ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে ট্রাফিক পুলিশকে চড় দেয়ায় নারী কাউন্সিলর যুবলীগ নেত্রী কারাগারে

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ১৫ মার্চ ২০২০

গাজীপুরে ট্রাফিক পুলিশকে চড় দেয়ায়  নারী কাউন্সিলর যুবলীগ নেত্রী কারাগারে

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে ট্রাফিক পুলিশের দু’কনস্টেবলকে চড় দেওয়ার অপরাধে গ্রেফতারকৃত সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর (সংরক্ষিত) যুব মহিলা লীগের নেত্রীকে রবিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জিএমপি’র বাসন থানা থেকে আদালতে পাঠানো হলে দুপুরে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হামিদুল হক তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। গ্রেফতারকৃতের নাম রুহুন নেছা রুনা। তিনি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত নারী আসনের ৩১, ৩২ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং গাজীপুর মহানগর যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সহকারি কমিশনার (প্রসিকিউশন) একেএম আহসান হাবীব জানান, শনিবার দুপুরে মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা মোড় এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের দু’কনস্টেবলের গালে চড় দেয়াসহ সরকারি কাজে বাধা অভিযোগে আটক হন কাউন্সিলর রুহুন নেছা রুনা। রাতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল আশিকুর রহমান বাদী হয়ে জিএমপি’র বাসন থানায় মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতারকৃত রুনাকে রবিবার সকালে থানা থেকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। তাকে দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে নারী কাউন্সিলের পক্ষে জামিনের জন্য কোন আবেদন না পাওয়ায় দুপুরে আদালতের বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হামিদুল হক গ্রেফতারকৃত রুনাকে হাজতী পরোয়ানা মূলে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই মামলার পরবর্তী ধার্য্য তারিখ হলো ১৫এপ্রিল। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের সহকারি পুলিশ কমিশনার মাজহারুল ইসলাম জানান, শনিবার দুপুরে কাউন্সিলর রুহুন নেছা রুনা নিজেই প্রাইভেট কার ড্রাইভিং করে চান্দনা চৌরাস্তা মোড় এলাকায় জাগ্রত-চৌরঙ্গীর ভাষ্কর্যের উত্তর পাশ দিয়ে ডানে ইউটার্ন করতে যান। কিন্তু এসময় ওই এলাকায় মহাসড়কে বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলার কারণে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা রশি বেঁধে রেশনিং পদ্ধতিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের গাড়ি চলতে দিচ্ছিল। ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যাল অমান্য করে কাউন্সিলর রুহুন নেছা রুনা ওই রশি ঠেলে দিয়ে তার কার ডানে ইউটার্ণ নেওয়ার চেষ্টা করেন। এসময়ে সেখানে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল আশিকুর তাকে বাঁধা দিয়ে পরে যেতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে ওই নারী নিজেকে কাউন্সিলর পরিচয় দিয়ে পুলিশ কনস্টেবল আশিকুরের গালে চড় মারেন এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন । ঘটনটি দেখে অপর কনস্টেবল মো. হাসানুর সেখানে এগিয়ে গেলে তাকেও চড় মারেন তিনি। এসময় ট্রাফিক পুলিশের আরো সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কাউন্সিলর রুনাকে আটক করে সেখানে থাকা ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বসিয়ে রেখে বাসন থানা পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে বাসন থানা পুলিশ দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। কাউন্সিলর রুহুন নেছা এব্যাপারে বলেন, তিনি প্রাইভেট কারযোগে একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা মোড় এলাকায় ডান দিকে ইউটার্ন করার সময় ট্রাফিক পুলিশ বাঁধা দেয়। এসময় তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে অনুরোধ জানালেও পুলিশ তাকে ওই পথে যেতে দেয়নি। পরে ঘুরে গিয়ে ওই পথের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি ওই স্থানে এলোমেলোভাবে অন্যান্য গাড়ি চলাচল করতে দেখতে পান। এ দৃশ্য দেখে কাউন্সিলর রুনা চৌরাস্তা মোড় এলাকায় (তাকে বাধা দেয়ার স্থানে) অন্য গাড়ি যেতে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে পুলিশ তার সঙ্গে দূর্ব্যবহার শুরু করেন। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্য তার বুকের কাছে গিয়ে অশালীন আচরণ করে। তখন তিনি নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে ওই পুলিশ কনস্টেবলকে চড় মারেন। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশের আরো সদস্য জড়ো হয়ে তাকে সেখান থেকে আটক করে বাসন থানায় নিয়ে যায়। জিএমপি’র বাসন থানার ওসি একেএম কাউসার চৌধুরী রুনার সঙ্গে পুলিশের অশালীন আচরণের কথা অস্বীকার করে বলেন, কাউন্সিলর রুনা নিজেই কর্তব্যরত পুলিশের গায়ে চড় মেরেছেন। পুলিশ কাউন্সিলর রুনাকে গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে সরকারী কাজে বাঁধা ও সরকারী কর্মচারীকে মারধর করার অপরাধে মামলা দায়ের করেছেন ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল আশিকুর রহমান।
×