ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত ছাড় নোটিস

বাংলাদেশী ছাত্রীর পক্ষে লড়বেন বিশ্বভারতীর শিক্ষকরা

প্রকাশিত: ১০:১১, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  বাংলাদেশী ছাত্রীর  পক্ষে লড়বেন  বিশ্বভারতীর  শিক্ষকরা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অজুহাতে ভারত ছাড়ার নোটিসের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বাংলাদেশী ছাত্রীর পক্ষে নৈতিক ও আইনী সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) নিয়ে ক্যাম্পাসে এক বিক্ষোভের কয়েকটি ছবি সম্প্রতি ফেসবুকে পোস্ট করার পর বুধবার ওই ছাত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদেশী নিবন্ধকের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে আসা নোটিসটি পান, যাতে ১৫ দিনের মধ্যে তাকে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের। সেখানে কারণ হিসেবে বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী আফসারা আনিকা মিম স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে ভারতে পড়তে এসে ‘সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করেছেন’ বলে উল্লেখ করা হলেও নির্দিষ্ট কোন অভিযোগের কথা নেই। গ্রাফিক ডিজাইনের প্রথম বর্ষের ছাত্রী কুষ্টিয়ার মেয়ে আফসারাও বুঝতে পারছেন না কেন তাকে এই শাস্তি দেয়া হচ্ছে। নোটিসটি পুনর্বিবেচনার জন্য বৃহস্পতিবার বন্ধুদের নিয়ে কলকাতায় বিদেশী নিবন্ধকের আঞ্চলিক কার্যালয়েও গিয়েছিলেন ২০ বছর বয়সী এই তরুণী। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে রয়েছে জানিয়ে সেখান কর্মকর্তারা কিছু করার জানিয়ে দিয়েছেন বলে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এক বন্ধুকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, আফসারা নিজের বক্তব্য কয়েকটি অফিসে লিখিতভাবে জানাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পরামর্শ দিয়েছেন। তবে ওই আদেশের বিরুদ্ধে আইনী প্রতিকার খুঁজতে বৃহস্পতিবারই বিশ্বভারতীর শিক্ষকদের একটি অংশ কলকাতার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের দ্বারস্থ হয়েছেন। জ্যেষ্ঠ এক অধ্যাপক বলেন, ‘মেয়েটি কয়েকটা ছবি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিল। তার ভিত্তিতে তাকে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। আমরা এর মধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা ওই ছাত্রীকে সব ধরনের সহায়তা দেব।’ তাদের অন্যতম হাইকোর্টের আইনজীবী শামিম আহমেদ বলেন, আফসারাকে দেয়া নোটিসকে আইনগতভাবে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ রয়েছে। কারণ তাতে ‘সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে’ তার জড়িত থাকার কোন প্রমাণ নেই। ‘ওই আদেশ ও তার ফেসবুক পোস্ট আমি ভালভাবে খতিয়ে দেখেছি। আদেশে এমন কোন নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ নেই যা দিয়ে প্রমাণিত হয় ওই ছাত্রী সরকারের বিরুদ্ধে কিছু করেছেন। মন্তব্য করা তার অধিকার এবং এর জন্য কেন্দ্র থেকে তাকে দেশ ছাড়তে বলা খুবই অস্পষ্ট একটা কারণ। এমনকি ওই নোটিস দেয়ার আগে তাকে নিজের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দেয়া হয়নি।’ ওই ছাত্রীকে তিনি আইনী সহায়তা দেবেন বলে জানান এই আইনজীবী। এদিকে বাংলাদেশী ছাত্রীকে ভারত ছাড়ার নোটিস দেয়ায় সমালোচনামুখর রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ভারতের মতো মুক্ত দেশে যেখানে পাকিস্তানের সঙ্গে মধ্যস্ততার ঘোষণা দেয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, সেখানে বাংলাদেশের মেয়ে কেন নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধের প্রতিবাদের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতে পারবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্বভারতীর স্টুডেন্ট ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার (এসএফআই) নেতা সোমনাথ সৌ। তিনি বলেন, ‘ওই নোটিসের মধ্য দিয়ে তার প্রতি অবিচার হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আমরা রাজনৈতিক আদর্শ নির্বিশেষে সোমবার সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছি। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই প্রতিবাদ করব।’
×