ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশিত: ১০:২১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

পৃথিবীর প্রতিটি দেশের মানুষের কাছে তার দেশের ভাষা অতি প্রিয় এবং মধুর। তেমনি আমাদের মাতৃভাষা বাংলা আমাদের কাছে অন্য সকল ভাষা থেকে অধিক প্রিয়। কারণ আমরা এ ভাষায় কথা বলে আনন্দ ও তৃপ্তি পাই, যা আর কোন দেশের ভাষায় সম্ভব না। তাছাড়া আমাদের মাতৃভাষা বাংলা আজ আন্তর্জাতিক ভাষার মর্যাদা লাভ করেছে। এটা আমাদের বাঙালীদের জন্য গৌরবের বিষয়। আজ আমাদের এই বাংলা ভাষায় বিশ্বের অনেক লোক কথা বলতে শিখেছে। অনেক বিদেশী আমাদের বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকে। হয়ত একদিন আমাদের এ বাংলা ভাষা ইংরেজী ভাষার মতো সারা পৃথিবীতে স্থান করে নেবে। আর তখন বাংলাদেশের মানুষ সারাবিশ্বে আনন্দে চলাফেরা করবে। বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে বাংলা ভাষায় কথা বলে তাদের অভাব-অভিযোগ জানাতে পারবে সেসব দেশের মানুষের কাছে। ২০০৯ সালের হিসাব মতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সামার ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুইস্টিকসের ভাষ্য মতে, পৃথিবীতে এখন ভাষার সংখ্যা ছয় হাজার ৯০৯টি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভাষাগুলোর মধ্যে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা অন্যরকম। ভাষার জন্য আর কোথাও জীবন দেয়নি কেউ, ভাষার দাবিতে মরণপণ সংগ্রাম আর কোথাও হয়নি। তাই আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা, প্রিয় বাংলা ভাষাকে নিয়ে আমাদের ভালবাসা ও গর্ব অনেক বেশি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সমগ্র বাঙালী জাতি ঐক্যের নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারে অনৈক্যের ওপর ঐক্য সব সময় বিজয় লাভ করে। বাঙালী ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণেই সেদিন মাতৃভাষাকে অতি সহজে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিল। বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে সেদিন অসংখ্য বাঙালী তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিল। তাদের মধ্যে রফিক, বরকত, জব্বার, সালামসহ আরও নাম না জানা অনেকে আছেন। বাঙালী জাতি আজও ভাষার জন্য আত্মদানকারীদের ভুলতে পারেনি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ভুলবেও না কোনদিন। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ এত বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আমরা ততটা যতœশীল নই। তরুণ সমাজ আজ পশ্চিমা অশ্লীল সংস্কৃতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। তাছাড়া রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে বাংলা ভাষার ব্যবহার করার কথা থাকলেও সেখানে আজ সিংহভাগ ব্যবহার করা হচ্ছে ইংরেজী ভাষা। সরকারী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং বিচারিক কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার করার কথা বললেও এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে ইংরেজী ভাষা। অবশ্য সম্প্রতি আমাদের দেশের প্রধান বিচারপতি দেশের সর্বোচ্চ আদালতেও বাংলা ভাষা ব্যবহারের কথা বলেছেন। এজন্য আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই। আমাদের দেশের ধনী ব্যক্তিরা তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাকে উপেক্ষা করে ইংরেজীকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আজও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক সাইনবোর্ড লেখা হয় ইংরেজীতে, আবার অনেক বিয়ে ও জন্মদিনের কার্ডও বাংলার পরিবর্তে ইংরেজীতে লেখা হয়। বানানের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা নিয়ম একেবারেই কম ব্যবহার হয়। যে মাতৃভাষা বাংলাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে গিয়ে এ জাতির বীর সন্তানরা তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছিল সে মাতৃভাষা বাংলার প্রতি আমাদের আরও যতœশীল হতে হবে। মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। বাংলা ভাষার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করানোর জন্য আমাদের সকলকে আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল মানুষকে বাংলা ভাষার প্রচলন ও তার ব্যবহারে একত্রে কাজ করতে হবে। লেখক : সাংবাদিক [email protected]
×