ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

৭ মার্চ জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস ঘোষণার নির্দেশ হাইকোর্টের

প্রকাশিত: ১১:১৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

৭ মার্চ জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস ঘোষণার নির্দেশ হাইকোর্টের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে দিনটিতে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন সেই ৭ মার্চকে জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস ঘোষণা করে এক মাসের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি এ এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ প্রদান করেছেন। এছাড়া এই মুজিববর্ষের মধ্যেই সব জেলা-উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ড. বশির আহম্মেদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদ ৭ মার্চকে ঐতিহাসিক দিবস ঘোষণা ও যে মঞ্চে বঙ্গবন্ধু এ ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই মঞ্চে তার আবক্ষ ভাস্কর্য নির্মাণের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করেন। সাড়ে চার দশক আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, সেই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সাত কোটি বাঙালীকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ওইদিন ঘোষণা দেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তার ওই ভাষণের ১৮ দিন পর পাকিস্তানী বাহিনী বাঙালী নিধনে নামলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের পর আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর ওই স্থানেই ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান ও ভারত বাংলাদেশ যুগ্ম-কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার নিকট পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজী আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন। এদিকে আদালতের আদেশের বিষয়টি জানিয়েছেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। তিনি বলেন, এ আদেশের ফলে ৭ মার্চকে জাতীয় দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হলো। প্রশাসনের কাজ হবে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে একটি গেজেট নোটিফিকেশন করা, সে গেজেটের মাধ্যমে ভবিষ্যতে ৭ মার্চ রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হবে। এছাড়া মুজিববর্ষের মধ্যে প্রত্যেকটি জেলা এবং উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, ম্যুরাল নির্মাণের জন্য আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা এবং উপজেলা কমপ্লেক্সে রাষ্ট্রীয় খরচে এ ম্যুরালগুলো নির্মাণ করতে হবে। এ কাজের অগ্রগতি ৩০ দিনের মধ্যে জানাতে হবে। এছাড়া প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে ৭ মার্চের গৌরবোজ্জল ইতিহাস অন্তর্ভুক্তির জন্য একটি রুল জারি করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল জনসমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুগান্তকারী ভাষণের স্মারক হিসেবে দিনটি অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। ঐতিহাসিক ওই দিনটিকে কেন জাতীয় দিবস ঘোষণা করা হবে না ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, যেখানে সেদিন বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানে কেন তার ভাস্কর্য স্থাপন করা হবে না তা জানতে চেয়ে ২০১৭ সালের ২০ নবেম্বর রুল জারি করে হাইকোর্ট। রুলে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, অর্থ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, শিক্ষা সচিব, গণপূর্ত সচিব, সংস্কৃতি সচিবকে জবাব দিতে বলা হয়। ওইদিন বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। ২০১৭ সালের ২০ নবেম্বর রুল জারির পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ মার্চ যে মঞ্চে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই মঞ্চটি পুনর্নির্মাণে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৭ মার্চকে জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস হিসেবে কেন ঘোষণা করা হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদ ৭ মার্চকে ঐতিহাসিক দিবস ঘোষণা ও যে মঞ্চে বঙ্গবন্ধু এ ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই মঞ্চে তার আবক্ষ ভাস্কর্য নির্মাণের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করেন। আদালতের শুনানিতে বশির আহমেদ বলেন, ১৯৫টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুপ্রীমকোর্ট দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে বিভিন্ন আদেশ দিয়েছেন। এ কারণে আমি এ রিট দায়ের করেছি। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ যে স্থানে ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানে মঞ্চ নির্মাণ করতে হবে। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পরাজিত পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের দলিলে সই করে। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের ৭৭টি ঐতিহাসিক নথি ও প্রামাণ্য দলিলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ডকুমেন্টারি হেরিটেজ হিসেবে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে যুক্ত করেছে ইউনেস্কো।
×