ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফসলি জমির মাটি ইটভাটিতে

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ফসলি জমির মাটি ইটভাটিতে

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা ॥ বরগুনার আমতলী উপজেলার ফসলি জমির উর্বর মাটি ইটভাঁটির গ্রাসে। কৃষকরা ইটভাটির মালিকদের প্রলোভনে পরে দেদারসে বিক্রি করছে ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি। এতে হুমকিতে ফসলি জমির আবাদ । কৃষিবিদরা বলেছেন, এভাবে মাটি কাটায় ফসলি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। দ্রুত মাটি কাটা বন্ধ না হলে কৃষি উৎপাদন বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পরবে। আমতলী উপজেলার আমতলী সদর, হলদিয়া, চাওড়া, কুকুয়া, গুলিশাখালী, আঠারগাছিয়া ইউনিয়নে ঝিকঝ্যাঁক এবং ড্রাম চিমনি পদ্ধতির ২০টি ইটভাটি রয়েছে। এর মধ্যে ১১ টি ঝিকঝ্যাক এবং ৯ টি ড্রাম চিমনি। এ ইটভাঁটি গুলোতে বছরে কয়েক কোটি ইট পোড়ানো হয়। ইট পোড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় মাটি ভাটির মালিকরা ফসলি জমি কেটে নিচ্ছে। আবার অনেকে ইটভাঁটিতে মাটি বিক্রির জন্য কৃষি জমি কেটে পুকুর খনন করেছে। এর ফলে হাজার হাজার একর কৃষি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। ফসলি জমির মালিকরা না বুঝে ইটভাটির মালিকদের প্রলোভনে পড়ে দেদারসে মাটি বিক্রি করছে। কৃষকরা না বুঝে ফসলি জমির এক হাজার মাটি এক হাজার টাকায় বিক্রি করছে। ইট মালিকরা ওই মাটি অবৈধ ভেকু মেশিন দিয়ে অনেক গভীর করে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক কৃষক ঘের করার নামে ভাটির মালিকদের মাটি দিয়ে দিচ্ছেন। ইট প্রস্তুত ও ভাঁটি স্থাপন নিয়ন্ত্রন আইন-২০১৩, মাটির ব্যবহার হ্রাসকরন নিয়ন্ত্রন আইনে উল্লেখ আছে, ইট প্রস্তুতের জন্য ইটভাঁটির মালিকরা কৃষি জমি, পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করিতে পারিবে না। যদি কোন ব্যক্তি ৫ এ উপধারা (১) এ বিধান লঙ্ঘণ করে ইটভাটি প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষি জমি বা পাহার বা টিলা হইতে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করিয়া ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করেন তা হলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বছরের কারাদন্ড বা অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। ইটভাটির মালিকরা এ আইনের তোয়াক্কা না করে ফসলি জমি (কৃষি) থেকে মাটি সংগ্রহ করে ইট ভাঁটির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছে। রবিবার আমতলী উপজেলার রায়বালা, ফকিরবাড়ী, বান্দ্রা, ছোট নীলগঞ্জ, খলিয়ান, ঘটখালী, কালিবাড়ী, হলদিয়া, তালুকদার বাজার, চাউলা, সোনাখালী ও বাদুরা সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে অবৈধ ট্রলি গাড়ী বোঝাই করে শ্রমিকরা দেদারসে মাটি কেটে বিভিন্ন ইট ভাটিতে নিয়ে যাচ্ছে। চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম ও শহীদুল ইসলাম বলেন, জমি কেটে ইট ভাটিতে নিয়ে যাচ্ছে। এতে ফসলি জমির অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আড়পাঙ্গাশিয়া গ্রামের গাড়ী কৃষক আবদুল আজিজ গাজী (৮০) জানান “ মোগো এলাকায় অনেক মানু হ্যাগো জমির মাটি বেইচ্ছা হালাইছে, কেউ সরল জমি কাইট্টা পুহোইর হরছে, মুই জমি’র মাডি কাইটা সর্বনাশ করুমু না”। আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটিতে নিয়ে যাচ্ছে। এতে জমির ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবী জানাই। আমতলী কৃষি অফিসের কৃষিবিধ বিধান চন্দ্র বলেন, মাটির ৬ ইঞ্চি উপরিভাগে উর্বরতার বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। এ মাটি কাটা হলে ফসলি জমি উর্বরতা হারাবে। আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিম রেজাউল করিম বলেন,কৃষি জমি’র উপরিভাগের মাটি কেটে নিলে মাটি রাসায়নিক উপাদান থাকে না। এতে যেমন জমির উর্বরতা হারাচ্ছে, তেমনি ফসল আবাদ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, ফসলি জমি কেটে নেয়া ফসল উৎপাদনের জন্য হুমকি কিন্তু জমির মালিকরা না বুঝে জমি বিক্রি করছে। ফসলি জমি রক্ষায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ইটভাটির মালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×