ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাভাইরাসের আতঙ্কের দিন শেষ ॥ ভাইরাস নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১১ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাসের আতঙ্কের দিন শেষ ॥ ভাইরাস নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব

অনলাইন ডেস্ক ॥ শনাক্ত করা গিয়েছে মেরে কেটে মাস তিনেক। এরই মধ্যে সেই আণুবীক্ষণিক ভিলেন ৩৮০ বার নিজের জিন বদলে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা জিন মিউটেশনই ভিলেন। যার জেরে নভেল করোনাভাইরাসের এই প্রকার কোভিড-১৯ বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে আমজনতার মধ্যে। মাঝেই মাঝেই শোনা যাচ্ছে এবারে এই ভাইরাসকে জব্দ করা যাবে ভ্যাকসিন দিয়ে। কিন্তু প্রতিষেধক কতটা কাজের কাজ করতে পারবে সেই নিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরাও ধন্ধে পড়েছেন। হিউম্যান প্যাথোজেনিক ভাইরাসের সংক্রমণজনিত অসুখের গবেষকের মতে, এত কম সময়ের মধ্যে ঘন ঘন জিন মিউটেশন করে নিজের চরিত্র বদলে ফেলছে এই ভাইরাস। তাই একে রুখতে সুনির্দিষ্ট কোনও ওষুধ ব্যবহার করা মুশকিল। প্রায় দু’দশক ধরে করোনা গোত্রেরই ভাইরাস নিয়ে চিকিৎসকরা চিন্তিত। চিনের উহান থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই কোভিড-১৯ ভাইরাসের ১৮ বছর আগে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা সার্সও ঘুম কেড়ে নিয়েছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের। এই রোগাক্রান্তদের মধ্যে মারা পড়তেন প্রায় ১০ শতাংশ। মার্স বা মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোমও ২০১২ সালে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। তখন দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি করে তার সাহায্যে রোগের বাড়বাড়ন্ত আটকে দেওয়া হয়। কোভিড-১৯ সেই গোত্রেরই জীবাণু। তবে আগের ভাইরাসদের থেকে এর কিছু চরিত্রগত তফাত আছে। তাই প্রতিষেধক নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চললেও কোনও কার্যকর ভ্যাকসিন বা ওষুধ বানানো মুশকিল হয়ে পড়ছে। গবেষকরা এখন হোস্ট ডিরেক্টেড থেরাপির কথা ভাবছেন। ব্যাপারটা হল, মানুষের জিনের যে প্রোটিনের উপর কোভিড-১৯ ভাইরাস বেড়ে ওঠে, তাকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া। তাঁদের ধারণা, তা হলেই হয়তো এই ভাইরাসের খেল খতম হবে। নভেল করোনাভাইরাসের চরিত্রগত বিশ্লেষণ করে ইতিমধ্যই গবেষকরা বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছেন। • কোভিড-১৯ ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমেই বাড়িয়ে চললে শিশুদের বিশেষ কোনও ক্ষতি করতে পারে না। এই ভাইরাসের কবলে পড়লেও শিশুরা ক্রমশ সুস্থ হয়ে ওঠে। শিশুদের তুলনামূলক ভাবে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখা হলে সংক্রমণের ঘটনাও কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। • মহিলারাও কোভিড-১৯ ভাইরাসের থাবা থেকে কিছুটা নিরাপদ। এর কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, মেয়েদের মধ্যে অটোইমিউন ডিজিজের (শ্বেতী, এসএলই, থাইরয়েড ইত্যাদি) প্রবণতা বেশি হওয়ায় কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাঁরা বেশির ভাগ সময়ই জিতে যান। শরীর কোনও না কোনও অ্যান্টিবডি তৈরি করে ফেলে। তাই আক্রান্ত মেয়েদের মৃত্যুহার অনেক কম। • ধূমপায়ী পুরুষদের মধ্যে এই অসুখের মারাত্মক প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে যে, ধূমপানের ফলে শ্বাসনালী ও ফুসফুসের লাইনিং কিছুটা কমজোরি থাকে। তাই কোভিড-১৯ ভাইরাস এদের শ্বাসনালী ও ফুসফুসকে আক্রমণ করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। • কোভিড-১৯ আক্রান্ত অশীতিপর বয়স্কদের মৃত্যুহার সব থেকে বেশি। কারণ এঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়। • কোভিড-১৯ ভাইরাসের বড়সড় সংক্রমণে শুধুই যে শ্বাসনালী ও ফুসফুস আক্রান্ত হয় তা নয়, ইন্টেস্টাইনের আবরণ একেবারে নষ্ট করে দেয়। শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ হু হু করে কমে যেতে শুরু করে। ক্রমশ মাল্টি অরগ্যান ফেলিওরের দিকে এগোয়। • কিছু কিছু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করা হলেও খুব যে কার্যকর তা এখনও বলা যাচ্ছে না। • অনেকেরই ধারণা, গরম পড়লে কোভিড-১৯ ভাইরাসের দাপট কমবে। কিন্তু এই ভাইরাসের জিন মিউটেশনের ধরন দেখে এখনই এ বিষয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। • কোভিড-১৯-এর হাত থেকে বাঁচতে ন্যুনতম ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে রগড়ে হাত ধুতেই হবে। হাত ধুলে এনভেলপ ফ্লু জাতীয় কোভিড-১৯ ভাইরাসকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব। জল না থাকলে ৬০–৭০ শতাংশ ইথাইল অ্যালকোহল-যুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে ভাল করে হাত পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে টাটকা শাকসব্জি ও ফল খেতে হবে। ধুমপান ও মদ্যপান ছাড়তে হবে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×