ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যান চালকের বাসায় বিদ্যুতের আলো

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ভ্যান চালকের বাসায় বিদ্যুতের আলো

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ হাকিম আলী (৪৫)। পেশায় একজন ভ্যান চালক। দিন আনে দিন খায়। তাই তাকে প্রত্যহ সকালে ভ্যান নিয়ে কাজে বের হতে হয়। ভ্যান চালালে দিনে প্রায় সাত শত টাকা রোজগান হয়। দেড়শত টাকা ব্যাটারি চালিত ভ্যানের মালিককে জমা দিয়ে যা থাকে তাই তার প্রতিদিনের রোজগার। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৪শত টাকা হতে ৫শত টাকা রোজগার হয়। একদিন কাজে বের না হলে প্রভাব পড়ে পুরো পরিবারের উপর। দিনটি কোন রকম চলে যায়। কিন্তু প্রভাব পড়ে মাস শেষে। কোন অতিরিক্ত অর্থ জমা থাকে না। সংসারে স্বচছলতা আনতে প্রতিদিন কাজ করেন। এখন অলস সময় কাটাননা। কারণ স্বপ্ন দেখেন সন্তানদের লেখা পড়া শিখিয়ে শিক্ষিত করবেন। তাদেরকে তার মত ভ্যান চালকের কষ্টে কাজ না করতে হয়। তাই কন কনে ঠান্ডা ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেও ভ্যান নিয়ে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছেন। তার সাথে কথা হয় শুক্রবার সকাল ৯ টায় শহরের মিশনমোড়ের একটি পার্সেল পরিবহনকারি প্রতিষ্ঠানের সামনে। জেলা শহরের থানাপাড়া মহল্লায় বসবাস করেন ভ্যানচালক হাকিম আলী (৪৫)। শীত বিদায়ের বেলায় হঠাৎ করে গত কয়েকদিন ধরে পুনরায় ঠাণ্ডার প্রকোপ বেড়েছে। দিনের বেলায় থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে বিপাকে পড়েছে খেটে যাওয়া দিনমুজর শ্রনির শ্রমজীবি মানুষেরা। এই ভ্যান চালিয়ে তার দুই সন্তানকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছে। স্ত্রী বাড়িতে সংসার সামলায় গরু প্রতিপালন করে। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে একটি সাঁড় গরু স্ত্রী প্রতিপালন করে বিক্রি করে। এতে বছরে বাড়তি আয় হয় প্রায় ৬০/৭০ হাজার টাকা। হামিক আলী(৪৫) বলেন, শেখ হাসিনার সরকার গরীবের সরকার। তিনি কোন দিনও ভাবেনি। তার বাড়িতে বিদ্যুতের আলো জ্বলবে। এখন তার বাড়িতেও কারেন্ট গেছে। বিদ্যুতে আলোতে দুই শিশু সন্তান পড়াশুনা করে। প্রধানমন্ত্রী যদি বিদ্যুতের ব্যবস্থা না করতেন। তাহলে তার জীবনে ও তার শ্রমে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতো না। পর্যাপ্ত নিরিবিচ্ছিন্ন বিদূৎের সরবরাহ তার জীবন ও শ্রম পাল্টে দিয়েছে। এখন সে ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালায়। এখানে কাইয়িক শ্রম নেই। কম পরিশ্রমে দ্রুত এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় মালামাল সরবরাহ করা যায়। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়না। ১০ বছর আগেও যা ছিল কল্পনার বাহিরে। তখন পায়ে প্যাডেল মেরে ভ্যান চালাতে হতো। সারাদিন ভ্যান চালাতে চালাতে ক্লান্ত হয়ে যেতে হত। রাতে বাড়ি ফিরলে ক্লান্ত শরীল নিয়ে স্ত্রী, সন্তানদের কথা শুনতেও ভালো লাগতো না। একদিন পরিশ্রম করলে পরদিন পরিশ্রম করতে মনে চাইতো না। এখন সেই দিন নেই। এখন রোদ, বৃষ্টি ও ঠান্ডায় কাজ করতে কোন কাইয়িক শ্রম করতে হয়না। প্রতিদিন কাজে বের হই। যা আয় হয়। তা দিয়ে সংসার ভালো চলে।
×