ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সবচেয়ে মেধাবী মানুষ

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৬ মার্চ ২০২০

সবচেয়ে মেধাবী মানুষ

বহু বছরের আই কিউ গবেষণা থেকে জানা যায়, বিশ্বে প্রায় অর্ধেক লোকের আই কিউ ৯০ থেকে ১১০-এর মধ্যে এবং এ হিসাবকেই স্বাভাবিক পর্যায় বলা হয়। আই কিউর সংখ্যা যদি ১৩০-এর চেয়েও বেশি হয়, তাহলে তাকে একজন খুব বুদ্ধিমান মানুষ বলা যাবে। বিশ্বে মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশের মানুষের আই কিউ সংখ্যা ১৩০-এর ওপরে। যদি আই কিউর সংখ্যা ১৪০ ছাড়িয়ে যায়, তাহলে তিনি রীতিমতো একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি। বিশ্বে এ ধরনের মেধাবীর সংখ্যা মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। আসুন জেনে নেই, বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী কয়েকজন ব্যক্তির কথা। তাই চি চুয়ান তিনি একজন চীনা বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান। তাঁর আই কিউর সংখ্যা ২৩০। বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী দশ জনের তালিকায় তিনি রয়েছেন প্রথম স্থানে। তাঁর জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়। ছোটবেলা থেকেই অঙ্গ ও ভাষার ক্ষেত্রে তাঁর সহজ প্রতিভা বোঝা যায়। একবার তার এক পারিবারিক পার্টিতে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুসহ অনেকেই আসে। অনেক ছোট শিশুও তাদের বাবা-মার সঙ্গে এ পার্টিতে এসেছিল। তখন তাই-এর বয়স ছিল মাত্র দুই বছর। ওই পার্টিতে তিনি পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং ইংরেজী ভাষা শেখান। সবাই ওর এই গুণ দেখে ভীষণ অবাক হয়ে যায়। কারণ মাত্র দুই বছর বয়সে শরীরের অঙ্গ ও ইংরেজী সম্পর্কে অনেক বেশি জ্ঞান সে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। তাই-এর বাবা জানান, আসলে ছোটবেলায় শিশু টিভি অনুষ্ঠান ‘সিসেম স্ট্রিট’ থেকে সে এসব শিখেছে। তাঁর এমন প্রতিভার আরও প্রমাণ পাওয়া যায়। যখন তাই-এর বয়স আট বছর, তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষা অর্থাৎ এসএটির গণিতবিদ্যা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তার পরীক্ষার ফল ৭৬০ পয়েন্ট, যার মোট নম্বর ৮০০। তিনি নয় বছর বয়স থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতবিদ্যা শিখতে শুরু করেন এবং দশ বছর বয়স থেকে একটানা তিন বছর ধরে আন্তর্জাতিক গণিতবিদ্যা অলিম্পিক গেমসে অংশ নেন। তিনি যথাক্রমে ব্রোঞ্জ, রৌপ্য এবং স্বর্ণ পদক পেয়েছেন। তাই চি এ প্রতিযোগিতার ইতিহাসের সবচেয়ে তরুণ অংশগ্রহণকারী এবং পুরস্কার অর্জনকারী মানুষও। এ পর্যন্ত তিনি ২৩০টিরও বেশি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। যার ধারাবাহিকতায় প্রতিভাবান এই মানুষটি ২০০৬ সালে গণিতের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘ফিল্ডস’ লাভ করেন। মাত্র ৩৭ বছরের জীবনে তাঁর এত বড় সাফল্য ও অগ্রগতি সত্যিই বিস্ময় জাগায়। কিম উং-ইয়ুং যদি বলা হয় কেউ ৬ মাস বয়সে কথা বলতে পারে, তবে তা বিশ্বাস করাটা সত্যিই কঠিন। কিন্তু বিশ্বাস আপনাকে করতেই হবে। কেননা, দক্ষিণ কোরিয়ার এ মানুষটিকেও সবচেয়ে মেধাবী মানুষের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁর নাম কিম উং-ইয়ুং। তাঁর আই কিউ ২১০। তাঁর বাবা-মায়ের যত্নে আর ভালবাসায় সে ছয় মাসের মধ্যেই কথা বলতে শুরু করে। আর তাঁর বয়স যখন তিন বছর তখন সে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রিটেন ও জার্মান ভাষা পড়তে এবং লিখতে পারে। এরপর সে কোরিয়ান ভাষা ও চীনা ভাষায় কবিতাও লিখতে শুরু করে। আরও বিস্ময়ের কথা হলো, গণিতবিদ্যায় ও সে খুব দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিল। তিন বছর বয়স থেকেই সে খুব জটিল ও কঠিন ক্যালকুলাস সমস্যা সমাধান করতে পারত। কেবল নিজ দেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্রও তাঁর ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহ দেখিয়েছে। লস এ্যাঞ্জেলেসের একটি হাইস্কুল চার বছর বয়সী কিম উং-ইয়ুংকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার আমন্ত্রণ জানায়। দক্ষিণ কোরিয়ার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁকে ভর্তি করতে চেয়েছিল। তার বয়স যখন আট বছর, তখন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় মহাকাশ ব্যুরো অর্থাৎ নাসা তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করার আমন্ত্রণও জানায়। এরপর সে নাসার জন্য দশ বছর কাজ করে। কিম উং-ইয়ুং মাত্র ১৫ বছর বয়সে পদার্থবিদ্যায় ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করে দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিরে আসেন। এরপর কিম এমন একটি সিদ্ধান্ত নেন যা সবাইকে অবাক করে দেয়। তিনি খুব সাধারণ একটি কোম্পানিতে একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর দেশের অনেকেই বলেছিল, মেধাবী শিশুর রূপকথা ভেঙে গেছে। তিনি বলেছেন, ‘আগে আমার জীবন ছিল একটি মেশিনের মতো। অন্যের চাহিদামতো আমি জীপনযাপন করেছি এবং কাজ করেছি। আসলে আমি শুধু একজন সাধারণ মানুষ হতে চাই, আমি আনন্দ চাই। এটাই হলো আমার নিজের জীবন, আর আমি আমার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জীবনটা উপভোগ করতে চাই।’ জেমস উডস মেধাবীদের তালিকায় এরপর যে নামটি আসে তিনি হলেন জেমস উডস। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একজন সফল অভিনেতা। দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম, তাঁর অভিনয় সবাই পছন্দ করে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জেমস উডস খুবই বুদ্ধিমান এবং মেধাবী। তাঁর আই কিউ ১৮০। তিনি ছোটবেলা থেকেই শ্রেষ্ঠ ছাত্র ছিলেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষা অর্থাৎ এসএটি পরীক্ষায় তিনি ফুল মার্ক পেয়েছিলেন। অনেক প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্পূর্ণ বৃত্তি দিয়েছিল। কিন্তু তিনি অবশেষে এমআইটিতে লেখাপড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জেমস উডস অভিনয় করতে এত পছন্দ করেন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি ১৯৬৯ সালে এমআইটির লেখাপড়া বন্ধ করে অভিনয় জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। জেমস উডস গোল্ডেন গ্লোবে একবার মনোনয়ন, অস্কারে দু’বার মনোনয়ন এবং তিনবার এমী পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।
×