ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আমানতকারীদের সুরক্ষা

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 আমানতকারীদের সুরক্ষা

সাধারণ মানুষের জমানো টাকা ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখা হয়, বিনিময়ে মুনাফা দেয়ার নিয়মও প্রচলিত। এসব ক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানী আইনের ৭৪ ধারায় গ্রাহকের গচ্ছিত আমানত সুরক্ষার বিষয়টিও বিধিসম্মত উপায়ে নির্দেশিত আছে। এই ধারায় বলা আছে- আদালত কোন ব্যাংকের অবসায়নের আদেশ দিলে কিংবা কোন ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে বন্ধের পর্যায়ে উপনীত হলে তিন মাসের মধ্যে সরকারী অবসায়ক আমানতকারী ও আমানতের তালিকা বীমা ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে দাখিল করবে। সেই মোতাবেক সবার আগে টাকা ফেরত পাবেন ব্যক্তি শ্রেণীর আমানতকারীরা। ব্যাংক কোম্পানী আইন অনুসারে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবশিষ্ট সম্পদ থেকে সব আমানতকারীর প্রাপ্য তাদের ফেরত দেয়ার নির্দেশনামা জারি করা আছে। পরবর্তীতে অন্যদের টাকা পরিশোধ করার বিধিও উল্লেখ আছে। সবশেষে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডারদের পাওনা টাকা ফেরত দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন, কোন ব্যাংক বন্ধ কিংবা দেউলিয়া হলে ব্যাংক কোম্পানীর বিধি মোতাবেক লিক্যুইডেটর নিয়োগ দিতে হয় বিপর্যস্ত ব্যাংকের সম্পদ হিসাব করতে। ব্যক্তি শ্রেণীর আমানতকারীর সংখ্যা এবং তাদের প্রাপ্য অর্থের মূল্যও নির্ধারণ করা হয়। সেই তালিকা অনুযায়ী প্রথম ক্ষুদ্র আমানতকারী এবং পর্যায়ক্রমে মধ্যম ও বৃহৎ আমানতকারীদের অর্থ সংশ্লিষ্টদের কাছে ফেরত যাবে। ব্যাংকের আমানতের সুরক্ষা দিতে ১৯৮৪ সালে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ২০০০ সালে এই অধ্যাদেশকে ব্যাংক আমানত বীমা আইন-২০০০-এ পরিণত করা হয়। কিন্তু এই আইনে ব্যাংক ছাড়া অন্য কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ২০১৭ সালের আইনের খসড়ায় ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ বাড়ানোরও পরামর্শ আছে। তবে এই ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়েও প্রশ্নের মুখে রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। খসড়া আইনে বলা আছে যার দুই লাখ টাকা আমানত আছে সেও পাবে সমান টাকা। আর যাদের কয়েক লাখ কিংবা কোটির কাছাকাছি জমা আছে তারাও ক্ষতিপূরণ বাবদ দুই লাখই পাবেন। এমন অসঙ্গতি আর অসামঞ্জস্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে আমানতের টাকার ওপর ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে বীমা প্রিমিয়াম দিতে হয়। এখন যার পরিমাণ প্রায়ই সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ১৬.৩ শতাংশ বেশি। এছাড়াও গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দিতে তহবিল পরিচালনা ও প্রশাসনের জন্য আমানত সুরক্ষা আইনের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকে ট্রাস্ট তহবিল নামে একটি তহবিল গঠন করা হবে। আইনটি প্রবর্তনের পর ব্যাংক ছাড়াও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এর সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। ফলে আমানতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও আইন অনুসারে গ্রাহকদের গচ্ছিত টাকা পরিশোধ করতে কোন ধরনের গাফিলতি করা যাবে না। সরকারের অনুমতিক্রমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গচ্ছিত অর্থের ব্যাপারে অন্য কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে গ্রাহকদের স্বার্থে। নতুন এই আইনের খসড়া অনুমোদন পেয়ে কার্যকর হলে সাধারণ গ্রাহক ও আমানতকারীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর আস্থা আরও বাড়বে।
×