ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার চিকিৎসা দেশেই সম্ভব ॥ হাইকোর্ট

প্রকাশিত: ১০:১৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 খালেদার চিকিৎসা দেশেই সম্ভব ॥ হাইকোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিন মেলেনি। দ্বিতীয় দফায় জামিন আবেদন করলেও তাতে নতুন কোন সারবত্তা না থাকায় তা খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। রাষ্ট্র, আসামি ও দুদকের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ প্রদান করেন। এর ফলে খালেদা জিয়াকে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে। হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেছে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশেই করা সম্ভব। খালেদা জিয়াকে বুঝতে হবে উনি একজন দ-প্রাপ্ত আসামি, তিনি অন্যদের মতো স্বাধীন নন। সাধারণ মানুষ আদালতে যে ধরনের সুবিধা পাবেন, দন্ডিত ব্যক্তি হিসেবে খালেদা জিয়া তার ইচ্ছে অনুযায়ী চিকিৎসা সুবিধা পাবেন না। উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে বোর্ড চাইলে নতুন কোন বিশেষজ্ঞকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। আদেশের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়ার অনুমতি না পাওয়ার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা তাঁর চিকিৎসা শুরু করতে পারছেন না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ হলে তাঁর চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেয়াটাই স্বাভাবিক কিন্তু তিনি সেটা দিচ্ছেন না। এটাকে তাঁর দিক থেকে অস্বাভাবিকতা মনে হচ্ছে। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে অযথা আবেদন করা হয়েছে। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, নতুন কোন কারণ না থাকায় দ্বিতীয়বারের মতো জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেছেন এ আদেশে আমরা ক্ষুব্ধ। আমরা সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তারা হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করবে। এদিকে আদেশের পর বিএনপিপন্থী আইনজীবীগণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। এ সময় আদালতে খালেদার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এবং এ্যাডভোকেট সগির হোসেন লিওন। এছাড়া শুনানির সময় আদালতে ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বিএনপিপন্থী আইনজীবীগণ ধারণা করেছিল এবার জামিন হলে হয়তো বা খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। কিন্তু তা হচ্ছে না। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরান কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন। বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট তার আদেশে বলেছে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশেই করা সম্ভব। তার চিকিৎসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালেই হবে। আদালত আরও বলেছে, খালেদা জিয়াকে বুঝতে হবে উনি একজন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি, তিনি অন্যদের মতো স্বাধীন নন। সাধারণ মানুষ আদালতে যে ধরনের সুবিধা পাবেন, দন্ডিত ব্যক্তি হিসেবে খালেদা জিয়া তার ইচ্ছানুয়ায়ী চিকিৎসা সুবিধা পাবেন না। তাকে জেল কোড অনুসারে চিকিৎসা নিতে হবে। বিএসএমএমইউ দেশের মধ্যে সেরা হাসপাতাল। তাই সেখানে তার চিকিৎসা করতে কোন সমস্যা নেই। এছাড়া বিএসএমএমইউ হাসপাতালে থেকে যে রিপোর্ট এসেছে সেখানে কোথাও উল্লেখ নেই তারা খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দিতে সক্ষম নন। কিন্তু খালেদা জিয়া এ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্টের বিষয়ে কোন অনুমতি দেননি। আমরা মনে করি তিনি সম্মতি দিলে তার চিকিৎসা সেবা শুরু হতে পারে। অতএব জামিন চেয়ে যে আবেদন করা হয়েছে তার কোন সারবত্তা নেই। আবেদনটি খারিজ করা হলো। তবে খালেদা জিয়া যদি মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী এ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ নিতে সম্মতি দিলে, দ্রুত তার উন্নত চিকিৎসা শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হাইকোর্ট বলেছে, উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে বোর্ড চাইলে নতুন কোন বিশেষজ্ঞকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আদেশে বলেন, অবশ্যই তাকে (খালেদা জিয়া) মনে রাখতে হবে যে তিনি একজন বন্দী। তিনি একজন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি। একজন সাধারণ মানুষ যেভাবে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চিকিৎসা নিতে পারে একজন বন্দী সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। কারাবিধি ও নিয়ম-নীতি অনুযায়ী তার চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে। এবং দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। চিকিৎসার অনুমতি না দেয়াকে অস্বাভাবিকতা মনে করছেন আইনমন্ত্রী আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়ার অনুমতি না পাওয়ার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা শুরু করতে পারছেন না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেয়াটাই স্বাভাবিক কিন্তু তিনি সেটা দিচ্ছেন না। এটাকে তার দিক থেকে অস্বাভাবিকতা মনে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে তার সরকারী আবাসিক অফিসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী। সুপ্রীমকোর্টে খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন নাকচ করা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এর আগে আপীল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন করা হলে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে আপীল বিভাগ তা খারিজ করে দিয়েছিলেন। তারপরও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা হাইকোর্ট বিভাগে জামিনের আবেদন করেছেন। আদালত অত্যন্ত গভীরভাবে দেখার পরেই আইনী যে সিদ্ধান্তে সেই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। এখানে তার কিছু বলার নেই। এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, বিএনপি থেকে অনেক কিছুই দাবি করা হয় যা অযৌক্তিক। সেগুলোর জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করি না। সেগুলোর বিচার আপনারা করবেন, জনগণ করবেন।
×