ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আপীল বিভাগের নির্দেশ

গ্রামীণফোনকে সোমবারের মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা দিতে হবে

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 গ্রামীণফোনকে সোমবারের মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা দিতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নিরীক্ষা দাবির পাওনা এক হাজার কোটি টাকা আগামী সোমবারের মধ্যে দিতে গ্রামীণফোনকে নির্দেশ দিয়েছে আপীল বিভাগ। গ্রামীণফোনের করা রিভিউ আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। এছাড়া এ বিষয়ে সোমবার পরবর্তী আদেশ দেয়া হবে। আদালতে বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। গ্রামীণফোনের পক্ষে শুনানি করেন এ এম আমিন উদ্দিন ও মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী। এদিকে বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, নিরীক্ষা দাবির এক হাজার কোটি টাকা সোমবারের মধ্যে পরিশোধ করতে আপীল বিভাগের নির্দেশের পর গ্রামীণফোন সরকারের পাওনা দিয়ে দেবে বলে আশা করছি। আপীল বিভাগের নির্দেশের দিনেই বিকেলে সাংবাদিকদের কাছে এ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তিনি। টাকা না দিলে বিটিআরসির পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, আমার যতটুকু মনে হয় টাকাটা তারা দিয়ে দেবে, যদি না দেয় আইন যেসব ক্ষমতা বিটিআরসিকে দেয়া হয়েছে। বিটিআরসি কখনও কোন বেআইনী কাজ করে না, করবেও না। তারা তো কোর্টে গেল, রিভিও আদেশে বলে দিল এক হাজার কোটি টাকা দিতে হবে। আর তো কোন যাওয়ার জায়গা নেই। এখন তাদের টাকা দিতেই হবে। গ্রামীণফোনের এর ওপরে যাওয়ার জায়গা আছে বলে আমার মনে হয় না। আপীল বিভাগ গত বছরের ২৪ নবেম্বর গ্রামীণফোনকে ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছিল। সে জন্য তাদের দেয়া হয়েছিল তিন মাস সময়, যা ২৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। ওই সময় শেষ হওয়ার আগে বিটিআরসিকে ১০০ কোটি টাকা দিয়ে আলোচনা চালু রাখার প্রস্তাব দিয়েছিল গ্রামীণফোন। বিটিআরসি তাতে রাজি হয়নি বলে জানায় গ্রাামীণফোন। সে বিষয়টি তুলে ধরে বৃহস্পতিবার আপীল বিভাগে রিভিউ শুনানিতে ছয় মাসের কিস্তিতে ওই ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধের অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু শুনানি শেষে আদালত আগামী সোমবারের মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে বিষয়টি সে দিনই পরবর্তী আদেশের জন্য রাখেন। গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার পাশাপাশি রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে জানায় বিটিআরসি। কয়েক দফা চেষ্টায় সেই টাকা আদায় করতে না পেরে বিটিআরসি লাইসেন্স বাতিলে দুই অপারেটরকে নোটিস পাঠায়। বিটিআরসি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় দুই অপারেটর আদালতে আসেন। গ্রামীণফোনের আবেদনে গত ১৭ অক্টোবর বিটিআরসির নিরীক্ষা আপত্তি দাবির নোটিসের ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় হাইকোর্ট। বিটিআরসি লিভ টু আপীল করলে আপীল বিভাগ ২৪ নবেম্বর গ্রামীণফোনকে ২ হাজার কোটি টাকা দিতে নির্দেশ দেয়। ওই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য ২৬ জানুয়ারি সুপ্রীমকোর্টে আবেদন (রিভিউ) করে গ্রামীণফোন, যার ওপর শুনানি শেষে আদালত বৃহস্পতিবার এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধের জন্য সোমবার পর্যন্ত সময় দেন। আদালতে শুনানির সময় গ্রামীণফোনের আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, বিটিআরসির মূল দাবি ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এ নিয়ে মামলা হয়েছে। ২ হাজার কোটি টাকা দেয়া হলে ৮৭ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে। তখন আদালত বলে, আদালতের আদেশ কতটুকু বাস্তবায়ন করেছেন? জবাবে গ্রামীণফোনের আইনজীবী বলেন, ৫০০ কোটি টাকা অফার করা হয়েছে। বিটিআরসি সেই টাকা নেয়নি। ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। এর আগে আবেদনটি করা হয়েছে। আদালত তখন বলে, আমরা বললাম ২ হাজার কোটি টাকা দিতে। আপনারা বলছেন ৫০০ কোটি টাকার কথা। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, কোন অর্থই পরিশোধ করা হয়নি। ছয় মাসের জন্য প্রশাসক নিয়োগ করা হলে সব আদায় করা যাবে। পরে ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরী বলেন, অডিটে রবির ক্ষেত্রে সিম্পল ইন্টাররেস্টে ক্যালকুলেট করা হয়েছে। জিপির ক্ষেত্রে কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট সিস্টেমে করা হয়েছে। আমরা আদালতে বলেছি, ৫০০ কোটি টাকা এক মাসে দিবো। বাকিটা ছয় মাসে ইক্যুয়েলি দিবো। কিন্তু আদালত সেটা গ্রহণ করেনি। বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক সাংবাদিকদের জানান, বুধবার গ্রামীণফোন এক শ’ কোটি টাকা নিয়ে এসেছিল, বলছে যে এটা আমরা শুরু করলাম, বিগিনিং। আমরা বললাম এই বিগিনিংটা যদি আগে শুরু করতেন তাহলে সকলের জন্য ভাল হতো। যেহেতু মামলার বিষয়, আপীল বিভাগের দুই হাজার কোটি টাকা দেয়ার নির্দেশ আছে, আমরা টাকা নেইনি। আদালত পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছে আগামী সোমবারের মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা জমা দিতে হবে। এক হাজার কোটি টাকা জমা দেয়ার পরে কিস্তির কি হয়, না হয় দেখা যাবে। এক হাজার কোটি টাকা দেয়ার পরে আদালত যে আদেশ দেয় সেই আদেশ আমরা মানব। এখন বলটা গেছে কোর্টে, আমাদের কাছে নেই। আমরা অনেকদিন চেষ্টা করেছি আলোচনার জন্য। কোন আলোচনাই সফল হয়নি। বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, সুপ্রীমকোর্ট বলে দিয়েছে না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আইনে যা যা ক্লজ আছে তা করা হবে। ওরা যদি টাকা না দেয় আমরা এডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ করব। সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সবচেয়ে যোগ্য, অভিজ্ঞ ও সৎ মানুষকে আমরা এডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ করব। ওনার কাজ হবে এই ইন্ডাস্ট্রি চালানো। তাদের বেতন-ভাতা যা যা আছে সব দেবে, সব করবে। এরপর টাকা যা বেশি হবে সেই টাকা সরকারের কাছে জমা দেবে। সে টাকা যখন জমা দেয়া শেষ হয়ে যাবে তখন মেয়াদ শেষ হবে। গ্রামীণফোন এক হাজার কোটি টাকা জমা দিলে এনওসি বন্ধের যে নির্দেশনা তা প্রত্যাহার করা হবে কিনা জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, আগামী সোমবার আদালত কি নির্দেশ দেয়, তার ওপর নির্ভর করবে, এনওসির বিষয়ে সিদ্ধান্ত ওই দিনই নেয়া হবে।
×