ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘রাজধানীর অনেক এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি পাওয়া গেছে’

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

‘রাজধানীর অনেক এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি পাওয়া গেছে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মশার উৎস ধ্বংস না করা গেলে শুধু লার্ভিসাইডিং করে মশা কমানো যাবে না। নাগরিকদের এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। রাজধানীর অনেক এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ১২ শতাংশ এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ১০ শতাংশ ওয়ার্ডে এইডিসের লার্ভার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি রয়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পরিচালিত বর্ষা পরবর্তী জরিপে উঠে আসা প্রতিবেদনের এই চিত্র রবিবার স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ডেঙ্গু মোকাবেলায় প্রস্তুতিমূলক মতবিনিময় সভায় তুলে ধরা হয়। জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা, রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহলীনা ফেরদৌসী, ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মোমিনুর রহমান মামুন, ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শরীফ আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বেনজির আহমদ, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রাব্বি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন । মশার লার্ভার উপস্থিতি হিসাব করা হয় ব্রুটো ইনডেক্স বা সূচকের মাধ্যমে। জরিপে প্রতি একশ প্রজনন উৎসের মধ্যে ২০টি বা তার বেশিতে যদি এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়, তাহলে সেটাকে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বলা যায়। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিএনসিসির ১২, ১৬, ২৮, ৩১ ও ১ ও ডিএসসিসির ৫, ৬, ১১, ১৭, ৩৭ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে এইডিসের ব্রুটো সূচক মিলেছে ২০ পয়েন্টের বেশি। উত্তরের শুধু ১২ নম্বর ওয়ার্ডে এই সূচক ৩০। উত্তরে ৪১ ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯টি ওয়ার্ডে এ জরিপ চালানো হয়েছে। ডিএনসিসির উত্তরা এবং ধানমন্ডির দুটি ওয়ার্ডে দুটি করে এলাকায় জরিপ হয়েছে। জরিপ করা হয়েছে এসব এলাকার ১ হাজারটি বাড়ি। কর্মশালায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগের চেয়ে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০১৮ সালে বর্ষাপরবর্তী জরিপ হয়নি। তবে সবগুলো ইনডেক্সেই ২০১৭ সালের চেয়ে এবার উপস্থিতি কম। মশার উপস্থিতি, ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা আগের বছরের তুলনায় কম পেয়েছি। ঢাকা জুরাইন এলাকায় নির্মিত ফ্লাইওভারের নিচে জমে থাকা পানি হয়ে উঠছে মশার আবাস। মশা নিয়ন্ত্রণে মশার প্রজনন উৎসে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যদি পানি জমতে দেওয়া না হয় তাহলে মশার লার্ভাই হতে পারবে না। মশার যদি উৎস ধ্বংস না করা হয়। তাহলে শুধু লার্ভিসাইডিং করে মশা কমানো যাবে না। নাগরিকদের এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। বিভিন্ন নির্মাণ এলাকায় মশার উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে নজর দিলে মশক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মনে করেন মহাপরিচালক। চলতি বছরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সচেতনতা সৃষ্টির উপর জোর দিয়ে অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নতুন কিছু নয়। তবে গত বছর অস্বাভাবিক সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর পিক মৌসুম হলেও গত বছরের অভিভজ্ঞতায় বছর জুড়েই যেন ডেঙ্গুর মৌসুম। ডেঙ্গু মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘ বছরের অভিজ্ঞতা ও প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গু মোকাবেলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করা আবশ্যক। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার কামড় ও প্রজনন সম্পর্কে সচেতন থাকলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রমে সফলতা আনতে বড় সহায়ক ভুমিকা রাখবে।
×