ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে পুলিশ সদস্যের গলাকাটা লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন

প্রকাশিত: ০৮:২৩, ১৩ মার্চ ২০২০

গাজীপুরে পুলিশ সদস্যের গলাকাটা লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে কর্মরত হলেও খুন হওয়ার ৮দিন পর বেওয়ারিশ লাশের পরিচয় মিলেছে। ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক এলাকায় মহাসড়কের পাশ থেকে গলা কাটা ও রশি পেঁচানো উদ্ধারকৃত লাশটি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এক সদস্যের। বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের তিনদিন পর বৃহষ্পতিবার রাতে নিহতের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। নিহতের নাম শরীফ আহাম্মেদ (৩৩)। তিনি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগে কর্মরত (কন্সটেবল নম্বর ৬২৩) ছিলেন। নিহত শরীফ ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার ঝিলকি এলাকার আলাউদ্দিন ফকিরের ছেলে। জিএমপি’র সদর থানার ওসি মুহাম্মদ আলমগীর ভূঞা জানান, আদালতের অনুমতির প্রেক্ষিতে বৃহষ্পতিবার রাতে নিহতের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। পরে শনাক্তের পর নিহতের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরআগে দুপুরে গাজীপুরের মূখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে কবর থেকে লাশটি তোলার জন্য আবেদন করেন সদর থানার এসআই লুৎফর রহমান। লাশটি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের কন্সটেবল শরীফ আহাম্মেদের। তিনি প্রায় ৬মাস আগে সেখানে যোগদান করেন। নিহত শরীফের বাবাও পুলিশ সদস্য। তিনি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা শহর পুলিশ ফাঁড়িতে কন্সটেবল পদে কর্মরত রয়েছেন। তিনি জানান, গত ৪মার্চ গাজীপুরের ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্কের ৪নং ও ৫নং গেইটের মাঝামাঝি গিভেন্সী কারখানা এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশ (পূর্ব) থেকে গলা কাটা ও গলায় নাইলনের রশি পেঁচানো অবস্থায় অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের কপাল, বাম হাত, বাম পা ও বাম কানসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত করে ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়েও পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। নিহতের পরিচয় পাওয়া না যাওয়ায় গত ৮ মার্চ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পূর্ব চান্দনা কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে তার লাশ দাফন করা হয়। গাজীপুর সদর থানার এসআই লুৎফর রহমান বলেন, গলাকাটা লাশ উদ্ধারের পর তার পরিচয় জানার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। লাশের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করা হলেও তখন নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে (জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারে) ত্রুটি থাকায় লাশের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। এরপর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) চেষ্টা করে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করেছে। গত ৩ মার্চ শরীফ নিখোঁজের পর তার পুলিশ কন্সটেবল বাবা টঙ্গী পূর্ব থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। শরীফ ২১ দিন ছুটি কাটিয়ে ২ মার্চ কর্মস্থলে যোগ দেন। ৩ মার্চ রাত ১১টা ১০ মিনিটে স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে ফোনে শেষবারের মত কথা বলেছেন শরীফ। এরপর থেকে তার কোনও খোঁজ নাই বলে ওই সাধারণ ডায়েরীতে উল্লেখ করা হয়েছে। নিহতের মামা আব্দুস সালামসহ স্বজনরা দূঃখ প্রকাশ করে বলেন, শরীফ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন সদস্য ছিলেন। একই মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে ৩মার্চ নিখোঁজ হওয়ার পর থানায় জিডি করা হয়। আর ৪মার্চ একই মেট্রোপলিটন এলাকা থেকেই তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। কিন্তু পরিচয় শনাক্ত করতে না পেরে লাশ উদ্ধারের চারদিন পর ৮মার্চ বেওয়ারিশ হিসেবে একই জেলায় তাকে দাফন করা হয়। তখনও তার মুখমন্ডল বিকৃত হয়নি। দেখেই স্পষ্ট বোঝা যায় এটিই শরীফ। অথচ আধুনিক যুগে আধুনিক প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও তার সহকর্মীরা শরীফের পরিচয় শনাক্ত করতে পারে নি। অবশেষে বেওয়ারিশ হিসেবে নিজ কর্মস্থল এলাকায় দাফন তাকে করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
×