ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কতোক্ষণ বেঁচে থাকে করোনাভাইরাসের জীবাণু

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২০ মার্চ ২০২০

কতোক্ষণ বেঁচে থাকে করোনাভাইরাসের জীবাণু

অনলাইন ডেস্ক ॥ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে লোকজনের মধ্যে বিভিন্ন বস্তু ধরার বিষয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতির সঞ্চার হচ্ছে। সারা বিশ্বেই এখন দেখা যাচ্ছে যে লোকজন তাদের কনুই দিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করছেন, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা বা নামার সময় রেলিং ধরছেন না এবং বাসে ট্রেনে চলার সময় হ্যান্ডল না ধরেই তারা দাঁড়িয়ে আছেন, অফিসে পৌঁছেই লোকজন জীবাণুনাশক দিয়ে তাদের ডেস্ক ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করছেন। যেসব এলাকায় এই ভাইরাসের মারাত্মক সংক্রমণ ঘটেছে সেখানে পরিবহন, রাস্তা ঘাট ও পার্কে স্প্রে করে সেগুলো জীবাণুমুক্ত করার চেষ্টা চলছে। একই উপায়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে অফিস আদালত, হাসপাতাল, দোকানপাট, রেস্তোরাঁও। ড্রপলেটে কী থাকে : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সময় তার নাক ও মুখ দিয়ে যে জলীয় কণা বা ড্রপলেট বাতাসে বের হয়ে আসে তার মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাত্র এক বারের কাশি থেকেই বের হতে পারে এরকম ৩,০০০ ড্রপলেট। ড্রপলেটের এই কণা গিয়ে পড়তে পারে আরেকজনের গায়ে, কাপড়ে এবং আশেপাশের জিনিসের উপর। তবে কিছু ক্ষুদ্র কণা থেকে যেতে পারে বাতাসেও। দেখা গেছে এই ভাইরাস মল-মূত্রের মধ্যে আরো বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে। টয়লেট থেকে ফিরে ভাল করে হাত না ধুলে তার হাতের স্পর্শের সাহায্যে আরো অনেক কিছুতেই এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন বলছে, ভাইরাসটি লেগে আছে এরকম কোন বস্তু স্পর্শ করার পর হাত দিয়ে যদি মুখ স্পর্শ করা হয় তাহলে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। তবে এটিই এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার প্রধান উপায় নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অন্যান্য কর্তৃপক্ষও বলছে যে, বার বার হাত ধুয়ে এবং একই সাথে যেসব জিনিস ধরা হচ্ছে সেগুলো বার বার জীবাণুমুক্ত করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। করোনাভাইরাসের আয়ু : এটা এখনও পরিষ্কার নয় যে কোভিড-১৯ এর জীবাণু মানবদেহের বাইরে কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে আরো যেসব করোনাভাইরাস আছে, যেমন সার্স ও মার্স, সেগুলো লোহা, কাঁচ এবং প্লাস্টিকের গায়ে ৯ (নয়) দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। আবার কোনো কোনো ভাইরাস ঠাণ্ডা জায়গায় ২৮ দিনও বেঁচে থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথের একজন ভাইরোলজিস্ট নিলৎজে ফান ডোরমালেন তার সহকর্মীদের নিয়ে গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন কোভ-২ বা সার্স ভাইরাস কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে। তাতে দেখা গেছে, কাশি দেওয়ার পর থেকে ড্রপলেটের মধ্যে এই ভাইরাসটি তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। ক্ষুদ্র ড্রপলেটে, যার আকার ১ থেকে ৫ মাইক্রোমিটার (মানুষের চুলের ৩০ গুন চিকন) সার্স ভাইরাস কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে কোভ-২ ভাইরাস কার্ডবোর্ডের মতো শক্ত জিনিসের ওপর ২৪ ঘণ্টা আর প্লাস্টিকের জিনিসের গায়ে দুই থেকে তিন দিনও বেঁচে থাকতে পারে। গবেষণা বলছে, ভাইরাসটি দরজার হাতল, প্লাস্টিক ও লেমিনেটেড ওয়ার্কটপ ও কঠিন বস্তুর ওপর দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে। আর কপারের কোন জিনিসে পড়লে এর মৃত্যু হতে চার ঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে। নির্মূলের উপায় : গবেষণায় দেখা গেছে করোনাভাইরাসকে এক মিনিটেই নিষ্ক্রিয় করে ফেলা যেতে পারে। ৬২-৭১% এলকোহল মিশ্রিত তরল পদার্থ দিয়ে কোনো জিনিসকে করোনামুক্ত করা যায়। ০.৫ শতাংশ হাইড্রোজেন প্রিঅক্সাইড এবং ০.১% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট মেশানো ব্লিচ দিয়েও করোনাভাইরাস নির্মূল করা সম্ভব। উচ্চ তাপমাত্রা ও আদ্রতার কারণেও অন্যান্য করোনাভাইরাসের দ্রুত মৃত্যু হতে পারে। দেখা গেছে সার্সের জন্যে দায়ী করোনাভাইরাস ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে না। কতোক্ষণ বেঁচে থাকে কোভিড-১৯ এর জীবাণু : বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোভিড-১৯ এর জন্যে দায়ী ভাইরাসটি কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে তা নির্ভর করে এটি কোন ধরনের বস্তুর গায়ে পড়েছে তার ওপর। দরজার শক্ত হাতল, লিফটের বাটন এবং কিচেন ওয়ার্কটপের মতো ।শক্ত জিনিসের গায়ে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা টিকে থাকতে পারে। তবে এর আগের গবেষণায় দেখা গেছে সহায়ক পরিবেশে সব ধরনের করোনাভাইরাস এক সপ্তাহও বেঁচে থাকতে পারে। তবে কাপড়ের মতো নরম জিনিসের গায়ে এটি এতো লম্বা সময় বেঁচে থাকতে পারে না। ফলে আপনি যে কাপড়টি পরেছেন এবং তাতে যদি ওই ভাইরাসটি থাকে, জামাটি একদিন কিম্বা দুদিন না পরলে সেখানে ভাইরাসটি জীবিত থাকার আর সম্ভাবনা নেই।মনে রাখতে হবে, কোভিড-১৯ এর ভাইরাসটি লেগে আছে এরকম জিনিসে শুধু স্পর্শ করলেই আপনি আক্রান্ত হবেন না। শুধু স্পর্শ করার পর আপনি যদি হাত দিয়ে মুখ, নাক অথবা চোখ স্পর্শ করেন তাহলেই এই ভাইরাসটি আপনার শরীরে ঢুকে পড়বে। তাই এই ভাইরাসটি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ একটি করণীয় হচ্ছে হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ না করা। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×