ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জ্বালানি তেলের দাম কমায় লাভের আশায় বিপিসি

প্রকাশিত: ১০:১৯, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  জ্বালানি তেলের দাম কমায় লাভের আশায় বিপিসি

রশিদ মামুন ॥ নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানি তেলের দাম কমায় মুনাফার আশা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল ৫০ ডলারে নেমে এসেছে। আর পরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের তুলনায় এখন ব্যারেল প্রতি ১৫ ডলার কমেছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনা এশিয়া, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকাতে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সব থেকে বড় ধাক্কা লেগেছে চীনে। উৎপাদন এবং পরিবহনে একক ব্যবহারকারী হিসেবে সব থেকে বেশি জ্বালানি তেল ব্যবহার করে চীন। গত ডিসেম্বর থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে চীনে এক ধরনের স্থবির পরিবেশ বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ সংক্রমণ এড়াতে ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে বেশিরভাগ শিল্প কারখানা বন্ধ রেখেছে চীন। চীনের এই ধাক্কায় দৈনিক অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমেছে ৩০ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত। যা এ যাবতকালের সব থেকে কম ব্যবহার বলে মনে করা হচ্ছে। কবে চীন এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আবার স্বাভাবিক হতে পারবে সে সম্পর্কে কেউ নিশ্চিত নয়। তবে বাজারে তেলের দাম কমে আসলেও উৎপাদন কম হওয়াতে চীনা পণ্যের দর বেড়েছে। চীনে তেলের ব্যবহার কমাতে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো তেলের দাম কমাতে বাধ্য হয়েছে। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদির বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। ভবিষ্যতে যা আরও কমতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা কমে করছেন। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৫০ ডলার। তবে এটি আরও পাঁচ ডলারের মতো কমতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে বিপিসি চেয়ারম্যান মোঃ সামছুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, মাস শেষে হিসাব করা বলা যাবে কি পরিমাণ লাভ হচ্ছে। তবে এখন দাম কমে আসাতে আমরা বলতে পারি বিপিসি লাভের ধারায় ফিরতে পারে। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে পরিশোধিত তেলের ব্যারেল প্রতি দাম ৬৫ ডলার ছিল। বিপিসি সূত্র জানায়, গত ৬ জানুয়ারি বিপিসি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পরিশোধিত তেল কিনেছিল ব্যারেল প্রতি ৮০ দশমিক ৫০ ডলারে। এর দুই দিন পর ৮ জানুয়ারি ব্যারেল প্রতি দাম দেড় ডলার কমে ৭৯ ডলারে দাঁড়ায়। এরপর থেকেই ক্রমান্বয়ে দাম কমতে শুরু করে। গত সপ্তাহে বিপিসি প্রতি ব্যারেল পরিশোধিত ডিজেল কেনে ৬৫ ডলারে আর রবিবার ২৩ ফেব্রুয়ারি যার দাম ছিল ৬৪ দশমিক ৪৮০ ডলার। বিপিসির একজন কর্মকর্তা জানান, নিয়মানুযায়ী যে দিন জাহাজে তেল ভরা হবে সেই দিনের আগে ও পরের দুদিন করে মোট পাঁচ দিনের গড় তেলের দাম হিসেব করেই তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়। মাসে আট থেকে ১৪টি পর্যন্ত জাহাজ আসে। সঙ্গত কারণে জাহাজ যে যে দিন তেল লোড হবে ওই দিনের নির্ধারিত দামের উপরই লাভ লোকসান নির্ভর করে। বিপিসি সূত্র বলছে, ডিজেল সব থেকে বেশি বিক্রি হওয়া জ¦ালানি তেল। ডিজেলের লাভ লোকসানের ওপরই বিপিসির লাভ লোকসান নির্ভর করে। বিপিসি আন্তর্জাতিক বাজার দরের ওপর নির্ভর করে শুধু জেট ফুয়েল (বিমানে ব্যবহার্য) জ¦ালানির দাম নির্ধারণ করে। এছাড়া অন্য সব তেলের দাম সরকার নির্ধারণ করে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের হিসেবে লাভ করলেও আপাতত দেশের বাজারে জ¦ালানি তেলের দাম কমা বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই। বিপিসির পরিচালক অপারেশন পরিবহন মোঃ সরওয়ার আলম জনকণ্ঠকে বলেন, জানুয়ারির ৬ তারিখের হিসাব যদি আমরা ধরি তাহলে আমাদের চার কোটি ৪০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। অন্যদিকে আমরা যদি রবিবার (আজকের) হিসাব ধরি তাহলে সাত থেকে আট কোটি টাকা লাভ হবে। তিনি বলেন, জানুয়ারির শুরুতে দাম বেশি ছিল কিন্তু শেষের দিকে দাম কমে আসায় আমাদের জানুয়ারিতে কিছুটা লাভ হয়েছিল।
×