ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিনেমায় ভয়ঙ্কর মোসাদ

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ১৯ মার্চ ২০২০

সিনেমায় ভয়ঙ্কর মোসাদ

ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের গোপনীয়তা, দুর্ধর্ষতা এবং ক্ষিপ্রতা শত্রু-মিত্র উভয়ের কাছে যেন রূপকথার মতো। প্রতিপক্ষকে অপহরণ গুম এবং হত্যা বা প্রতিপক্ষের ডেরায় অভিযান পরিচালানা করার মতো কাজে মোসাদকে সব থেকে দক্ষ মানা হয়। মোসাদের দুর্ধর্ষ অভিযান নিয়ে কিছু সিনেমা দেখে নেয়া যাক- মিউনিখ ঘটনা ১৯৭২ সালের। পশ্চিমা আশীর্বাদ পেয়ে ইসরাইল তখন ফিলিস্তিনসহ বাকি আরব দেশগুলোকে নাজেহাল করছে। ’৭২-এর মিউনিখ অলিম্পিকে অংশ নিতে ইসরাইল টিম তখন জার্মানিতে। সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ অলিম্পিক ভিলেজে হামলা করে ফিলিস্তিনি গ্রুপ ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর। জিম্মি হয় ১১ জন ইসরাইলি এ্যাথলেট। তাদের বিনিময়ে ইসরাইলে বন্দী ২০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির মুক্তি চায় ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর। কমান্ডো ধাঁচে অভিযান চালিয়ে জিম্মিদের মুক্ত করার চেষ্টা করে বার্লিন পুলিশ। অপারেশন বিফলে যায় এবং জিম্মিসহ সবাই মারা যায়। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ার ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের নেতৃত্বকে হত্যার পরিকল্পনা করে। কিন্তু তারা সবাই তখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। ‘অপারেশন রথ অফ গড’ সূচনা করে ইসরাইল। ৫ জন বেনামি এজেন্টকে ইউরোপে পাঠায় মোসাদ। মোসাদ গুপ্তহত্যাকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে প্রতিপক্ষ মৃতদেহ বাদে আর কোন প্রমাণই পায় না। মোসাদকে কেন ডঙজখউঝ গঙঝঞ ঊঋঋওঈওঊঘঞ কওখখওঘএ গঅঈঐওঘঊ বলা হয় সেটার ধারণা দেবে এই সিনেমাটি। প্রতিটি গুপ্তহত্যার ধরন এতটাই দুর্ধর্ষ এবং অদ্বিতীয় যে কেউই মনে হয় মোসাদের আগে এভাবে ভাবতে পারত না। আর গুপ্তহত্যাগুলোই ফুটিয়ে তুলেছে সিনেমাটি। স্টিভেন স্পিলবার্গের এই সিনেমার শেষ দিকে বাংলাদেশকে নিয়ে একটি ব্যঙ্গাত্মক ডায়ালগ আছে। উল্লেখ্য, সিনেমাটি ১৯৭২ সালের প্রেক্ষাপটে বানানো এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে তখন খাদ্যের সঙ্কট ছিল। গল্প অনেকের জানা থাকলেও সিনেমাটি দেখতে বিরক্তি আসবে না। সেভেন ডেস এ্যট এ্যনটেবি ঘটনার সূত্রপাত বিমান ছিনতাই থেকে। তেল আবিব থেকে এয়ার ফ্রান্সের ফ্লাইট-১৩৯ প্যারিস যাচ্ছিল। মাঝপথে গ্রিস থেকে ৫৮ জন যাত্রী তুলে বিমানটি, যার মধ্যে ৪ জন হাইজ্যাকার ছিল। কিছুক্ষণ পরেই বিমানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তারা। বিমানটিকে নিয়ে যায় লিবিয়ার বেনগাজিতে। রিফুয়েল করার করার পরিকল্পনামাফিক চলে আসে উগান্ডার এন্টাবে বিমানবন্দরে। সে সময় উগান্ডা শাসন করতেন এ্যাডমিরাল আলাদিন গোছের ক্ষ্যাপতে স্বৈরশাসক ইদি আমিন। ইদি আমিন হাইজ্যাকদের সমস্ত সাপোর্ট দিতে থাকেন। হাইজ্যাকরা এবার একটা দেশের কূটনীতি থেকে শুরু করে সামরিক সব সুবিধাই পাচ্ছিল। হাইজ্যাকরা ৫৩ জন স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনির মুক্তি এবং ৫ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে। শুরু হয় দরকষাকষি। এরই মধ্যে নন-ইহুদী ৪৮ জনকে মুক্তি দেয়া হয়। ইসরাইলের পলিসি হল ফিলিস্তিনিরা সন্ত্রাসী এবং তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা করা যাবে না। কিন্তু খবর বের হয় হাইজ্যাকদের দাবি মেনে নিতে যাচ্ছে ইসরাইল। এরই মধ্যে গোপনে এক পরিকল্পনা করছিল মোসাদ। ৪০০০ কিলোমিটার দূরে উগান্ডায় বিমানে করা কমান্ডো পাঠাতে হবে তাও আবার মিসর, সৌদি, সুদানিজ রাডারে ধরা না পড়ে। তারপর আবার ল্যান্ড করে মূল অপারেশন শুরু“করা!! প্রতিপক্ষ কিন্তু ৪ জন হাইজ্যাকার নয়, একটা দেশের গোটা সামরিক বাহিনী। অপারেশন এন্টাবেতে যে কয়েকজন হাইজ্যাকারকেই হত্যা করা হয়েছিল তা নয় কিন্তু, উগান্ডার সেবনাবাহিনীর ৪৫ জন নিহত হয় এবং ধ্বংস হয় ৩০টি মিগ বিমান। অপারেশন এন্টাবের দুর্ধর্ষতাকে ঠিকমতো তুলে ধরে পারেনি সিনেমাটি। বেশকিছু জায়গায় ফাঁকফোকর রয়ে গেছে যার ফলে রেটিংও বাজে। এন্টাবের ইতিহাস অনুযায়ী আশা করলে হতাশ হতে হবে। দ্য রেড সি ড্রাইভিং রির্সোট শরণার্থী সমস্যা যে কোন দেশের জন্য গলার কাঁটার মতো। জনবান্ধব সরকার দেশের ঝামেলা মিটিয়ে নিজ দেশের শরণার্থীদের যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফেরাতে চায়। আবার অনেক দেশের তাদের নাগরিকদের নাগরিক বলেই স্বীকার করে নিতে চায় না। রাজনীতি আর যুদ্ধের ফলে নানা সময়ে প্রচুর ইহুদী ইউরোপ থেকে পালিয়ে আফ্রিকা অঞ্চলে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। এদের মধ্যে একটা বড় অংশ ছিল ইথিওপিয়া এবং এর আশপাশের দেশগুলোতে। ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এদের দেশে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে। ঘটনার সময়ে ইসরাইল তার প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর উপর বর্রতা চালাচ্ছিল বলে আফ্রিকার কিছু দেশও তাদের উপর ক্ষেপে ছিল। তাই আফ্রিকা থেকে সুদান, মিসরের নাকের ওপর দিয়ে ইহুদীদের ইসরাইলে নিয়ে যাওয়া খুব কঠিন কাজ ছিল। প্রতিপক্ষের ডেরায় হানা দেয়া বা খুন করা বাদেও যে অন্য কিছুও গোয়েন্দাদের বিশেষ অভিযান হতে পারে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করা অনেক সময় খুন করার চেয়েও কঠিন হয়ে দাঁড়ায় সেটা এই সিনেমা দেখলে বোঝা যাবে। সিনেমাতে একজন মোসাদ এজেন্টের চরম ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার শরণার্থীর জীবন বাঁচানোর গল্প ফুটে উঠেছে।
×