ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার পরজীবী যমজ শিশু আবদুল্লাহর দেহে সফল অস্ত্রোপচার

প্রকাশিত: ১১:০৫, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

এবার পরজীবী যমজ শিশু আবদুল্লাহর দেহে সফল অস্ত্রোপচার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার ঢাকা মেডিক্যালে প্যারাসাইটিক টুইনের (পরজীবী যমজ) শিশু আবদুল্লাহর সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুটির পেটে থাকা অতিরিক্ত হাত-পা কেটে ফেলা হয়েছে। মাথাবিহীন এসব অঙ্গ এতদিন ওই শিশু পেটে বয়ে বেড়াচ্ছিল। বুধবার দুপুরে ঢামেক হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ আশরাফ উল হক কাজল এ তথ্য জানান। অধ্যাপক কাজল জানান, এক মাসের আবদুল্লাহ এখন ভাল আছে। মায়ের দুধ খাচ্ছে। হাত পা নাড়তে পারছে। তিনি বলেন, ঢামেক হাসপাতালে এর আগে আরও একটি পরজীবী যমজ শিশুর সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এই অস্ত্রোপচারটি হয়। এতে সময় লাগে চার ঘণ্টা। একটি শিশুর পেটে আরেক শিশুর মু-ুহীন শরীর ছিল। পেটের বাইরে ছিল দুই পা, দুই হাত, নিতম্ব ও পায়খানা-প্র¯্রাবের রাস্তা। মাথা ও বুকের অংশবিশেষ ছিল না। সুস্থ শিশুর নাভিতে বড় একটি ছিদ্র ছিল, এর মাধ্যমে পেটের নাড়ি যাওয়া আসা করত। তবে আমরা সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মু-ুহীন দেহটি কেটে ফেলেছি। এখন শিশুটি সুস্থ আছে। শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কাজল জানান, আগাছা যেকোন অন্য গাছ থেকে রস নেয়। একইভাবে শিশু আবদুল্লাহর শরীরের ওপর ওই অপূর্ণাঙ্গ শিশুটি বড় হচ্ছিল তার শরীর থেকে পুষ্টি নিয়ে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এ ধরনের শিশুকে অপূর্ণাঙ্গ যমজ বলা হয়। তিনি জানান, বিশ্ব এই রোগের হার দশ লাখে একজন। এর আগে ’১৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের একটি বাচ্চার সফল অপারেশন হয়। অধ্যাপক কাজল জানান, ছয়দিন আগে অস্ত্রোপচারের পর শিশু আব্দুল্লাহ এখন ভালো আছে। এখন শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। বাচ্চার দুই হাত দুই পা নাড়াতে পারছে। বর্তমানে তার অর্গানের কোন সমস্যা নেই। আশা করছি সে সুস্থ সবলভাবে বেড়ে উঠবে। ঢাকা মেডিক্যালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন জানান, অনেক জটিল অপারেশন আমাদের হাসপাতালে সফলভাবে হয়েছে। এটি আরেকটি প্রমাণ। এর আগে জোড়া লাগানো অনেক শিশুই সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুস্থ হয়েছে। এদের মধ্যে আলোচিত তোফা-তহুরা ও রাবেয়া-রোকাইয়া। তিনি বলেন, পরজীবী যমজ শিশু আব্দুল্লাহর অবস্থা প্রথম থেকেই জটিল ছিল। আমাদের হাসপাতালে অসাধারণ সব চিকিৎসক রয়েছেন। যারা সঙ্কটকালে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। গত ২৫ জানুয়ারি নোয়াখালীর এজবালিয়া গ্রামের পারভীন আক্তার ও সালাউদ্দিন দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় আবদুল্লাহ। আবদুল্লাহর বাবা নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী, নাম সালাউদ্দিন। সালাউদ্দিন বলেন, জন্মের পর পরই শিশুটিকে নোয়াখালীর বিভিন্ন হাসপাতালে দেখানো হয়। ওখানকার চিকিৎসকরা বাচ্চাকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসার পরামর্শ দেয়। এরপর গত ২৮ জানুয়ারি এখানে এলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার বাচ্চাকে ভর্তি করে নেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ওর অপারেশন করা হয়। নাম রাখা হয় আব্দুল্লাহ। আবদুল্লাহ আমাদের প্রথম সন্তান। সালাউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ডাক্তাররা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে অপারেশনও করেছে। তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আবদুল্লাকে যেন সুস্থভাবে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারি এজন্য সবার দোয়া চাই।
×