ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব উপলক্ষে নীলফামারীতে সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৫:০১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব উপলক্ষে নীলফামারীতে সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ পরিযায়ী চখাচখিদের ডাকে নীলফামারীর বিন্যাবতী দিঘি (নীলসাগর) মুখর। জলকেলির জলসায় তারা মাতয়ারা। কখনও জলে খেলছে-কখনো বা জল ছেড়ে উড়ছে-নামছে। পাখনার ঝাপটায় নান্দনিক ছন্দে মুখরিত করে তুলেছে এই পরিযায়ীরা বিন্যাবতী দিঘি। নীলফামারী শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে পরিযায়ী পাখীদের অভয়রন্যে এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব ২০২০। আসছে ২৬ ফেব্রুয়ারী থেকে চারদিন ব্যাপী এই উৎসবে দেশ বিদেশের শিল্পীরা অংশগ্রহন করবেন। পরিযায়ী আর দেশ বিদেশের চারুকলা শিল্পী ও প্রত্যান্ত অঞ্চলের স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে বিন্যাবতী দিঘি চত্বর হয়ে উঠবে যেন আরো মুখোরিত। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় আয়োজনরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই উৎসবকে কন্দ্রে করে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। নীলফামারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব ২০২০ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস জানালেন ‘প্রকৃতিই জীবন, সুন্দর জীবনের জন্য শিল্প’। তাই শিল্পকলা চর্চার মাধ্যমে রাজধানী বা নগরের বাহিরে প্রত্যান্ত অঞ্চলের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতেই এবার উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীর বিন্যাবতী দিঘি চত্বরে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি মনে করেন এই উৎসব নীলফামারী সহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর রুচিশীল, সংস্কৃতিমনস্ক ও মানবিক প্রজন্ম গড়ে তোলা ও কয়েক প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে পার¯পরিক মেলবন্ধন গড়ে উঠবে। যা শিল্পকে বিকেন্দ্রীকরণে রাজধানী থেকে বের হয়ে সারাদেশে শিল্পকে ছড়িয়ে দেয়াই এই আয়োজনের লক্ষ্য। এর মাধ্যমে অসুন্দরকে দূর করে সুন্দরকে ধারণে নতুন প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে। তিনি আরো জানান এই উৎসবে থাকছে আর্ট ক্যাম্প, কনটেম্প্ররারি আর্ট প্রজেক্ট, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কারুশিল্প মেলা ও লোক সংস্কৃতির বৈচির্ত্র্যময় উপস্থাপন। ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। ওই দিন বিকালে আর্ট ক্যাম্পের উদ্ধোধন করবেন প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করবেন সংসদ সদস্য সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ২৯ ফেব্রুয়ারি শিল্পী ও শিক্ষার্থীদের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী হবে। সেখানে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের শিল্পকর্ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে প্রদর্শিত হবে ২৫ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উৎসবের কিউরেটর ও ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ টুটুল, চারুকলা উৎসবের কো-কিউরেটর শিল্পী দিনার সুলতানা পুতুল, নীলফামারী জেলা সম্মিলিত সংস্কৃতিক জোটের আহবায়ক আহসান রহিম মঞ্জিল, আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসবের নীলফামারীর সদস্য সচিব ওয়াদুদ রহমান, জেলা রবীন্দ্র সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাসেল আমিন স্বপন ও সংস্কৃতিকর্মী মোঃ সেলিম প্রমুখ। হারুন-অর-রশীদ টুটুল বলেন, শিল্পের একটি জাদু রয়েছে। শিল্পচর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ইতিবাচক কাজের দিকে ধাবিত হবে, এটিই আমাদের উদ্দেশ্য। এ উৎসবের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের শিল্পী বানানো নয়, বরং পরবর্তী প্রজন্ম যেন শিল্পমনা হয়-এটিই মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, সারাদেশ থেকে আমরা শিল্পীদের এখানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তাদের মধ্যে বরেণ্য ও বয়োজ্যেষ্ঠ শিল্পীরাও রয়েছেন। তাদের মতো এত বড় মাপের শিল্পীদের একসঙ্গে এক আয়োজনে নিয়ে যাওয়া অনেক বিরল একটা ঘটনা। আমরা মনে করি যে শুধু ছবি আঁকাটাই শিল্পীদের জীবনের একমাত্র অংশ নয়, প্রতিটি মুহূর্তই আসলে শিল্প ও সংস্কৃতির সঙ্গে বাঁচা উচিত। স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ বলেন, এই পুরো আয়োজনটি তারই সহযোগিতায় আমরা করছি। আমরা আমাদের শৈল্পিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে নীলফামারীর জনগণ তথা অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের মনের গভীরে প্রকৃতি ও শিল্পের প্রতি প্রগাঢ় ভালবাসা জন্মানোর মধ্য দিয়ে সুন্দর পরিবেশের পক্ষে দাঁড়াতে চাই। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় এই উৎসবে দেশের ১৪০ জন ও যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, রুমানিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, জার্মানি, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ১৫ জন স্বনামধন্য শিল্পী উৎসব অলংকৃত করবেন। তাদের সান্নিধ্য ও সহযোগিতায় নীলফামারী জেলার ২০ বিদ্যালয়ের দুইশতাধিক শিক্ষার্থী টানা চার দিন শিল্পকর্ম নির্মাণের সুযোগ পাবেন। উৎসবে শিক্ষার্থীদের শিল্পকর্ম নির্মাণের বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী সরবরাহ করা হবে।
×