ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সেমিনারে জানালেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ১০:০১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরাপদ খাদ্য ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, বাড়ছে জনসংখ্যা কমছে কৃষিজমি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব। এই তিনটি বিষয়ই দেশের খাদ্য উৎপাদনের জন্য চ্যালেঞ্জ। খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার প্রথম থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এ কারণে দেশ এখন খাদ্যেস্বয়ম্ভর। তবে নিরাপদ ও পুষ্টি জাতীয় খাবারের নিশ্চয়তাও এখনও। বৃহস্পতিবার দুপুরে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম ও কৃষি তথ্য সার্ভিস যৌথভাবে ‘জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তায় করণীয় শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিরোধী দলকে নির্বাচন পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে লাভ নেই, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করলে আমরা তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব। প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী বলেন, নিরাপদ খাদ্য ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিতে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার বহুবিধ কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে পাশাপাশি জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও কৃষিজমি কমে যাওয়ায় সরকার খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সারের একাধিকবার মূল্য হ্রাসে করেছে। একইসঙ্গে কৃষিঋণ বিতরণ, গবেষণায় অগ্রাধিকার ও প্রণোদনা দেয়ায় খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ আমরা। খাদ্যনিরাপত্তার আগে মানুষের নিরাপত্তা দিতে হবে। এজন্য দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরী। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে যতই সমালোচন করুক না কেন তাদের আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিক সমস্যা। ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ষষ্ঠ স্থানে। তাপমাত্রা ও মাটির লবণাক্ততা বাড়ায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা ইত্যাদি কারণে শুধু কৃষিই নয়, মানুষের চিরচেনা স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহও ব্যাহত হচ্ছে। দেশের ৪০ শতাংশ লোক কৃষির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাই ভবিষ্যত মেধাবী জাতি গঠনে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত জরুরী। তিনি বলেন, খাদ্য ঘাটতির জন্য পৃথিবীতে অনেক বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। আর খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অনেক যুদ্ধও হয়েছে। এদেশেও খাদ্য নিয়ে একসময় মানুষ অনেক কষ্ট করেছে। ক্ষমতায় আসার পর খাদ্য সঙ্কট দূর করাই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল। আজ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এছাড়া প্রত্যেকটা লক্ষ্যেই আমরা ভাল করেছি। খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। সরকারও এ বিষয়ে অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যও সরকার অনেক কাজ করেছে। চাষীদের ঋণ দেয়াসহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে এই সরকার প্রথম থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। খাদ্য ঘাটতি নিয়ে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে প্রথম বৈঠকেই সরকার খাদ্য উৎপাদনের বাড়াতে পদক্ষেপ নেয়। সারের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি কৃষকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা করে দিয়েছি। এজন্য কৃষি খাতে বিরাট পরিবর্তন এসেছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের জীবন জীবিকার ওপর এর প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বাড়ছে। তাই পৃথিবীর সব দেশ ও মানুষ এখন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে এটাকে মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। যদিও কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে খাদ্য উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন পুরোপুরি রোধ করা যায় না। তবে লাগসই প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহারের ফলে খাদ্য নিরাপত্তা কিছুটা নিশ্চিত করা যায়। এ কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রকৃতি পরিবেশ ও জলবায়ুর সঙ্গে জীববৈচিত্র্যের রয়েছে অস্তিত্বের সম্পর্ক। দেশের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত অনেক নদীর গতিপথ বদলে যাচ্ছে। কোথাও নদী শুকিয়ে যাচ্ছে, সেচ বিঘিœত হচ্ছে। অনাবৃষ্টি ও খরার প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষি উৎপাদন। দেশের শস্য খাতে অভিযোজন কর্মসূচী মোটামুটি এগোচ্ছে। খরা বন্যা তাপ, লবণাক্ত জলমগ্নতা ও পরিবেশ সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। কৃষিকে প্রক্রিয়াজাত, লাভজনক ও যান্ত্রিকীকরণে কাজ করছে কৃষিবান্ধব সরকার। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইইডিবির সভাপতি একেএমএ হামিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচলক ড. আব্দুল মুঈদ। আলোচক ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. এম আসাদুজ্জামান, কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক মোঃ আসাদুল্লাহ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোঃ সাজ্জাত সরকার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিজেএফ সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সভাপতি কাওসার রহমান। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে ড. শাহজাহান কবীর বলেন, বিভিন্ন ঘাতসহনশীল জাতসহ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আমরা এ পর্যন্ত ১০২ জাত উদ্ভাবন করেছি। ফলে সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের জন্য গত বছর আমরা ৩ কোটি ৭৮ লাখ খাদ্য উৎপাদন করতে সমর্থ হয়েছি। আমরা এখন ২০৩০ সালের মধ্যে খাদ্যশস্য উৎপাদন দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করছি। দেশের মানুষ আর কোনদিন খাদ্যের অভাব অনুভব করবে না। ড. আব্দুল মুঈদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের খাপ খাওয়াতে আমরা প্রতিনিয়ত কৃষকদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এতে জলবায়ু অভিঘাত সত্ত্বেও দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। সমাধান হাতেই রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সমন্বিত কোন কাজ হচ্ছে না। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় সরকারকে সমন্বিত কাজের আহ্বান জানান।
×