ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অন্য পুরুষের সঙ্গে অনৈতিক কাজে বাধ্য করায় স্বামীকে খুন

প্রকাশিত: ১২:৪৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

অন্য পুরুষের সঙ্গে অনৈতিক কাজে বাধ্য করায় স্বামীকে খুন

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরের শ্রীপুরে এক ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যার পর এসিড দিয়ে ঝলসানোর ঘটনায় নিহতের চতুর্থ স্ত্রী ও শ^শুরকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১’র সদস্যরা। অন্য পুরুষের সঙ্গে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার জেরে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ নিতে ওই ব্যবসায়ীকে খুন করা হয়েছে বলে গ্রেফতারকৃত স্ত্রী স্বীকার করেছে। মঙ্গলবার র‌্যাব-১’র স্পেশালাইজ কোম্পানি পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন এ তথ্য জানিয়েছেন। আটককৃতরা হলো- শ্রীপুর উপজেলার চকপাড়া এলাকার নিহত আব্দুর রহমানের (৪৫) চতুর্থ স্ত্রী সামিরা আক্তার (২৬) ও সামিরার বাবা বরিশাল জেলার উজিরপুর এলাকার মৃত ফজলুল হকের ছেলে মোঃ আলী হোসেন (৫৫)। র‌্যাব-১’র কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিম খ- (প্রশিকা মোড়) এলাকার মজনু মিয়ার তিন তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার ভাড়া বাসায় জমি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান তার চতুর্থ স্ত্রী সামিরা আক্তার ও শাশুড়ি মালতি বেগমকে সঙ্গে নিয়ে বসবাস করে আসছিল। পচা দুর্গন্ধের সূত্রধরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তালাবদ্ধ ওই বাসা থেকে আব্দুর রহমানের গলাকাটা ও ঝলসানো অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশটি চটের বস্তায় ভর্তি করে বিছানার চাঁদর ও তোশক মুড়িয়ে রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে ছিল। ঘটনার পর থেকে সামিরা ও তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক থাকে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান (কোটবাড়ি) এলাকার চাচার বাসা থেকে র‌্যাব-১’র সদস্যরা ওই হত্যা মামলার আসামি সামিরা আক্তারকে গ্রেফতার করে। এ সময় পলায়নে সহায়তা করায় সামিরার বাবা আলী হোসেনকেও গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব’র প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত সামিরা উক্ত খুনের ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং ঘটনার মর্মান্তিক বর্ণনা দেয়। গ্রেফতারকৃত আসামি সামিরা আক্তার র‌্যাব’র জিজ্ঞাসাবাদে মর্মান্তিক এ হত্যাকা-ের বর্ণনা দিয়ে জানান, গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে আব্দুর রহমান তার স্ত্রী সামিরাকে ব্যবসায়িক পার্টনার রতন মিয়ার সঙ্গে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌন কাজে লিপ্ত করে। পরে রতন রাত ১১টায় বাসা থেকে চলে যায়। এ ঘটনায় স্বামীর ওপর ক্ষুব্ধ হয় সামিরা। এর জের ধরে ভোর রাত ৩টার দিকে ঘুমিয়ে থাকা লম্পট স্বামী আব্দুর রহমানকে ধারালো দা দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে তার স্ত্রী সামিরা। হত্যা নিশ্চিত হওয়ার পর লাশ বিকৃত করার জন্য এসিড দিয়ে নিহতের মুখ ঝলসে দেয়। পরে নিহতের লাশ চটের বস্তায় ভরে বিছানার চাঁদর ও তোশক দিয়ে পেঁচিয়ে রাখে। ঘটনার পর লাশ সরিয়ে ফেরার জন্য সামিরা তিনদিন ওই বাসায় অবস্থান করে। লাশ সরাতে ব্যর্থ হয়ে মা-বাবার সহযোগিতায় সামিরা বাসা থেকে পালিয়ে যায়। সামিরা সেখান থেকে পালিয়ে পাশর্^বর্তী কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের এক বান্ধবীর বাসায় দুইদিন আত্মগোপন করে থাকে। পরে সেখান থেকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নওগাঁ জেলায় মামার বাসায় গিয়ে আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করতে থাকে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) মামার বাসা থেকে ঢাকার দক্ষিণখান (কোটবাড়ি) এলাকার তার চাচার বাসায় এসে আত্মগোপন করে থাকে সামিরা। সোমবার রাতে এ বাসা থেকে র‌্যাব সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে। সামিরা আরও জানায়, টঙ্গীতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করত আব্দুর রহমান। সামিরা ২০১৬ সালে টঙ্গী সরকারী কলেজ থেকে ডিগ্রী পরীক্ষার্থী ছিল এবং তার সঙ্গে পূর্ব পরিচিত ছিল। সেই সুবাদে ভিকটিম আব্দুর রহমানের টঙ্গীর বাসায় থেকে সামিরা ডিগ্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এ সুযোগে ভিকটিম তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে কৌশলে আব্দুর রহমান তার টঙ্গীর বাসায় সামিরাকে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়। এতে অচেতন হয়ে পরলে সামিরাকে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও ধারণ করে আব্দুর রহমান। পরবর্তীতে হত্যা এবং ধর্ষণের ওই ভিডিওচিত্র প্রকাশের ভয় দেখিয়ে আব্দুর রহমান দিনের পর দিন সামিরাকে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে ধর্ষণের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় সামিরাকে তার প্রথম স্বামী ডিভোর্স দেয়। এরপর থেকে সামিরা শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকায় একটি ওষুধের দোকান পরিচালনা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। গত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সামিরাকে ভিকটিম আব্দুর রহমান বিয়ে করে। বিয়ের পর তারা শ্রীপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করে। বিয়ের পর থেকে আব্দুর রহমান ব্যবসায়িক স্বার্থে আবার কখনও বিপুল টাকার বিনিময়ে তার ব্যবসায়িক পার্টনারদের সঙ্গে স্ত্রী সামিরাকে যৌন কাজে বাধ্য করত। ঘটনার দিন পর্যন্ত (১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০) এ ঘরনের অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হয়। সামিরা এসব নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে স্বামী আব্দুর রহমানের কাছ ডিভোর্স চায়। কিন্তু আব্দুর রহমান এতে রাজি না হয়ে স্ত্রী সামিরাসহ তার মা-বাবা ও ভাইকে খুন করার হুমকি দেয়। এতে স্বামীর ওপর ক্ষুব্ধ হয় সামিরা। এর জেরে স্বামী আব্দুর রহমানের ওপর প্রতিশোধ নিতে তাকে খুন করতে বাধ্য হয় স্ত্রী সামিরা।
×