ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্থনীতি এখন রাজনৈতিক সমস্যা ॥ সিপিডি

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

অর্থনীতি এখন রাজনৈতিক সমস্যা ॥ সিপিডি

অনলাইন রিপোর্টার ॥ গুটিকয়েক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কাছে পুরো ব্যাংক খাত জিম্মি অভিযোগ করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক সমস্যা এখন রাজনৈতিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সিপিডি বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করছে না। ব্যাংক খাতের ওপর আস্থা, স্বচ্ছতা ও বিশ্বস্ততার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ কারণে ব্যাংক কমিশন করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এ কমিশনের সফলতার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের আলোকিত সমর্থন থাকতে হবে। তা না হলে ব্যাংক খাতের কার্যকর পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না। শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘ব্যাংক কমিশন’ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও মোস্তাফিজুর রহমান বক্তব্য রাখেন। দেবপ্রিয় বলেন, এ মুহূর্তে ব্যাংক খাত নিয়ে আস্থার সঙ্কট আছে। একটা স্বচ্ছতার সঙ্কট আছে। অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততার সঙ্কট আছে। আস্থার সঙ্কট, স্বচ্ছতার সঙ্কট, বিশ্বস্ততার সঙ্কট কাটিয়ে উঠে এ কমিশনকে (ব্যাংকিং কমিশন) কাজ করতে হবে। অর্থনীতির এ বিশ্লেষক বলেন, ‘এর জন্য সর্বোপরি প্রয়োজন পড়বে রাজনৈতিক নেতৃত্বের আলোকিত সমর্থন। ওনারা (রাজনৈতিক নেতৃত্ব) যদি এ কমিশনের ওপর একটি এনলাইটেন সাপোর্ট (আলোকিত সমর্থন) না দেন, তাহলে এ কমিশন শুধু একটি কমিশনই থেকে যাবে। ব্যাংক খাতের কার্যকর পরিবর্তনের সুযোগ হয়তো আসবে না।’ তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক সমস্যা এক সময় রাজনৈতিক অর্থনীতি সমস্যায় উপনীত হয়েছিল। রাজনৈতিক অর্থনীতি সমস্যা এখন রাজনৈতিক সমস্যা হয়ে গেছে। সুতরাং এখানে রাজনৈতিক সমর্থন বাদ দিয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা প্রয়োগ করার সুযোগ যে সীমিত তা প্রমাণ পায় নতুন ব্যাংক দেয়ার মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন ব্যাংক হবে না, তারপরও নতুন তিনটি ব্যাংক হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নাগরিকরা অসহায় আতঙ্ক নিয়ে একটা ভয়ঙ্কর ভঙ্গুর পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছি। এটা শুধু মন্দা ঋণের বিষয় নয়। মন্দা ঋণ অব্যাহত রয়েছে, শত প্রতিশ্রুতি ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার পরও। এর নিচে লুকিয়ে রয়েছে পুঁজির ঘাটতি, সঞ্চিতির ঘাটতি, বাণিজ্যিক লাভের ঘাটতি। এখন ব্যাংকে মানুষের টাকা রাখার পরিমাণ কমে গেছে।’ সিপিডি ফেলো বলেন, ‘সব থেকে বেশি বিচলিত করছে কেন্দ্রীয়ভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে সব সুবিবেচিত নীতিমালা দেয়া হয়েছে তার প্রকাশ্য বরখেলাপ। বরখেলাপগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেআইনি কার্যকলাপে উপনীত হচ্ছে। ফলে দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানকে এখানে যুক্ত হতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, আমরা দেখছি গুটিকয়েক ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কাছে এখন পুরো ব্যাংক খাত জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি যখন ক্রমান্বয়ে বিকাশ লাভ করছিল, সে রকম একটি পরিস্থিতিতে ২০১২ সালে হল-মার্কের কেলেঙ্কারি উদঘাটিত হয়, তখন থেকে আমরা ব্যাংকিং কমিশনের বিষয়ে বলে আসছি। এখন যেহেতু এটা কিছুটা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে আমরা অত্যন্ত প্রিত, খুশি এবং সম্পূর্ণ সাফল্য কামনা করছি। দেবপ্রিয় বলেন, এ ব্যাংক কমিশন গঠন করতে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায় থেকে আশীর্বাদ ও সম্মতি এসেছে। এ জন্য আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত। আমরা মনে করি, এটা অত্যন্ত বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। এ কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে, তথ্যনির্ভর ও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে কাজ করতে পারে; তার জন্য তাদের পরিবেশ, ক্ষমতা ও সুযোগ দিতে হবে। কমিশনকে জরুরি বিষয়ে দ্রুত সমাধানের জন্য অন্তর্বতীকালীন প্রতিবেদন দিতে হবে। এগুলো আগামী বাজেটের আগেই দিতে হবে। ব্যাংক কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, স্বচ্ছ, সম্মুখ, তথ্যনির্ভর এবং পূর্ণভাবে একটি মাপকাঠি নির্মাণ করা দরকার বংলাদেশের ব্যাংক খাতে। সেই সঙ্গে প্রকাশিত ও উদঘাটিত পরিস্থিতি জাতীয় অর্থনীতির জন্য কী ধরনের অভিঘাত রাখছে এবং এ পরিস্থিতির তাৎপর্য কী তা বিশ্লেষণ করে কমিশনকে বলতে হবে। একই সঙ্গে বিরাজমান পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার থেকে ইতোমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে তাদের মতামত দিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কমিশনকে সমস্যার গভীরে যেতে হবে। আমরা দেখতে চাই কমিশনে কাদের ডাকা হবে, তাদের কাজ করার ক্ষেত্রে কী ধরনের ক্ষমতা দেয়া হবে। ব্যাংক খাতের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদের সমস্যা আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে দুর্বল করে দিচ্ছি। এই যে গভীরতর যেসব সমস্যা তার সমাধান যদি করতে না পারে তাহলে তা কাজে আসবে না। এ জন্য সরকারের আলোকিত সমর্থনের পাশাপাশি আলোকিত স্বার্থপরতাও থাকতে হবে, তা না হলে অর্জনগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংক কমিশনের কার্যপরিধির তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক কমিশন সাময়িক। এ কমিশন তিন-চার মাসের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করবে। কমিশনের কার্যপরিধি খুবই সুনির্দিষ্ট হবে। তিনি বলেন, এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকের গ্রাহক এবং অর্থনীতির জন্য ব্যাংক খাত কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তা নিরূপণ করা, তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, ব্যাংক খাতের সমস্যা কী এবং সামনের দিনে চ্যালেঞ্জগুলো কী হতে পারে তা চিহ্নিত করা, ব্যাংকিং খাতের সমস্যার জন্য কারা ও কোন কোন গোষ্ঠীর দায় তা চিহ্নিত করা এবং স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে ব্যাংক খাতের সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কী ধরনের প্রশাসনিক ও আইনগত পদক্ষেপ প্রয়োজন সেগুলোর সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন প্রকাশ করা।
×