ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার গোয়েন্দারা তাকে ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছেন

ছয় বছরেও গ্রেফতার হয়নি জেএমবির নয়া আমির সালেহীন

প্রকাশিত: ১০:২৪, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 ছয় বছরেও গ্রেফতার হয়নি জেএমবির নয়া আমির সালেহীন

শংকর কুমার দে ॥ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নতুন আমির ঘোষণা করেছে। এই নতুন আমির হচ্ছেন সালাউদ্দিন আহম্মেদ ওরফে সালেহীন। বাংলাদেশ ভারত দুদেশেই মোস্টওয়ান্টেড জেএমবির নতুন আমির। সে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি ও ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষিত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আত্মগোপন করে আছ। সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তরুণদের নিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। সীমান্তবর্তী এলাকা মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমে নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এসব তরুণকে। এরপর তাদের জঙ্গী প্রশিক্ষণ দিয়ে সীমান্ত পার করে পাঠাচ্ছে বাংলাদেশে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর নতুন নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে জেএমবি। ভারত থেকে ফিরে এসে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলায় ফের নতুন করে গোপনে প্রশিক্ষণ শুরু করারও খবর পেয়েছেন গোয়েন্দারা। দেশের পাঁচটি আস্তানায় অন্তত দশ তরুণ প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ করছে। এক উর্ধতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ভারতে পলাতক জঙ্গী ডাকাতি করে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে। নতুন প্রশিক্ষণের জন্য জঙ্গীদের তাত্ত্বিক বিষয়গুলোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিস্ফোরক, হ্যান্ডগ্রেনেড বা এসিড বোমা তৈরি বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন শিবিরের নেতা ছিলেন সালাউদ্দিন। তার নেতৃত্বে যে দশ জঙ্গীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থা। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএকে উদ্বৃত করে ঢাকার এক উর্ধতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সালেহীন সীমান্তবর্তী কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়ার গ্রামে লুকিয়ে থাকছে। বাংলাভাষী শ্রমিকদের মধ্যে জেএমবির নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দিতে সে তামিলনাড়ু কর্নাটক ও কেরালায় গিয়েছিল। সালাউদ্দিন কোচবিহারের গীতলদহ গ্রামে ধর্মীয় শিক্ষক মোজাব চেষ্টা করেছিল। ওই গ্রামে অভিযান চালায় পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পৌঁছানোর একদিন আগেই সে পালিয়ে যায়। সে মুর্শিদাবাদের মুকিমনগর গ্রামের একটি বাড়িতেও কিছুদিন লুকিয়েছিল। সেখানে অভিযান চালিয়ে একটি স্লিপ উদ্ধার করে এনআইএ। প্রায় এক সপ্তাহ আগে কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধায় অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান মেলেনি। সেখান থেকে এনআইএ তার এক সহযোগীকে গ্রেফতার করে। ওই সহযোগীর নাম জাহিদুল ইসলাম। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী সালাউদ্দিন সম্পর্কে খবর পায় এনআইএ। জাহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে এনআইন। ঢাকার এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, জেএমবি, হুজির মতো জঙ্গী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার ওপারে বন্দরের অধিবাসী। পরিবারের সদস্যরা তাকে ডাকত বলে সোহেল। ’৯৭ সালে বাড়ির পাশের বন্দর বিএম ইউনিয়ন স্কুল থেকে মানবিক বিভাগে কৃষি বিষয়ে লেটার মার্কসহ ৬৬৩ নম্বর নিয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয় সে। লেখাপড়ায় মেধাবী হওয়ায় তাকে ভর্তি করানো হয় ঢাকার তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সিভিল বিভাগে। ২০০৬ সালের ২৬ এপ্রিল র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর সালাউদ্দিন জানায়, ’৯৯ সালে সানির সঙ্গে পরিচয় হয় তার। তখন সানি তাকে জেএমবি শায়খ আবদুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। শায়খ রহমানের সংস্পর্শ পেয়ে ক্রমশ দুর্র্ধর্ষ হয়ে ওঠে সালেহীন। পলাতক জেএমবি প্রধান ভয়ঙ্কর জঙ্গী সালাউদ্দিনকে নিয়ে আতঙ্কিত স্থানীয়রা। ’১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে সালাউদ্দিন জেএমবির তিন শীর্ষস্থানীয় জঙ্গীকে (অপর দুজন বোমা মিজান ও হাফেজ মাহমুদ) ছিনিয়ে নেয়।
×