ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অলোক আচার্য

সেলফিসাইডের ঝুঁকি!

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সেলফিসাইডের ঝুঁকি!

মোবাইলে নিজের এবং আপনজনের সঙ্গে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করাটা এখন রীতিমতো যেন ফ্যাশনে দাঁড়িয়েছে। এখন যদি বহুল ব্যবহৃত শব্দের কোন তালিকা হয় তাহলে সেলফি শব্দটি খুব সম্ভবত প্রথম সারিতে থাকবে। এর জনপ্রিয়তা এতটা যে শহর থেকে পল্লী গাঁ, ছেলে থেকে বৃদ্ধ সবাই সেলফি তুলতে ব্যস্ত। হাত পা বাঁকিয়ে নিজের মুখ এদিক সেদিক করে রীতিমতো কসরত করে হাত দিয়ে অথবা সেলফি স্টিক দিয়ে সেলফি তুলি। তারপর সঙ্গে সঙ্গেই তার পেছনের ইতিহাস লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেই। বলা যায় রীতিমতো সেলফি ভাইরাসের মতো মাথার ভেতর ঢুকে গেছে। সেই ভাইরাস আরও ভাইরাস জন্ম দিচ্ছে। একসময় তা অস্থিমজ্জায় ছড়িয়ে গিয়ে নেশায় পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বে ক্রমেই এই প্রবণতা বেড়ে চলেছে। বিষয়টি যদি কেবল এই নিজের ছবি তোলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো তাহলে কোন কথা ছিল না। শেষ পর্যন্ত তা তো আর থাকছে না। কোন অবস্থাতেই সেই সেলফি তোলা থেকে এক বেলা বা একদিনও বিরত থাকতে পারি না। সেলফি তুলতে গিয়ে এতটাই নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিচ্ছি যে স্থান কাল পাত্রভেদ সব গুলিয়ে একাকার করে ফেলছি। স্টাইলিস্ট পরিচয় দিতে গিয়ে নিজেকে নিতান্তই আহাম্মক পরিচয় দিচ্ছি। এই সেলফি তুলতে গিয়ে কিন্তু বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়। বহু সেলফিপ্রিয় তরুণ তরুণীরা সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন। তারা জানতো সে কাজে ঝুঁকি আছে তার পরেও তারা সেলফি তুলতে গেছে। ফলাফল মৃত্যু। এখন যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেলফি তুলতে যান তারা শখের বশেই যান এমনটা বলা ঠিক হবে না। অনেকেই বীরত্ব দেখাতে গিয়ে সেলফি তোলেন। এবং সেই সেলফি তার মৃত্যুর কারণও হচ্ছে যাকে অনেকে সেলফিসাইড বলছেন। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেলফিসাইডের সংখ্যাও বাড়ছে। উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ের মধ্যেই এই প্রবণতা বেশি কাজ করে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৮ থেকে সেলফি তুলতে গিয়ে চলতি বছর এ পর্যন্ত সারাবিশে^ মারা গেছে প্রায় ১৫০০ জন। এছাড়া ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বিশে^ ২৫৯ জন সেলফি তুলতে গিয়ে মারা গেছে। সেলফিতে মৃত্যুর হয়েছে সবচেয়ে বেশি ভারতে। কোন কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বিষয়টিকে মাদকাসক্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন। যদিও সেলফি তুলতে আর্থিক কোন মূল্য দিতে হচ্ছে না কিন্তু জীবন তো দিতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে অতি মাত্রায় সাহসী সেলফি তোলা মৃত্যুর ঘটনাগুলো অনেক উঁচু কোন ভবন থেকে তুলতে গিয়ে ঘটেছে। বিপজ্জনক সেলফি তুলতে গিয়ে রাশিয়ায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি সেলফি তুলতে গিয়ে পাগলামিতে মারাত্মক কোন অস্ত্র নিয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। কারণ মানুষ শখের বশে মৃত্যুকে বরণ করতে চায় না। আসলে সেলফি বিষয়টা একটা প্রেষ্টিজ ইস্যুর মতো দাঁড়িয়ে গেছে। যে যত আলাদাভাবে সেলফি তুলতে পারবে তার তত বেশি লাইক পড়বে। তা সে সাপের মুখের কাছেই হোক আর কুমিরের মুখের সামনেই হোক। যত আলাদা সেলফি পোস্ট হবে তাকে তত বেশি বাহবা দেয়। কিন্তু এই বাহবা যে কেবল বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয় এবং এটার জন্য জীবনের ঝুঁকি নেওয়া যায় না তা কে বোঝাবে এদের। তাই সেলফি তুলতে গিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। বাড়ছে সেলফি তোলার নতুন নতুন উপায়। এখন পর্যন্ত চলন্ত ট্রেনের সামনে সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে, কুমিরের সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে, প্লেন থেকে সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে, সিংহের খাঁচার সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে, সাপের সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে কামড়ে মৃত্যু হয়েছে, এরকম আরও অনেক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সেলফি তুলতে গিয়ে। এগুলো কেবল ছেলেমানুষি ছাড়া আর কিছু না। পাবনা থেকে
×