ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাপিয়াদের ক্ষমা নেই

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পাপিয়াদের ক্ষমা নেই

আদর্শবাদী রাজনীতির পতাকাতলে ব্যাঙের ছাতাও গজাতে পারে- তাই সতর্ক ও সাবধান থাকা চাই। মধুভা-ে মৌ-লোভীরা ভিড় করবেই। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের চারদিকে মাছির ভনভন থাকা অস্বাভাবিক নয়। অবাক করার বিষয় হলো দীর্ঘকাল চোখে ধুলো দিয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাওয়া। রাজনীতির নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার দৃষ্টান্ত এই সমাজে ভূরি ভূরি। তবে সম্রাট কিংবা পাপিয়াদের উপাখ্যান খোলাসা হয়ে পড়লে সমাজে মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয় বৈকি। আইনের শাসন সমুন্নত থাকলে অপকর্মকারীদের মুখোশ একে একে খুলে পড়তে বাধ্য। যেমন উন্মোচিত হয়েছে একজন পাপিয়ার মুখোশ। ছাত্রলীগ দিয়ে শুরু, পরে যুবলীগের নেত্রী হয়ে ওঠা। কিন্তু তলে তলে দুরভিসন্ধি এবং উচ্চাভিলাষের পরাকাষ্ঠা। নারী হওয়ায় যে সামাজিক সুবিধা মেলে, তাকে পুঁজি করে অবৈধ লজ্জাকর রুচিহীন সাম্রাজ্য বিস্তার পাপিয়াদের মতো অর্থলোভী ও নীতিহীনদের মজ্জাগত। কিন্তু শেষরক্ষা যে হয় না আইনের হাতে পাকড়াও হওয়া তারই প্রমাণ। সরকারের শুদ্ধি অভিযান যে থেমে যায়নি, তারই একটি উদাহরণ পাপিয়া পর্ব। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলই শাসকের ভূমিকায় থাকে। তবে সবার ওপরে দেশ ও দেশের মানুষ। তাই নাগরিকদের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ শাসকদলকে দলের বিধিবদ্ধ তথাকথিত সীমানা থেকে বেরুতে হয়। উত্তীর্ণ হতে হয় দলনিরপেক্ষ অবস্থানে, যেখানে থাকে না অন্ধ দলপ্রীতি ও অন্যায়কে প্রশ্রয়দানের প্রথাগত বাধ্যবাধকতা। নীতিবর্জিত অথচ রাজনৈতিক তকমা লাগানো প্রবল প্রতাপশালীদের বিরুদ্ধে চলমান অভূতপূর্ব অভিযানে একে একে বাঘা সব ‘ডন’ আটক হয়ে চলেছে। আইনের শাসনে বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক যে কোন নাগরিকের কাছেই বিষয়টি স্বস্তিকর। ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থ নয়, গোটা দেশের মানুষের জন্য যারা রাজনীতি করেন, এমন নেতানেত্রীর সংখ্যা কম হলেও স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পালনের কালে আমাদের মাতৃভূমি যে আরও একবার পরিশুদ্ধ হয়ে উঠছে অপরাধীদের পরাস্ত করে, তার দৃষ্টান্ত ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠতে শুরু করেছে। আইন অন্ধÑ সে দেখে না কে গরিব কে বিত্তবান, কে ক্ষমতাহীন আর কে মহাক্ষমতাধর। তাই অপরাধজগতের অধিবাসীদের হাতে হাতকড়া পরে। ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের ডাকসাইটে নেতারা তাদের কৃতকর্মের জন্য ফল ভোগ করবেন, এমনটা গত পঞ্চাশ বছরে একটিবারের জন্যও দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অন্যায়কারীদের আর রেহাই নেই, সে অন্যায়কারী যদি একান্ত আপনজনও হয়, এমন ন্যায্যতার দিকেই যাত্রা করেছে বাংলাদেশ। দুর্নীতিবিরোধী চলমান অভিযানের প্রেক্ষাপট দেশবাসীর জানা। প্রধানমন্ত্রীও আকারে-ইঙ্গিতে একাধিকবার সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। কিন্তু ওই যে কথায় বলে চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী! বেপরোয়াদের অবস্থা হয়েছে তাই। বর্তমান সরকার সব রকম দুর্নীতি, মাদক ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। সেটা যে কোন মূল্যে বাস্তবায়ন করতে সরকার বদ্ধপরিকর এবং দেশ ও জাতির প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। জাতির পিতা বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘুষ-দুর্নীতিকে কখনই প্রশ্রয় দেননি। তাঁর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে অনড় ও অনমনীয়। কথা নয়, কাজেও এর একাধিক প্রমাণ মিলেছে ইতোমধ্যে। জাতির প্রত্যাশা, এই অভিযান আরও জোরদার হবে এবং লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত দেশের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলার কাজে উপড়ে ফেলা হবে বিষবৃক্ষ। মুষ্টিমেয় অপরাধী দুর্নীতিবাজের জন্য দেশের অর্জন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিকে ভূলুণ্ঠিতে হতে দেয়া যাবে না কোন অবস্থাতেই।
×