ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাদিয়া সারতাজ

মধ্যবিত্ত গৃহিণীদের মধ্যে স্থূলতা প্রকট কেন

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মধ্যবিত্ত গৃহিণীদের মধ্যে  স্থূলতা প্রকট কেন

সমাজের তিনটি স্তর নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত। এই তিন স্তরের মাঝে মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহিণীদেরই প্রায়ই স্থূল হতে দেখা যায়। কারণগুলো আলোচনা করছি- খাবার নষ্ট হচ্ছে এই মনোভাব থেকে বাচ্চার উচ্ছিষ্ট খাদ্য গ্রহণ, ঘরে আনা বাড়তি খাবার কেউ খাচ্ছে না, ফেলে দিলে অপচয় হবে এই ভাবনা থেকে অনেক মধ্যবিত্ত গৃহিণী প্রয়োজনের অধিক খেয়ে থাকেন। অধিক সময় রান্নাঘরে কাটানোর দরুন নিজেদের ক্ষুধার্ত মনে করেন, বাস্তবে কিন্তু অধিক ঘামার কারণে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়, পানি পান না করে হাতের কাছে যা পান তাই খান এবং ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওজন বাড়াতে থাকেন। গৃহিণীদের হাতের কাছেই বিভিন্ন ধরনের খাবার থাকে যা তাদের চোখের ক্ষুধা বাড়ায়, খাদ্য গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে ওজনও বৃদ্ধি করেন। কর্মজীবী মহিলাদের কিন্তু এই সুযোগটি নেই। রান্না করার সময় খাবারটি স্বাদ দেখার জন্য অনেকেই বারে বারে অনেকটাই হয়ত খেয়ে নেন। নিজের প্রতি যত্নের অভাব। বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত গৃহিণী নিজের ব্যাপারে একদম সচেতন নন, প্রতিদিন হয়ত আয়না দেখারই সময় পান না। যার ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বর্ধিত ওজন সম্পর্কে অবগতই থাকেন না। সময় অসময়ে বিশ্রাম নেয়া। গৃহিণীদের যেহেতু ধরা বাধা কোন রুটিন থাকে না এবং বিশ্রামের জায়গাটুকু সহজলভ্যতার দরুন যখন তখন শরীরকে আরাম দিতে পারেন। বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে এসে, দুপুরে খাবারের পর অনেককেই ঘুমাতে দেখা যায়। যা থেকে অনাকাক্সিক্ষত ওজন বাড়ে। খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি জাতীয় খাবারের (দুধ এবং দুধ জাতীয়) অপর্যাপ্ততার কারণে ওজন বৃদ্ধি পায়। বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে দুধ জাতীয় খাবারগুলো প্রথমে পরিবারের বাচ্চাদের দেয়া হয়, ক্রমে বৃদ্ধ এবং পরিবারের পুরুষদের ভাগ্যে জোটে, গৃহিণীরা হয়ত বঞ্চিতই থেকে যান। সূর্য রশ্মির অপর্যাপ্ততা থেকেও ভিটামিন ডি-এর অভাব এবং ক্যালসিয়াম শোষণে ব্যাঘাত থেকেও ওজন বাড়তে থেকে। দৈনিক চাহিদা অনুযায়ী গৃহীত ক্যালসিয়াম ব্যাপক হারে ও ফ্যাটের ভাঙ্গনকে ত্বরান্বিত করে, ভিটামিন ডি শরীরে ফ্যাট জমতে দেয় না, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মূলত পেটের চর্বির সঙ্গে সম্পর্কিত। মধ্যবিত্ত গৃহিণীদের খাদ্য তালিকায় মূলত দ্রুত শক্তি প্রদান করে এমন খাবারের সমারোহ বেশি দেখা যায়, যেমনÑ ভাত, রুটি, চিনি, মুড়ি, চানাচুর, চালের পিঠা, মিষ্টি ইত্যাদি। আবার উচ্চ প্রোটিন সমন্বিত খাবার, ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, কলিজা ইত্যাদি কম গ্রহণ করে অপ্রতুলতার কারইে) নিম্নমানের প্রোটিন ডাল বেশি গ্রহণ করে, যার ৬০% শর্করা। বেশিরভাগ গৃহস্থালি ও কাজগুলো যেমন রান্না করা, বাচ্চা দেখাশোনা, আসবাবপত্র মোছা, তরিতরকারি কাটা, ঘর গোছানো ইত্যাদি যেগুলোতে শক্তি খরচ কম হয় সেগুলো গৃহিণী করে থাকেন কিন্তু সে তুলনায় ক্যালরি গ্রহণ করেন অনেক বেশি ঘার কারণে শরীরে ফ্যাট জমতে থাকে এবং অনাকাক্সিক্ষত ওজন বৃদ্ধি পায়। গৃহের কঠিন কাজ সেগুলোতে ক্যালরি ক্ষয় বেশি হয় যেমন- কাপড় ধোওয়া, ঘর ঝাড় ও মোছা, হাঁড়ি পাতিল ধোওয়া এইগুলো নিম্নবিত্তের গৃহপরিচালিকারা করে থাকেন, উপরন্তু পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব তাদের শীর্ণ করে তোলে। উচ্চ বিত্ত গৃহিণীদের মাঝে সুলতা কম দেখা যায় কারণ তাদের মাঝে সচেতনতা প্রবল, ওজন কমানের জন্য তারা বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে থাকেন এবং সঠিক খাদ্য গ্রহণে অধিক আগ্রহী হন। লেখক : পৃষ্টিবিদ এমফিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
×