ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সহিংসতার মধ্যেই দিল্লিতে মন্দির রক্ষায় মুসলিমরা

প্রকাশিত: ০১:১২, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সহিংসতার মধ্যেই দিল্লিতে মন্দির রক্ষায় মুসলিমরা

অনলাইন ডেস্ক ॥ এক সপ্তাহ ধরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জ্বলছে ভারতের উত্তর-পূর্ব দিল্লি। এতে এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে অন্তত ৪২ জনের। এছাড়া গ্রেফতার করা হয়েছে ৫১৪ জনকে। দেশটিতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বেছে বেছে হামলা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মধ্যেই অসাম্প্রদায়িকতার এক অনন্য নজির গড়লেন স্থানীয় মুসলিমরা। আজ শনিবার আনন্দবাজারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে আসে এমন চিত্র। সহিংসতায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের পবিত্রস্থান মসজিদ পুড়িয়ে দিলেও মুসলিম অধ্যুষিত মুস্তাফাবাদের বাবুনগর অঞ্চলে শিব মন্দির রক্ষা করেছেন স্বয়ং মুসলিমরাই। পালাক্রমে পাহারা দিয়ে রক্ষা করেছেন শিব মন্দিরটি। মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিটিও পরম বিশ্বস্থতায় মন্দিরের চাবি তুলে দিয়েছেন স্থানীয় মুসলিমদের হাতে। ৩০-৩৫ বছর ধরে মন্দিরের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা রীণা (৫২) জানান, দৈনন্দিন পুজার সমস্ত দায়িত্বই তার। এই বিপদের সময়ে তিনি ধর্ম বিচার না করে আস্থা রেখেছেন মুসলিমদের ওপরেই। তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন মন্দিরের চাবি। মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলেও তিনি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে বিন্দুমাত্র শঙ্কিত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ওরা তো নিজেদেরই লোক। গত কয়েক দিন মন্দিরে যেতে পারিনি। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম, ওরা থাকতে মন্দিরের কোনো ক্ষতি হবে না। এত দিন একসঙ্গে থেকেছি। পরিস্থিতি খারাপ বলে কি সব বদলে যাবে? আমরা পৃথক ধর্ম পালন করলেও ঈশ্বর তো একই।’ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন দেশবন্ধু কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হাসিন জানান, ‘পরিস্থিতি যেমনই হোক, আমরা চেয়েছিলাম সব সময়েই ঐক্যবদ্ধ থাকতে। যাতে হিংস্র জনতা মোকাবিলা করা যায়। যে কোনো মূল্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সৌহার্দ্য অটুট রাখাই ছিল আমাদের সংকল্প। তাই মন্দির বাঁচাতে ওই দিনগুলোতে পালা করে নজরদারি করেছি। দুই ধর্মের মানুষই ছোট ছোট গ্রেুপে বিভক্ত হয়ে সতর্ক অবস্থায় পাহারা দিয়েছি।’ মন্দির থেকে কয়েক মিটার দূরত্বে থাকেন কামরুদ্দিন নামের একজন শ্রমিক। স্থানীয় চায়ের দোকানে খাবার সরবরাহ করে জীবন চলে তার। এই কামরুদ্দিনের গলায়ও সম্প্রীতির সুর। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমরা একসঙ্গে থেকেছি। কখনও সংঘর্ষের কথা ভাবতেই পারিনি। এই কঠিন সময়ে মানবতা রক্ষা করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদ জ্বলে গেছে জানি, কিন্তু মন্দিরে আমরা কোনো আঁচ লাগতে দেব না।’
×