ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অসহায় গৃহবধূ রেহেনা পাখি চাষে এখন একজন সফল উদ্যোগক্তা

প্রকাশিত: ০২:২৩, ২০ মার্চ ২০২০

অসহায় গৃহবধূ রেহেনা পাখি চাষে এখন একজন সফল উদ্যোগক্তা

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ মোছাঃ রেহেনা বেগম(৪৫)। একজন সফল উদ্যোগতা। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক তাকে ঘুরে দাঁড়াতে পাশে ছিল। পরিশ্রমিক এই নারী নিজ বাড়ির উঠানে মুরগির খামার, কোয়েল পাখির খামার, চীনামুরগি (তিথি), টার্কি ও গাভী প্রতিপালনে করে খামার গড়ে তুলেছে। সেই সাথে নিজের বাড়িতে স্থাপিত ইনকিউবেটর মেশিনে প্রতিমাসে ডিম থেকে গড়ে প্রায় ৪ হাজার বাচ্চা ফুটাচ্ছে। এসব খামার ও ডিম ফুঁটিয়ে বাচ্চা বিক্রি করে প্রতিমাসে সব খরচ শেষে নীট আয় করছে ৩৫ হাজার হতে ৪০ হাজার টাকা। খামারের দেখা শুনা করছে মা পাশাপাশি বড় ছেলে। প্রতিদিন ২/৩ জন মহিলা খামারে স্থায়ী কর্মসংস্থান হয়েছে। ২৫ বছর আগে রেহেনা বেগমের বিয়ে হয় রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার বাঘমারা গ্রামে। গ্রামটি তিস্তা নদীর পাড়ে অবস্থিত ছিল। স্বামী মোঃ মকবুল হোসেনের সাথে প্রায় ১০ বছর সংসার ভালোভাবেই স্বচ্ছলাতার সাথে চলে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ ১৫ বছর আগে তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে সেই সংসারে ছন্দপতন ঘটে। বাড়িঘর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীণ হয়ে যায়। মূহুর্তে রেহেনা ও তার স্বামী পথের ফকির হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে প্রায় ১৫ বছর আগে লালমনিরহাট জেলা সদরের রাজপুর ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামে তার বাবার বাড়িতে আশ্রিতা হিসেবে ঠাঁই পায়। স্বামী দিনমজুরী করে অতিকষ্টে সংসার চালায়। সংসারে সব সময় অভাব অনটন লেগেই থাকতো। ২৫ বছরের এই সংসার জীবনে কোলজুড়ে আসে তিনটি পুত্র সন্তান। তাদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে। এই চিন্তায় কুড়েকুড়ে খাচ্ছিল। স্বামী মকবুল রাজপুর ইউনিয়নে গ্রাম পুলিশের চাকুরি পায়। এই সুবাদে স্বামীর কাছে রেহেনা বেগম শুনতে পায়। প্রশিক্ষণ নিয়ে গবাদী পশু ও মুরগির খামার করা যায়। এই খামার করতে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ঋণ দেয়। এভাবেই আস্তে আস্তে রেহেনা ঘুরে দাঁড়ায়। সদর উপজেলা সমন্ময়কারী ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক লিটন কুমার রায় জানান, সদর উপজেলায় আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সমিতি রয়েছ ১৬৭টি। যার সদস্য সংখ্যা ৯হাজার ৫শত ৮জন। মূলধন প্রায় ১০ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সমিতি রয়েছে ১১৩টি। সদস্য সংখ্যা ৫ হাজার ৯শত জন। মূলধন দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি টাকায়। এই প্রকল্প ও সঞ্চয় ব্যাংক হতে এই উপজেলায় এসএমই ঋণ ১১০ জনের মাঝে ৫৬ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। তবে কিছু সমস্যা রয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালের দিকে এই প্রকল্প গুলোতে জনবলের অভাব ছিল। তখর্ ঋণ বিতরণে সদস্য বাচাই সঠিক ভাবে হয়নি। ফলে সেই সময়ের দায় নিয়ে চলতে হচ্ছে। তাই আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পে শতকরা ৫ভাগ ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে ঋণ আদায়ের হার খেলাপির হার শতকরা ৫২ ভাগ। লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সুবিধাভূগি বাচাই কমিটির সভাপতি উত্তম কুমার রায় জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উদ্যোগ গুলো সুন্দর। এতে এনজিও গুলোর ঋণের দৌড়াত্ব কমেছে। গ্রামীণ নারীদের বিশাল ক্ষমতায় ঘটেছে।
×