ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর দুই প্রান্তে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই নারীসহ চারজন নিহত

প্রকাশিত: ০৭:৪৮, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর দুই প্রান্তে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই নারীসহ চারজন নিহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর দুই প্রান্তে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের চার আরোহীর প্রান হারিয়েছে। এদের মধ্যে মহাখালীর সেতুভবনের সামনে যানবাহনের ধাক্কায় স্কুটিতে থাকা দুই নারী নিহত হয়েছে। এছাড়া ডেমরার কোনাপাড়ায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ঘাতক গাড়ি শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুর্ঘটনার সম্ভাব্য স্থান ও আশপাশ এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে মহাখালী সেতুভবনের সামনে সড়ক দূঘর্টনায় দুলদানা আক্তার কচি ওরফে সৈয়দা কচি (৩৮) ও সোনিয়া আমিন (৩২) নামে দুই নারী নিহত হয়েছে। স্কুটি নিয়ে (ঢাকা মেট্রো হ ২৪-৪২৮৩) ওই দুই নারী মহাখালী এলাকার সেতু ভবনের সামনে দুর্ঘটনার শিকার হন। তাদের স্কুটিতে প্রেস লেখা ছিল। স্কুটির পাশের তাদের মরদেহ পড়েছিল ছিল অনেকক্ষন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষনা করেন। প্রথমে অজ্ঞাত হিসেবে তাদের লাশ মর্গে রাখা হয়। বনানী থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা মোঃ আফজাল জানান, খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেতু ভবনের সামনে যায় পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সেতু ভবনের সামনে স্কুটি চালিয়ে যাওয়ার সময় কোনো এক যানবাহনের ধাক্কায় স্কুটারে থাকা দুই নারী ছিটকে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলে তাদের মৃত্যু হয়। নিহত সৈয়দ কচির বাবার নাম মৃত সৈয়দ ফজলুল হক। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর পৌরসভার পাচুলিয়ার বাজিতপুর এলাকায়। আর নিহত সোনিয়ার বাবার নাম নূরুল আমিন। গ্রামের বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার মাকবেদুরিয়া গ্রামে। নিহত কচির মামা এ্যাডভোকেট নূরুল আমিন ভূঁইয়া জানান, কচি মিরপুর-১ নম্বর এলাকায় থাকেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে তার গ্রামের বাড়ি থেকে ফেসবুকে কচির নিউজ ও ছবি দেখে একজন তাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান। এরপর বুধবার ভোরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে এসে কচির মরদেহ শনাক্ত করেন। নিহত কচির মামা জানান, কচি উত্তরায় পার্ল ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে আর্ন্তজাতিক মানের কসমেটিকস পণ্য বিপণন ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের টেরিটরি অফিসার হিসেবে চাকরি করতেন। বাণিজ্যমেলায়ও তাদের স্টল ছিল। আট বছর ধরে তিনি এই চাকরি করছেন। এ্যাডভোকেট নূরুল আমিন জানান, কচি অবিবাহিতা। দুই বোনের মধ্যে কচি ছোট। বড় বোনের নাম চুমকি। তারা দুইবোন কল্যাণপুরের একটি বাসায় এক রুমে ভাড়া থাকতেন। নিজের স্কুটি দিয়েই চলাফেরা করতেন কচি। তিনি জানান, নিহত অপরজন সোনিয়া তার বান্ধবী। তিনিও চাকরিজীবী। থাকতেন শাহআলী থানার পাশে ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। দীর্ঘদিন কচি আর সোনিয়া এক সঙ্গেই ভাড়া থেকেছেন। কচিদের গ্রামের বাড়িতেও গিয়েছিলেন সোনিয়া। তিনি জানান, কচি সকাল ৯টায় বাসা থেকে বের হয়ে অফিসে যেতেন। আবার রাত ১১টার আগেই বাসায় ফিরতেন। তবে মঙ্গলবার এত রাতে কোথায় যাচ্ছিলেন তারা, তা তিনি জানেন না। আর এত জনবহুল এলাকায় দ্’মেয়ের মরদেহ পড়েছিল। কেউ কিছু বলতে পারছে না। বিষয়টা আমরা বুঝতে পারছি না। সেখানে আশ-পাশে অনেক সিসিটিভি ক্যামেরারও থাকার কথা। কিন্তু পুলিশও কিছু বলতে পারছে না কোনো গাড়ি ধাক্কা দিয়েছে কিনা। তবে তাদের মৃত্যুর ঘটনাটি সন্দেহজনক। তাদের হত্যাকারীর বিচার দাবী করেন এ্যাডভোকেট নূরুল আমিন। বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আজম মিয়া জানান, এটি একটি সড়ক দুর্ঘটনা। এটা প্রাথমিকভাবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, অজ্ঞাত কোনো গাড়ির ধাক্কায় ওই দুই নারীর মৃত হয়েছে। কোনো গাড়ি এ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি বের করতে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে ডেমরার কোনাপাড়া বাশেরপুল এলাকায় মটরসাইকেল নিয়ন্ত্রন হারিয়ে কিবরিয়া সাদিম (১৯) ও ওমর ফারুক ঐশিক (১৯) নামে দুই কলেজ শিক্ষার্থী মৃত্যু হয়েছে। তারা ডেমরার রোকেয়া আহসান কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষে ছিলেন। তারা বন্ধু ছিলেন। ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাতে কোনাপাড়া বাঁেশর পুল এলাকার মোটরসাইকেল দ্রুত গতিতে চালিয়ে যাওয়ারর সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওয়াসার দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মটরসাইকেলটি উল্টে যায়। এতে মটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে ওই দুই কিশোর গুরুতর আহত হয়। পরে তাদেরকে রাত দেড়টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনা হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক সাদিমকে মৃত ঘোষণা করেন। আর বুধবার ভোর ৪টার চিকিৎসাধীন অবস্থায় কৌশিকের মৃত্যু হয়। ওসি জানান, নিহত দু’জনের পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় দরখাস্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে তাদের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত ঐশিকের বাবা জাহাঙ্গীর আলম জানান, মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তার ছেলেসহ তার বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত কিবরিয়া সাদিমের বন্ধু মোঃ হৃদয় জানান, মোটরসাইকেলটি নিহত সাদিমের ছিল। রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে দুই বন্ধু ডেমরা স্টাফ কোয়াটার থেকে বাসায় আসতেছিলো।
×