ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতকে বাদ দেয়ার চিন্তা অকল্পনীয় ॥ কাদের

প্রকাশিত: ১০:২৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতকে বাদ দেয়ার চিন্তা অকল্পনীয় ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সাহায্যকারী ও মিত্র দেশ হিসেবে ভারতকে মুজিববর্ষে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সাহায্যকারী ও সবচেয়ে বড় মিত্র দেশ ভারত। এমন চিন্তা থেকেই মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতকে বাদ দেয়ার চিন্তা অকল্পনীয়। বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক ইস্যুতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় জাতির জনকের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর, করোনাভাইরাস, সড়ক ও সেতু বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম, বিএনপিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন মন্ত্রী। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাধীন না হলে সরকারের মন্ত্রী এমপিরা কেন টার্গেট হবে- ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কাছে এমন প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। টিআইবি বলছে, দুদক রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ নয়। দুদক ততটুকুই স্বাধীন সরকার যতটুকু চায়। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দুদক ততটুকুই স্বাধীন যতটুকু সরকার চায়- এটা যদি হয় তাহলে সরকারের এত মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের আজকে এত তদন্ত, এত চার্জশীট কেন? সরকারের অনেক এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। যদি দুদক স্বাধীন না হতো তাহলে সরকারের মন্ত্রী এমপিরা কেন টার্গেট হবে? দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ের ঢাকা-ভাঙ্গা উদ্বোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, এটার প্রস্তুতি সম্পন্ন। তবে মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততা খুব বেশি। আপনারা জানেন, মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা চলছে। আর ১৭ দিন বাকি। মুজিববর্ষে বিদেশী অতিথিরাও আসবেন। এজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি কাজ এগিয়ে চলছে। প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্যায় এখন। পাশাপাশি এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন আমাদের খুব জরুরী বিষয়। কারণ এটা যোগযোগের জন্যও খুব প্রয়োজনীয়। কারণ মুজিববর্ষে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থলে অনেকেই যাবেন। সে যাত্রার সময় বাঁচানো ও সহজ করার বিষয় রয়েছে। এটা অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এক্সপ্রেসওয়ে। এর কাজ শেষ হয়েছে এখন উদ্বোধন হবে।’ কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী কর্মব্যস্ততার কারণে আপাতত বিষয়টি নিয়ে দুইভাবে ভাবছেন। তিনি ভাবছেন, আগামী ১৭ মার্চ উপলক্ষে বাই রোডে তিনি টুঙ্গিপাড়া যাবেন। তার আগেই ১১-১২ মার্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এটি উদ্বোধন করবেন। ঢাকা-ভাঙ্গা যে এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে সে রাস্তায় প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে না গিয়ে বাই রোডে টুঙ্গিপাড়া যাবেন। সেটাও চিন্তাভাবনা আছে। খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার বিষয়ে এক প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, করাপশন ইজ করাপশন। এটা ২০০ কোটি না ২ কোটি এটা আমি দেখব না। যখন আপনারা ন্যায়বিচারের দিকে যাবেন তখন করাপশনের পারসেপশনটা নিয়ে ভাববেন, তখন আপনি কী ভাববেন? এক্ষেত্রে টাকার অঙ্কটা ভাবেন না করাপশনটা হয়েছে সেটা দেখবেন। এখানে টাকার অঙ্ক ২০০ কি দুই সেটা কোন বিষয় না। বিষয়টা হচ্ছে করাপশন হয়েছে কিনা। টাকার অঙ্ক দিয়ে তো দুর্নীতি পরিমাপ করা যাবে। ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়েছে। একইসঙ্গে এতিমের অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এটা কত টাকা এটা কোন বিষয় নয়। বিষয়টা হচ্ছে, এখানে মারাত্মক একটা দুর্নীতি হয়েছে,’ যোগ করেন কাদের। চীন থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মরণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতির কোন ঘাটতি নেই দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি প্রশ্নে কাদের বলেন, সমস্যাটা এখন আর এন্ডেমিক নেই। সমস্যাটা এখন পেন্ডিমিক পর্যায়ে চলে গেছে। পৃথিবীর প্রায় ৩২টি দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে এবং নতুন নতুন দেশও আক্রান্ত হচ্ছে। জাতিসংঘ থেকে মহাবিপদের কথা বলা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বার বার বিষয়টি নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে। এখন উৎপত্তিস্থল যেখানে, সেখানেও আমরা দেখতে পাচ্ছি আক্রান্ত এবং মৃত্যু সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কমছে এটা বোঝা যাচ্ছে না। বরং পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালেও করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে বাংলাদেশ আক্রান্ত হবে না! একেবারে কাছাকাছি দেশ। বাংলাদেশেরও এখন সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন এবং সরকার প্রধান খুব সিরিয়াসলি বিষয়টি দেখছেন এবং সতর্কতা পালনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি আরও সতর্কভাবে মোকাবেলার জন্য বিভিন্নভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতির কোন ঘাটতি নেই। মন্ত্রী বলেন, আমরা জানি এতে আমরা আক্রান্ত হতে পারি। আমরা ভিকটিম হতে পারি, এমন আশঙ্কা অনেক বেশি। সে হিসেবে আমাদের প্রস্তুতি আছে এবং আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতকে বাদ দেয়া সমীচীন হবে না ॥ ভারতের রাজধানী দিল্লীতে সহিংসতার কারণে সমালোচনার মুখে থাকায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে আনা উচিত হবে কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ভারতের এই পরিস্থিতির অনেক আগেই নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ভারতে যা কিছু হচ্ছে সেটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেই বিষয়ে আমাদের নাক গলানো উচিত হবে না। মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানের অনেক আগেই মোদিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারতের অবদান ব্যাপক। সেই বিবেচনায় মুজিববর্ষের আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভারতকে বাদ দেয়া সমীচীন হবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারতের ভূমিকা অপরিসীম। তারা আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। তাই ভারতকে বাদ দেয়ার চিন্তা অকল্পনীয়। ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নে উভয়পক্ষকে কিছু ছাড় দিতে হবে ॥ ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নে সাংবাদিক ও মালিক উভয়পক্ষকে কিছু ছাড় দিতে হবে বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের স্বার্থকেও আমাদের দেখতে হবে। আবার যারা মালিক পক্ষ সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা দেবে, তাদের সঙ্গেও কিছুটা বোঝাপড়ার বিষয় আছে। তা না হলে তো সমাধান হবে না। এটা সবাইকে বুঝতে হবে একটি বাস্তবভিত্তিক মন মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এখানে যুক্তির বিচারে চলতে হবে, যার যার অবস্থানে অনড় থাকলে এ সমস্যার সমাধান হবে না। এটা হলো বাস্তবতা। নবম ওয়েজবোর্ড নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, নবম ওয়েজবোর্ডের বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন মন্ত্রিসভা কমিটি ফাইনালি দেখে একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছে, একটা এ্যাডজাস্টমেন্টের (মানিয়ে নেয়া) চেষ্টা করেছে। এখন সাংবাদিক ইউনিয়ন তার বিরুদ্ধে আবার রিট করেছে। তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের যেকোন বিষয়ে বাস্তববাদী হতে হবে। কারণ আপনি নেবেন কিন্তু যিনি দেবেন তিনি দেবেন কি-না, তারাও আবার তাদের পক্ষ থেকে মামলা করেছে। এটার একটা সমাধান খুঁজতে হবে। সমাধানের জন্য রিয়ালিস্টিক এ্যাপ্রোজ থেকে আমরা চেষ্টা করেছি, দু’একটা বিষয়ে কম্প্রোমাইজ এ্যান্ড এ্যাডজাস্টমেন্ট করে একটা ব্যালেন্স (ভারসাম্য) করার জন্য। কিন্তু সেটা তো সাংবাদিকদের মূল স্টেকহোল্ডাররা মানতে চান না। আবার যেটা হয়েছে সেটা মালিক পক্ষ মানতে চান না। ফলে মাঝখানে একটা ব্যালেন্সের দরকার আছে। সেটা না হলে বিষয়টি আলোর মুখ দেখবে না। সমাধানের পথ পাবে না। সেখানে আমাদের করণীয় কী?’
×