স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি সমস্যা সমাধানে বিমসটেক রাষ্ট্রগুলোকে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করার সুপারিশ করা হয়েছে। পারস্পরিক সহায়তা বৃদ্ধিতে ঢাকায় বিমসটেকের দুদিনের এক সনফারেন্সে এই সুপারিশ উঠে আসে। করফারেন্সে বলা হয় দেশগুলোর জল বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে রাষ্ট্রগুলো ব্যবহার করতে পারলেই এই অঞ্চলের বিদ্যুত এবং জ¦ালানি সমস্যার সমাধান হতে পারে।
দুদিনের সেমিনারের শেষ দিনে রাষ্ট্রগুলোর অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পারস্পরিক অসহযোগিতা ও সহায়তা সম্প্রসারণে দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গত ১৩ বছর ধরে আঞ্চলিক সহায়তা সম্প্রসারণের মাধ্যমে আঞ্চলিক বিদ্যুত গ্রিড নয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে এতে খুব বেশি সাফল্য আসেনি। বরং রাষ্ট্রগুলো দ্বিপাক্ষিক সহায়তা বৃদ্ধিতে সেচুক্তি করেছে তার ভিত্তিতে আন্তঃদেশীয় গ্রীড লাইন চালু হয়েছে। বিদ্যুতও আসছে। কিন্তু বহুপাক্ষিক সুবিধা সম্প্রসারণে এখনও একমত হতে পারেনি বিমসটেক দেশগুলো।
দুদিনের করফারেন্সে বলা হয় এই অঞ্চলে বিদ্যুত সেবা সম্প্রসারণে তিনটি দেশ পিছিয়ে রয়েছে এর মধ্যে বাংলাদেশ গত বছর জুনের হিসেবে ৯৫ ভাগ, গত জুলাই পর্যন্ত নেপাল ৭৮ ভাগ এবং গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মায়ানমার ৫০ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিয়েছে। মূলত চাহিদা থাকার পরও নেপাল এবং মায়ানমার বিদ্যুত উৎপাদনে ব্যর্থ হয়েছে। দুটি দেশেই বিপুল পরিমাণ জল বিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দেশ দুটি যা কাজে লাগাতে পারছে না। বলা হচ্ছে নেপাল এবং মায়ানমারে উৎপাদিত বিদ্যুতে শুধু তাদের নিজেদের নয় বরং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্কট দূর হতে পারে।
করফারেন্সে যোগ দেয়া নেপালের ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশনের (ইআরসি) চেয়ারম্যান দিল্লী বাহাদুর সিং বলেন, নেপালে ৪২ হাজার মেগাওয়াটের জল বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু দেশটিদে এখন মাত্র এক হাজার ১৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে। দেশটি তার চাহিদার বড় একটি অংশ ভারত থেকে আমদানি করে। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ১০ বছরের মধ্যে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে চায়। যার মধ্যে চলতি বছর এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনে আসবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে এই উৎপাদন বেড়ে হবে তিন হাজার মেগাওয়াট। তবে নেপালের সঞ্চালন এবং বিতরণ অবকাঠামো নির্মাণকে একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে শীতে নেপালে জল সঙ্কটে বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেছেন সেখানে বাংলাদেশ থেকে নেপাল বিদ্যুত আমদানি করতে পারে। তবে এজন্য গ্রীড লাইন নির্মাণে উভয় দেশকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।
মায়ানমারের এখন বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচ হাজার ৬৪২ মেগাওয়াট। দেশটি সব থেকে বেশি তিন হাজার ২৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে জল থেকে এরপরই প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে দুই হাজার ১৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে। এছাড়া কয়লা থেকে ১২০ এবং ডিজেল থেকে ৯২ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে। মায়ারমারেও বিপুল পরিমাণ জল বিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। মিয়ানমারের ডিপার্টমেন্ট অব ইলেকট্রিক পাওয়ার প্ল্যানিংয়ের পরিচালক সো সি থু লেনিং বলেন, তাদের কাছে মনে হয়েছে বিমএসটেক দেশগুলো পারস্পরিক তথ্য আদান প্রদানে আন্তরিক নয়। তথ্যে অপর্যাপ্ততার জন্য মায়ানমার অনেক কিছু করে উঠতে পারে।
কনফারেন্সে শ্রীলঙ্কার পাবলিক ইউটিলিটি কমিশনের চেয়ারম্যান কিথসিরি লিয়ানেজ বলেন, তার দেশে বিমসটেক সহায়তা সম্প্রসারণে পুরোপুরি ভারতের ওপর নির্ভরশীল। ভারত এগিয়ে না আসলে শ্রীলঙ্কার একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার জন্য বিকল্প পথ হচ্ছে সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে বঙ্গোপসাগরের মধ্য দিয়ে গ্রিড লাইন নির্মাণ। যা অর্থনৈতিকভাবে উপযোগী নয়।