ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আত্রাইয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুকুরের মাছ জব্দ

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ১৩ মার্চ ২০২০

আত্রাইয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুকুরের মাছ জব্দ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ নওগাঁর আত্রাইয়ে ইউএনওর বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একটি ব্যক্তিগত ভাবে চাষকৃত পুকুর থেকে প্রায় আড়াই লাখ টাকা মুল্যের মাছ জোরপূবর্ক কেড়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে মাছ আহরনের সঙ্গে জড়িত জেলে ও ম্যানেজারসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে এসে ৬ জনকে ভ্রাম্যমান আদালতে ১৫ দিনের করে জেল ও বাকী ৬ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এনিয়ে এলাকায় বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে। তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে গোটা উপজেরা জুড়ে। ঘটনাটি ঘটেছে, আত্রাই উপজেলার বিশা ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশা মৌজায় ৮ একর ৫৯ শতক আয়তন বিশিষ্ট একটি অতি প্রাচীন জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন প্রয়াত ডাঃ রেবতী কান্ত স্যান্যালের অংশ ৪ একর ৮৩ শতক, তার ভাতিজা বীরেন্দ্র কান্ত স্যান্যাল, প্রনব কান্ত স্যান্যাল ও দেবকান্ত স্যান্যালদের ১ একর ৮৮ শতক এবং অন্য শরীকদের ১ একর ৮৮ শতক মালিকানা শর্তে অবস্থিত। পরবর্তীতে ডাঃ রেবতীকান্ত স্যান্যাল ও তার স্ত্রী মৃত্যু বরন করলে এবং তাদের কোন সন্তান না থাকায় সেই সম্পত্তির মালিকানাও চলে আসে ভাতিজা বীরেন্দ্রনাথ গংদের ওপর। এলাকার মোঃ তোফাজ্জল হোসেন তোফা নামে এক ব্যক্তি বীরেন্দ্রনাথ স্যান্যাল, প্রনব কান্ত স্যান্যাল ও দেবকান্ত স্যান্যালের ১ একর ৮৮ শতক জমির মধ্যে সাড়ে ৬২ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। ক্রয় ব্যতিত ওই খতিয়ানের বাকী সব সম্পত্তি পাওয়ার অব এটর্নি ও লীজ গ্রহন করে ৮ একর ৫৯ শতক জমিতে অদ্যাবধি মাছ চাষ করে আসছিলেন তোফা। সেই মালিাকানা সূত্রে তোফাজ্জল হোসেন ওই জলাশয়ে মাছ চাষ করে আসছেন। কিন্তু হঠাৎ করে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওই জলাশয়ের ওপর কত্র্ৃত্ব ফলানো চেষ্টা চালাতে শুরু করেন। প্রেক্ষিতে বীরেন্দ্রনাথ স্যান্যাল এবং তোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এই মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের একটি নিদের্শে উক্ত নির্বাহী অফিসারকে কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে আদালত ওই সম্পত্তি তোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে স্থিতাবস্থা জারী করেন। এই স্থিতাবস্থার ফলে তোফাজ্জল হোসেনের দখলভুক্ত থাকে এবং মাছ চাষ অব্যাহত থাকে। এরই এক পর্যায়ে গত ১১ মার্চ রাতে তোফাজ্জল হোসেন ওই জলাশয় থেকে মাছ আহরণ করেন। ১২ মার্চ সকালে সেসব মাছ বাজারে বিক্রি করার কথা। কিন্তু সকাল হতে না হতেই ভোরবেলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ছানাউল ইসলাম তাঁর লোকজন এবং পুলিশ নিয়ে গিয়ে সবগুলো মাছ জোরপূর্বক নিয়ে এসে বাজারে বিক্রি করেন এবং ওই প্রকল্পের ম্যানেজার এবং জেলেসহ মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে আটক ১২ জনের মধ্যে ৬ জনের বিরুদ্ধে সরকারী কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে ১৫ দিনের করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছেন। অন্যা ৬ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়। এদিকে তোফাজ্জল হোসেন জানান, প্রয়াত ডাঃ রেবতী কান্ত স্যান্যালের ৪ একর ৮৩ শতক অংশ চাচার অংশিদার হিসেবে বীরেন্দ্রনাথ স্যান্যাল গত ১৮-০৩-২০১৯ তারিখে আমার নামে পাওয়ার অব এ্যাটর্নী প্রদান করেছেন। ক্রয়, লীজ এবং পাওয়ার অব এ্যাটর্নী সূত্রে পুরো ৮ একর ৫৯ শতক এ জলাশয়ে আইনগত মালিক এখন তিনি। বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাকে নানাভাবে হুমকী প্রদান করছেন। এমন কি তাকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকী প্রদান করছেন। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ব্যপারে শুক্রবার বিকেলে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ছানাউল ইসলামের সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জনকন্ঠকে বলেন, ওই পুকুরটি সরকারের খাস জমি। ইতোপূর্বে তারা আদালতে মামলা করলে আদালত উভয় পক্ষের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন। তার পরেও তারা রাতের আঁধারে পুকুর থেকে মাছ মেরেছে। আমি মাছগুলো জব্দ করে নিলামে বিক্রি করেছি।
×