ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারির কুচকাওয়াজ শেষে রাষ্ট্রপতি

সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সে আলোকেই সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ দেশ এবং দেশের বাইরে এক সম্মানজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। মাতৃভূমির অখন্ডতা রক্ষার পাশাপাশি জাতীয় যে কোন প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সদাপ্রস্তুত থাকতে হবে। রবিবার সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর আর্টিলার সেন্টারে এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট আর্টিলারির জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, উন্নত ও পেশাদার সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে একটি প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছিলেন। সেই নীতির আলোকেই সেনাবাহিনী আজ উন্নত একটি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। হালিশহর আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুল প্রাঙ্গণে ১, ২, ৩ ফিল্ড ও ৩৮ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট আর্টিলারির সদস্যদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, সম্মান ও গৌরব মূলমন্ত্রে দীক্ষিত রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময়। মহান মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত মুজিব ব্যাটারি (বর্তমানে ১ ফিল্ড রেজিমেন্ট), রওশন আরা ব্যাটারি (বর্তমানে ২ ফিল্ড রেজিমেন্ট) এবং স্বতন্ত্র রকেট ব্যাপারি (বর্তমানে ৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি) কে ফোর্সের অধীনে ফেনীর যুদ্ধ, সালদা নদীর যুদ্ধ, কসবার যুদ্ধ, নাজিরহাটের যুদ্ধ, মানদাবাগ বাজার যুদ্ধ, এস ফোর্সের অধীনে আখাউড়া সিঙ্গাইর বিলের যুদ্ধ এবং জেড ফোর্সের অধীনে বড়লেখার যুদ্ধ, আট গ্রাম ও জকিগঞ্জের যুদ্ধ, শমসের নগরের যুদ্ধ এবং কুমিল্লা এলাকায় মুক্তি বাহিনীকে ফায়ার সাপোর্ট প্রদান করে। দেশ মাতৃকার অখ-তা রক্ষার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ রেজিমেন্টের সদস্যরা দেশের অভ্যন্তরে যে কোন দুর্যোগে জনগণের সেবায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, সেনাবাহিনী তার মূল কার্যক্রমের পাশাপাশি সব সময় জাতি গঠনমূলক কর্মকা-ে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলাসহ ভোটার ডাটাবেইস তৈরি, সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান করে সেনাবাহিনী জনগণের সুনাম কুড়িয়েছে। পেশাগত দক্ষতার কারণে দীর্ঘ প্রত্যাশার পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ তদারকি, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইক সড়ক প্রকল্প, হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মাণ, মহিপাল ফ্লাইওভার নির্মাণ এবং থানছি-আলীকদম নির্মাণের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর উপর ন্যস্ত হয়। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং বৈদেশিক বিভিন্ন মিশনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের কর্তব্য নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। সৈনিকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, আবহমান কাল থেকে যুদ্ধে ময়দানে জাতীয় মর্যাদার প্রতীক ‘পতাকা’ বহন করার রীতি রয়েছে। পতাকা হলো জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌত্ব, সম্মান এবং মর্যাদার প্রতীক। তাই পতাকার মান রক্ষা করা সব সৈনিকের পবিত্র দায়িত্ব। তিনি বলেন, জাতীয় পতাকা বহনের দুর্লভ সুযোগ সকলের জীবনে আসে না। জাতীয় পতাকা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যে কোন ইউনিটের জন্য একটি বিরল সম্মান ও গৌরবের। আজ সেই স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকা আপনাদের হাতে তুলে দেয়া হলো। এ বিরল সম্মান ও গৌরব অর্জন করায় ১, ২, ৩ ফিল্ড ও ৩৮ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট আর্টিলারিকে অভিনন্দন জানান। বলেন, কর্মদক্ষতা, কঠোর অনুশীলন ও কর্তব্য নিষ্ঠার স্বীকৃতি হিসেবে যে পতাকা আজ আপনারা পেলেন তার মর্যাদা রক্ষায় যে কোন ত্যাগ স্বীকারে আপনাদের সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। জাতির পিতা আধুনিক সশস্ত্র বাহিনীর রূপকার বলে আখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, একটি আধুনিক যুগোপযোগী শক্তিশালী সেনাবাহিনী যে কোন দেশের জন্য অপরিহার্য। বর্তমান সরকার জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর সাংগঠকি কাঠামো বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি আধুনিকায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে সেনাবাহিনীতে তিনটি আর্টিলারি ব্রিগেড এবং একটি ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেড সৃষ্টি করা হয়েছে। ইউনিটসমূহকে যুদ্ধক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ফিল্ডগান অত্যাধুনিক ডিফেন্স গান, ক্ষেপণাস্ত্র, কম্বাট সিমুলেটর, বিভিন্ন ধরনের রাডার, অত্যাধুনিক লোকেটিং সরঞ্জামাদি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও চীন এবং ইউরোপীয় দেশসমূহ থেকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন গান, রাডার এবং যানবাহন রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির ইউনিটসমূহের সংযোজনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন বাহিনীর প্রতিটি সদস্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সেনা ও নৌ এবং বিমান বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
×