ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পাপিয়ার আরও দুটি জলসা ঘরের খোঁজ পেয়েছে র‌্যাব

প্রকাশিত: ১১:১৭, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পাপিয়ার আরও দুটি জলসা ঘরের খোঁজ পেয়েছে র‌্যাব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহিষ্কৃত যুবলীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া পিউয়ের উত্থান ছিল বিস্ময়কর। মাত্র পাঁচ বছরে তিনি ও তার স্বামী কোটি কোটি টাকার মালিক ও বিপুল ধন সম্পদ করায়ত্ত করেন। এদিকে রাজধানীর ওয়েস্টিন ছাড়াও আরও দুটো জলসা ঘরের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। বিমানবন্দর থানায় রিমান্ডে থাকার প্রথম দিনে জিজ্ঞাসাবাদে অন্য কারো বিষয়ে তেমন কোন তথ্য না দিলেও নিজে কিভাবে দ্রুততম সময়ে বিপুল ধন সম্পদের মালিক হয়েছেন সে সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। এ ছাড়া কিভাবে প্রতারণা করে বিপুলসংখ্যক লোককে সর্বস্বান্ত করেছেন তারও ফিরিস্তি পেয়েছে বিমানবন্দর পুলিশ। এয়ারপোর্ট থানার ওসি ফরমান আলী বলেন, পাপিয়া অনেক লোকের সর্বনাশ করেছে। মঙ্গলবার বিমানবন্দর থানায় বেশ কজন ভিকটিম হাজির হয়ে থানা পুলিশের কাছে পাপিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এ সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন ওসি ফরমান আলী। আলোচিত এই দম্পতির আকস্মিক উত্থানের কাহিনী শুনে বিস্মিত নরসিংদীবাসী। বিশেষ করে পাপিয়ার স্বজনরাও এখন অবাক বনে যান তার ধন সম্পদের ফিরিস্তি দেখে। নরসিংদীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়- পাপিয়া একেবারেই নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের এক কন্যা। বছর পাঁচেক আগেও তার কিংবা স্বামীর তেমন কিছুই ছিল না। গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ও রংমহল-সবই তার আয়ত্তে আসে। শহরে নামকাওয়াস্তে একটা গ্যারেজ ছিল তাদের। এটাকে সামনে রেখে পাপিয়া নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয়ে বৈধতা দিতেন দ্রুত অর্জিত ধন সম্পদের। দেশে গাড়ির ব্যবসার পাশাপাশি বিদেশে গড়ে তোলেন বার। এটাকে পুঁজি করেই ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের ব্ল্যাকমেইল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও দেহ ব্যবসাই তাদের মূল পেশা। জানা গেছে- শহরের বাগদী এলাকায় পেট্রোবাংলার অবসরপ্রাপ্ত গাড়িচালক সাইফুল বারীর মেয়ে। বর্তমানে তার বাবার নিজ এলাকায় একটি অটোর গ্যারেজ রয়েছে। সেখানে কয়েকটি অটো গাড়ি ভাড়া দিয়ে চলে তাদের সংসার। সম্প্রতি পাপিয়া দোতলাবিশিষ্ট আধুনিক একটি বাড়ি করেছেন। তার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন গানের শিক্ষক মতিউর রহমান চৌধুরীর বড় ছেলে। মতিউর রহমান স্থানীয় নজরুল একাডেমির অধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন। একসময় সুমনেরও তেমন কিছু ছিল না। আধাপাকা টিনশেড ঘরেই কেটেছে তার শৈশব। এসএসসির গণ্ডি পার হওয়ার পর থেকেই তার অপকমের সূত্রপাত। ২০০০ সালের দিকে নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমনের উত্থান শুরু। শৈশব থেকেই চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্ল্যাকমেইল ছিল সুমনের প্রধান পেশা। দূরদর্শী, চতুর ও মাস্টারমাইন্ড সুমন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। ২০০১ সালে পৌরসভার কমিশনার মানিক মিয়াকে যাত্রা প্যান্ডেলে গিয়ে হত্যার পর তিনি আলোচনায় আসেন। এরই মধ্যে পাপিয়া চৌধুরীকে বিয়ে করেন সুমন। এরপর তার স্ত্রী পাপিয়াকে রাজনীতিতে কাজে লাগান। সে সময় প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের পর দুর্বৃত্তায়ন রোধে বর্তমান মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল সন্ত্রাসী সুমন ও তার স্ত্রী পাপিয়া চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে আসতে নিষেধ করেন। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের বিভাজনকে কেন্দ্র করে পাপিয়া চৌধুরী ও তার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন সদর আসনের এমপির বলয়ে যোগ দেন। পাশাপাশি তাদের সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। ওই এমপির সঙ্গে তার গাড়ির ব্যবসা আছে বলে সে বলে বেড়াতো। এরই মধ্যে পাপিয়া ও সুমনের অস্বাভাবিক উত্থান হয়। ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর জেলা যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে তৌহিদা সরকার রনা সভাপতি ও পাপিয়া চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরু হয় অস্বাভাবিক উত্থান। এ সবই করেছেন রাজধানী ঢাকায় বসে। মাঝে মধ্যেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের মিটিং মিছিলে যোগ দেন দলবল নিয়ে। র‌্যাব জানিয়েছে- সুমন শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও তার স্ত্রী পাপিয়া যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় এলাকায় তাদের বিশাল কর্মী বাহিনী রয়েছে। বিশাল শোডাউন আর শত শত লোকজন নিয়ে আওয়ামী লীগের মিছিল ও জনসভায় যোগ দেন। নরসিংদী কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও জেলা ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী যারা তার অনুসারী, তারা ‘কিউ এ্যান্ড সি’ ট্যাটু ব্যবহার করেন। মাঝে মধ্যেই তারা বিশাল শোডাউন দেন আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে। এদিকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পাপিয়ার অবৈধ উপার্জনের উৎসের সন্ধানে তৎপর হয়েছে। তার বিষয়ে এলাকাবাসী মুখ খুলতে শুরু করেছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসী জানায়- নরসিংদী শহরের বাগদী মারকাজ মসজিদ এলাকায় দোতলাবিশিষ্ট বাড়ি রয়েছে পাপিয়ার। সম্প্রতি পৌর শহরের ব্রাহ্মন্দী এলাকায় তার স্বামী মতি সুমন বিলাশবহুল ছয়তলা বাড়ি করেছেন। বিলাদী মোড়ে প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ এবং আরেকটি ৬ শতাংশের দুটি প্লট রয়েছে। তার শ্বশুরবাড়ি ব্রাহ্মন্দীতে স্বামীর দোতলা একটি বাড়ি আছে। নরসিংদী শহরে পাঁচটি মোটরসাইকেল রয়েছে বলে জানা গেছে। মোটরসাইকেলগুলো তার অনুসারীরা ব্যবহার করেন।
×