ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যে ঝরনায় আগুন ঝরে

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৬ মার্চ ২০২০

 যে ঝরনায় আগুন ঝরে

ইয়োসোমাইট ন্যাশনাল পার্ক। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের শ্বেতশুভ্র বরফে আবৃত এই পার্কটিতে সারা বছর পর্যটকদের আনাগোনা থাকলেও ফেব্রুয়ারির কয়েকদিন এটি ক্যালিফোর্নিয়ার পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। কারণ তখন প্রাকৃতিক এই পার্কের হর্সটেইল জলপ্রপাত দিয়ে যে পানি ঝরে তার রং হয় অবিকল আগুনের মতো। এ এক আশ্চর্য প্রকৃতির খেলা। এটি দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য ভ্রমণবিলাসী মানুষ এই পার্কে ভিড় জমান। পানির রং আগুনের মতো বিধায় কয়েক দিনের জন্য এই সময় জলপ্রপাতের নাম বদলে ‘ফায়ার ফল’ বা আগুনের ঝরনা বলা হয়। ফেব্রুয়ারি মাস শুরু হতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং নামী-দামী পত্রিকায় ফলাও করে প্রচারিত হচ্ছে প্রকৃতির এই বিস্ময়কর ঝরনার গুণকীর্তন। ইতোমধ্যে পার্কে আসতে শুরু করেছে প্রকৃতিপ্রেমী এবং আলোকচিত্রী। দিন যত গড়াবে তত ভিড় বাড়বে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় প্রতি বছর গড়ে চারশ লোক পার্ক এলাকায় অস্থায়ীভাবে বসবাস করে এই দৃশ্য স্বচক্ষে উপভোগ করার জন্য। তারা সবাই সাক্ষী হতে চান এই আশ্চর্য দৃশ্যের। কারণ ফেব্রুয়ারির শেষ দুই সপ্তাহে মাত্র সাত থেকে দশ দিন গোধূলি লগ্নে মাত্র দশ মিনিট এই দৃশ্য দেখা যায়। তবে এই দৃশ্য যে সময় মেনে সব সময় দেখা যাবে এমন ভাবার কারণ নেই। বেশ কিছু জিনিসের সমন্বয় ঘটলেই কেবল এই দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্কট গিডিম্যান এই পার্কে তেইশ বছর ধরে চাকরি করছেন। তিনি অসংখ্য ফায়ার ফলের সাক্ষী। তিনি বলেন, ফায়ার ফল হতে গেলে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদানের সমন্বয় ঘটতে হয়। প্রথমত ইয়োসমাইটিতে ঝরনা তৈরি হওয়ার মতো পর্যাপ্ত বরফ জমতে হবে। দ্বিতীয়ত সেই বরফ গলার মতো পর্যাপ্ত তাপমাত্রা বিরাজ করতে হবে। নতুবা বরফ গলবে না। তৃতীয় জিনিসটি হলো সূর্য। কারণ ফায়ার ফল হতে হলে মেঘমুক্ত আকাশে সূর্যের প্রখর রশ্মি থাকতে হবে। কারণ এই সূর্য রশ্মিই আগুনের ঝরনা তৈরির মূল উপাদান। অর্থাৎ বরফ, সূর্য এবং আকাশ- এই তিনটি যখন ফেব্রুয়ারির শেষ দুই সপ্তাহে প্রকৃতির নিয়ম মেনে ঠিকঠাক কাজ করে তখনই কেবল হর্সটেইল জলপ্রপাত দিয়ে আগুনের রঙের পানি বের হয়। পানির রং আগুনের মতো হলেও আসলে এটি এক ধরনের বিভ্রান্তি। গোধূলিলগ্নে সূর্যের আলো যখন জলপ্রপাতটির পানির ওপর প্রতিফলিত হয়, তখন পানির রং দেখায় লাল-কমলার মিশেলে আগুনবরণ। ঠিক তখনই জলপ্রপাতটি দেখলে মনে হয় পানি নয় আগুনের স্রোত ঝরে পড়ছে। তবে ঠিক কি কারণে বছরের এই সময় পানির রং এমন হয় সে বিষয়ে গবেষকরা এখনও সন্তোষজনক কিছু বলতে পারেননি। অদূর ভবিষ্যতে হয়ত জবাব মিলবে।
×