ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আড়াই বছর পর তদন্তের দায়িত্ব পেল পিবিআই

চট্টগ্রামের মিতু হত্যা রহস্যের জালে ঘুরছে

প্রকাশিত: ১০:৫২, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 চট্টগ্রামের মিতু হত্যা  রহস্যের জালে  ঘুরছে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা চট্টগ্রামের সেই মিতু হত্যাকান্ড এখনও রহস্যের জালেই ঘুরপাক খাচ্ছে। দীর্ঘ আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে তদন্ত চালিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। বিভিন্ন সূত্র মতে, হত্যা রহস্য ডিবির তদন্তে বহুলাংশে পরিষ্কার হলেও চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রদানের ক্ষেত্রে বার বার হোঁচট খেয়ে আসছে। এ অবস্থায় অতি গোপনে এ হত্যা মামলার তদন্তভার দেয়া হয়েছে পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)। এ সংস্থার একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত সোমবার মামলার ডকেট তাদের হাতে পৌঁছেছে। তবে প্রক্রিয়াটি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে এবং নির্দেশে ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কোন মামলা তদন্তাধীন অবস্থায় অন্য কোন তদন্ত সংস্থার কাছে অর্পণ করার আইনী বিধান নেই। এরপরও এ প্রক্রিয়াটি কিভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পিবিআই সূত্রও জানিয়েছে, নতুন করে এ হত্যাকান্ডের তদন্ত করার কোন অবকাশ নেই। কেননা, ঘটনার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর হত্যাকান্ডের প্রয়োজনীয় আলামতসমূহ যথাযথভাবে পাওয়া যাবে না। এছাড়া কোন মামলার তদন্ত চলতে থাকার পর চূড়ান্ত কোন রিপোর্ট প্রদান ছাড়া নতুন করে অন্য কোন সংস্থার কাছে তা অর্পণ করার বিষয়টি তাদের কাছেও প্রশ্নসাপেক্ষ। আইনীভাবে এ প্রক্রিয়া বারিত রয়েছে। ফলে পিবিআইতে এ নিয়ে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। বলা হচ্ছে, যদি তাই হয় তাতে এমন একটি রহস্যময় হত্যাকান্ডের নেপথ্যে কি ঘটেছে তা উন্মোচনের বিষয়টি হিমাগারে থাকার মতোই হতে পারে। চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র জিইসি মোড় এলাকায় ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে সংঘটিত এ হত্যাকান্ডের শিকার মাহমুদা খানম মিতু। যিনি তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী। ওইদিনই স্বামী বাবুল আকতার পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হওয়ার দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ঢাকায় পুলিশ সদর দফতরে যোগদানের প্রক্রিয়ায় ছিলেন। যোগদানের আগেই তার স্ত্রী মিতুকে প্রকাশ্যে প্রথমে কুপিয়ে ও পরে গুলিতে হত্যা করা হয় তার শিশু সন্তানের সামনে। মিতু হত্যাকান্ডটি সকল মহলের কাছে এখনও রহস্যময় হয়ে আছে এ কারণে যে, এ নেপথ্যের নায়ক স্বামী বাবুল আক্তার না অন্য কেউ। কিন্তু ঘুরে ফিরে বার বারই বাবুল আকতারের সম্পৃক্ততাই এসেছে। কিন্তু যে মুসাকে দিয়ে কিলিং মিশন স্কোয়ার্ড করে মিতুকে হত্যা করা হয়েছে সে মুসা আদৌ এ পৃথিবীতে বেঁছে আছে সরিয়ে দেয়া হয়েছে সেটাও রহস্যময় হয়ে আছে। এ অবস্থায় একজন উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যাকা-ের তদন্ত নিয়ে পুলিশেরই গোয়েন্দা বিভাগ কোন রহস্যের কারণে বিলম্বের পথ বেছে নিয়েছে এবং চার্জশীট বা চূড়ান্ত কোন রিপোর্ট দিতে গড়িমসি করে যাচ্ছে সেটাও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সর্বশেষ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আদালতের পক্ষে যখন এ মামলার অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয় তখন কৌশলে তদন্তভার পিবিআইকে হস্তান্তর করার পথ বেছে নেয়া হয় বলে চাউর হয়েছে। এদিকে, যোগাযোগ করা হলে পিবিআই মেট্রোর পক্ষে নিশ্চিত করা হয়েছে গত সোমবার তাদের কাছে এ মামলার তদন্তের দায়িত্বের আদেশ এসেছে। কিন্তু তদন্ত শুরু করার বিষয়টি নিয়ে এ সংস্থার মাঝে অনীহা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, এত দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর এ মামলার তদন্তের কোন কুলকিনারা করা যাবে কিনা তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এছাড়া মামলা প্রমাণে আলামত যেখানে মূল প্রতিপাদ্য সেখানে তার অধিকাংশ বিনষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও এ মামলায় গ্রেফতারকৃতদের তথ্য অনুযায়ী কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দেয়া সেই মুসার কোন হদিস গত আড়াই বছরেও মেলেনি।
×