল বিশ^বিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল, কিন্তু চান্স হয়নি। প্রথমে চান্দশী প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার হাতে খড়ি। সেখানে সে ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে। পরে উইজডম ভ্যালি থেকে পিএসসি পাস করে ঘাটাইল গণপাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে। মা আরও জানান, তৃতীয় শ্রেণী থেকে তার ছবি আঁকা শুরু। ছবি আঁকতে কোন প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা তার নেই। তবুও চোখের দেখায় নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তুলতে পারে মানুষ, প্রকৃতিসহ নানা ধরনের ছবি। যে কোন ছবি দেখে হুবুহু ওই ছবিটিই আঁকতে পারে সে। সে বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকতে বেশি পছন্দ করে। হৃদয়ে তার মহান নেতা ছবি রং তুলির প্রতিটি আঁচড়ে যেন তাই প্রকাশ পায়। তার আঁকা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার ও অনেক প্রাকৃতিক দৃশ্য শোভা পাচ্ছে তার ড্রয়িং রুমে। তার মা জানায়, মুন্নির অনেক ইচ্ছা। একদিন ঢাকায় গিয়ে আর্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নিবে। সে বিজয়ী হবে। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে নিবে পুরস্কার। কিন্তু কর্মব্যস্ত বাবা তাকে ঢাকায় নিয়ে যায় না, তাই ইশারায় বুঝায় বাবার প্রতি তার অনেক অভিমান। ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজের ছাত্রী ছিল সে। সেখানে প্রতিবারই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার যেন ওর জন্যই বরাদ্দ থাকত। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মেয়ের ছবি আঁকা দেখে এলাকার সবাই অভিভূত। বাবা-মা, এলাকার মানুষ থেকে শুরু করে তার শিক্ষক, ফুটফুটে এই মেয়েটিকে সবাই ভালবাসে। ভালবাসে তার সৃষ্টিশীল কাজকে। এ ব্যাপারে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, প্রতিবন্ধীদের সার্বিক সুযোগ সুবিধা দেয়ার ব্যাপারে সরকার আন্তরিক। মুন্নির জীবন বিকশিত করার জন্য আমরা তাকে প্রতিবন্ধী হিসেবে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রধান করব। -ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল থেকে
×