ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

উড়ে গেল জিম্বাবুইয়ে

প্রকাশিত: ১১:১১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

উড়ে গেল জিম্বাবুইয়ে

মিথুন আশরাফ ॥ জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে মিরপুর টেস্টে তৃতীয়দিন শেষেই নিশ্চিত ভাবা যায়, ইনিংস ব্যবধানে জিততে চলেছে বাংলাদেশ। তাই হয়েছে। ইনিংস ও ১০৬ রানের ব্যবধানে জিম্বাবুইয়েকে হারিয়ে দিয়েছে টাইগাররা। মুশফিকুর রহিমের দ্বিশতক, মুমিনুল হকের শতক, নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলামের স্পিন ভেল্কিতে জিম্বাবুইয়েকে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। সাড়ে তিনদিনেই জিতে গেছে বাংলাদেশ। টেস্টে খুবই খারাপ সময় যাচ্ছিল বাংলাদেশের। গত বছর থেকে টানা ছয়টি টেস্টে হার হয়েছে। পাঁচ টেস্টেই আবার ইনিংস ব্যবধানে হার হয়েছে। এমনকি আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও হেরেছে বাংলাদেশ। টেস্টে কাহিল অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। মুমিনুল হক অধিনায়কের দায়িত্ব নেয়ার পর টানা তিন টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হার হয়েছে বাংলাদেশের। এমন অবস্থায় দেশের মাটিতে এ বছরের প্রথম ম্যাচেই জিম্বাবুইয়েকে পেয়ে আবার গর্জে উঠেছে টাইগাররা। অবশেষে টেস্টে হারের বৃত্ত থেকে বের হওয়া গেছে। সেই জয়টিও আবার দাপটের সঙ্গেই মিলেছে। ইনিংস ব্যবধানে জয় মিলেছে। ২০১৮ সালের নবেম্বরে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১৮৪ রানের ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। নিজেদের টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৮ বছর পর প্রথমবারের মতো টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে জয় মিলেছিল। এক বছর যেতেই আবার ইনিংস ব্যবধানে দ্বিতীয় জয় মিলে গেল। বাংলাদেশ সর্বশেষ টেস্ট জয়টি পেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেই। এরপর আর টেস্ট জয় মিলেনি। এবার যখন জয় মিলেছে সেই জয়টিও ইনিংস ব্যবধানে মিলেছে। টানা দুটি টেস্ট জয় মিলল ইনিংস ব্যবধানেই। এবার জিম্বাবুইয়েকে এমন হারের তিক্ত স্বাদ দিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়েকে প্রথম ইনিংসে ২৬৫ রানের বেশি করতে দেয়া হয়নি। এরপর প্রথম ইনিংসে মুশফিকের অপরাজিত ২০৩ ও মুমিনুলের ১৩২ রানে ৬ উইকেটে ৫৬০ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে আরও দুর্দশায় পড়ে। ১৮৯ রানেই গুটিয়ে যায়। তা সম্ভব হয় এক টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা নৈপুণ্য দেখানো নাঈম (৫/৮২) ও তাইজুলের (৪/৭৮) স্পিনজাদুতে। দুই স্পিনার মিলেই জিম্বাবুইয়ের ইনিংস ধসে দেন। জিম্বাবুইয়ের প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান করা আরভিন (৪৩) যদি রান আউট না হতেন তাহলে হয়তো দ্বিতীয় ইনিংসের ১০টি উইকেটই বাংলাদেশ স্পিনারদের দখলে চলে যেত। বাংলাদেশকে হারাতেই মাঠে নামব। আত্মবিশ্বাসী আমরা। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দারুণ খেলা, দুই টেস্টই পাঁচদিনে গড়ানো এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে সিলেটে বাংলাদেশকে টেস্টে হারানোই আমাদের প্রেরণা হয়ে ধরা দিচ্ছে। সাকিব আল হাসান না থাকায় জয়ের আশা করছি। আমরা বাংলাদেশের চেয়েও মানসিকভাবে শক্তিশালী। বাংলাদেশের স্পিন সম্পর্কে আমাদের ভালই ধারণা আছে। একমাত্র টেস্টটি শুরুর আগে জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটারদের কণ্ঠে এমন কথাবার্তাই শোনা গেছে। কিন্তু যে মাঠে লড়াই শুরু হয়েছে, চুপসে গেছেন জিম্বাবুইয়ানরা। স্পিনারদের দ্যুতি এমনই ছড়িয়েছে তাতে তছনছ হয়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। দুই ইনিংসে জিম্বাবুইয়ের ২০ উইকেট পড়েছে। ১৫ উইকেটই নাঈম ও তাইজুল মিলে শিকার করেছেন। প্রথম ইনিংসে নাঈম ৪টি উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেন। মোট ৯ উইকেট নেন। টেস্ট ক্রিকেটে পঞ্চম টেস্ট খেলতে নেমে ইনিংসে দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেট নেন। অভিষেক টেস্টে ৯০ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন নাঈম। এবার ১৫১ রান দিয়ে এক টেস্টে ৯ উইকেট শিকার করেন নাঈম। আর ২৯ টেস্ট খেলতে নেমে তাইজুল প্রথম ইনিংসে ২ উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট তুলে নেন। পঞ্চমবারের মতো ইনিংসে ৪ উইকেট শিকার করেন। সঙ্গে পেসার আবু জায়েদ রাহী প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেন। একটি রান আউট হয়। জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশ স্পিনাররা উড়িয়ে দেন। মানসিক শক্তি দুর্বল করে দেন। আর মুশফিক তো বোলারদের ঘাম ঝরান। এমনই অবস্থা করেন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ টাইপ অবস্থা হয় যেন জিম্বাবুইয়ে বোলারদের। মুমিনুলও জিম্বাবুইয়ে বোলারদের বোলিং কোন মানেরই যে না তা প্রমাণ করেন। জিম্বাবুইয়ানদের এত আত্মবিশ্বাসী কথাবার্তা যে এমনিতেই করা হয়েছে তা বুঝিয়ে দেন। জিম্বাবুইয়েকে কোন বিভাগেই পাত্তা দেয়নি বাংলাদেশ। দুই ইনিংস মিলিয়ে জিম্বাবুইয়ে ১৬৪ ওভার খেলে। এক ইনিংসেই বাংলাদেশ খেলে ১৫৪ ওভার। দুই ইনিংস মিলিয়ে জিম্বাবুইয়ে ৪৫৪ রান করে। বাংলাদেশ এক ইনিংসেই জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৫৬০ রান করে। প্রতিদিন তিন সেশন করে খেলা হয়। এক সেশনে ৩০ ওভার খেলা হয়। পাঁচদিনে ১৫ সেশন খেলা হয়। মিরপুর টেস্ট সাড়ে তিনদিনে শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রায় এগারো সেশনের মতো খেলা হয়। এরমধ্যে জিম্বাবুইয়ে দুই ইনিংস মিলিয়ে পৌনে ছয় সেশন খেলতে পারে। বাংলাদেশের চেয়ে এক সেশনের মতো বেশি খেলেও দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের এক ইনিংসে করা রানই টপকে যেতে পারেনি জিম্বাবুইয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে তো তৃতীয়দিনের শেষবেলায় ৫ ওভার খেলেই ২ উইকেট হারিয়ে বসেছিল জিম্বাবুইয়ে। ৯ রান করে তৃতীয়দিন শেষ করে। দিনটি শেষে ২৮৬ রানে পিছিয়ে ছিল তারা। চতুর্থদিন দুই সেশনের একটু কম খেলে আরও ১৮০ রান করে হাতে থাকা ৮ উইকেটও হারায় জিম্বাবুইয়ে। নাঈম, তাইজুলের ঘূর্ণি বোলিংয়েই কাত হয়ে যায় সফরকারী। টপাটপ উইকেট পড়তে থাকে। প্রথম সেশনেই কেভিন কাসুজা (১০), ব্রেন্ডন টেইলর (১৭), ক্রেইগ আরভিন (৪৩) সাজঘরে ফিরেন। দ্বিতীয় সেশন শেষ হওয়ার আগেই সিকান্দার রাজা (৩৭), রেগিস চাকাভা (১৮), এ্যান্সলি এনডিলোভু (৪), টিমিসেন মারুমা (৪১), চার্লটন টিসুমা (৩) আউট হয়ে যান। বড় ইনিংস এবং বড় জুটি না হলে কী আর এত বড় স্কোর অতিক্রম করে ইনিংস হার এড়ানো যাবে? কখনই না। জিম্বাবুইয়ে তা করতেও পারেনি। পঞ্চম উইকেটে আরভিন ও সিকান্দার মিলে ৬০ রানের জুটি গড়তে পারেন। তাতে জিম্বাবুইয়ে একটু বেশি সময় টিকতে পারে। শেষদিকে সপ্তম উইকেটে মারুমা ও চাকাভা মিলেও ৪৪ রানের জুটি গড়েন। তাতেও একটু এগিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু জিম্বাবুইয়ে ১০, ১৫ রান স্কোরবোর্ডে জমা করতেই নাঈম নয়তো তাইজুল উইকেট শিকার করে ফেলেন। এ দুই স্পিনারের দক্ষ বোলিংয়েই মুশফিকের দ্বিশতক ও মুমিনুলের শতকে যে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে রানের পাহাড় গড়ে, দুই ইনিংস মিলিয়ে তাই অতিক্রম করতে পারেনি জিম্বাবুইয়ে। এই জয় পেয়ে দুই দলের মধ্যকার টেস্ট জয়ের হিসেবে জিম্বাবুইয়ের সমান সাত জয় পেয়ে গেছে বাংলাদেশও। টেস্টে জয়ের হিসেবে জিম্বাবুইয়ের চেয়ে আর পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। সেই জয়টিও আবার জিম্বাবুইয়েকে প্রথমবারের মতো ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে এসেছে।
×