ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে’ কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  ‘টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে’ কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কাব্য গ্রন্থটির নাম ‘টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে’। লিখেছেন বরেণ্য কবি কামাল চৌধুরী। গ্রন্থটির নামেই স্পষ্ট যে বইটিতে ঠাঁই পাওয়া কবিতাগুলো রচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘিরে। কবি কামাল চৌধুরী প্রথম বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করেছিলেন। কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোতে পাওয়া যাবে স্পর্ধিত তারুণ্যের দুঃসাহসী প্রতিবাদের কাব্যভাষা এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি কবির বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসার উচ্চারণ। ঢাকা ও কলকাতার দুই ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশ ও পত্রভারতীর যৌথ প্রকাশনা উদ্যোগ বইসাকো প্রকাশ করল এই কাব্যগ্রন্থ। গ্রন্থটির দুটি পৃথক সংস্করণ প্রকাশিত হলো ঢাকা ও কলকাতা থেকে। গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব হয় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বুধবার বিকেলে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন লেখক ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সভাপতিত্ব করেন সংসদ সদস্য সংস্কৃতিজন আসাদুজ্জামান নূর। কাব্যগ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করেন প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের মহাপরিচালক কবি জাফর ওয়াজেদ ও জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন ভারতের প্রকাশনাসংস্থা পত্রভারতীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় ও অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাবেক অর্থমন্ত্রী ও লেখক আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বঙ্গবন্ধু এমন একজন নেতা যিনি আজীবন শুধু দেশের জন্য দিয়ে গেছেন। আমরা অনেক কিছু করেও কোনভাবেই তার ঋণ শোধ করতে পারব না। বিশ্বের আর কোথাও তার মতো দেখি না যে, যিনি একটা দেশের জন্য যে স্বপ্ন দেখেছেন সেই স্বপ্ন বা ধারণা নিয়ে জনমত তৈরি করেছেন। তিনি সর্বশেষ সেই জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে একটা ভয়াল রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন। পৃথিবীর যত দেশ আছে তার কোনদেশের দেশস্রষ্টা এটা করতে পারেনি। একমাত্র বঙ্গবন্ধু পেরেছেন। কবি জাফর ওয়াজেদ আলোচনায় বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী টুঙ্গিপাড়ার গ্রাম কিংবা তার কোন ছবিও দেখিনি। শুধু পত্রিকায় ছবি দেখেছি বঙ্গবন্ধুর সমাধী আর যারা তাকে দাফন করেছিলেন তাদের কিছু ছবি। দুটি সাপ্তাহিক কাগজে ফিচার আকারে ছাপা হয়েছিল। আমাদের জানার পরিধি ওইটুকুই ছিল। কিন্তু টুঙ্গিপাড়া নামটি আমাদের ভেতরে এমন আবরণ তৈরি করেছিল যে কামাল চৌধুরী কবিতাই লিখে ফেললেন ‘টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে’। সেটা ১৯৭৮ সালের ঘটনা। যখন চারদিকে অন্ধকার আমরা কোথাও কোন আবরণ দেখি না। রাত ১২টার পরে কারফিউ। রাস্তায় নামা যায় না। ভোর ৬টা পর্যন্ত কারফিউ থাকত। এমন নিকষ কালো অন্ধকার জীবন সারা বাংলাদেশে ছিল। তারমধ্যে থেকে আমাদের আলো হাতে বাইরে আসতে হয়েছিল। সেই আলো হাতে এগিয়ে এসেছিলেন কবি কামাল চৌধুরী। আমি এখনও ভেবে বিস্মিত হই পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একটি লোকের একবারই মনে হলো না সত্যিই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে কিনা দেখে আসি। কেউই যায়নি। অথচ একাত্তরে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর তর্জনি উচ্চারিত স্বাধীনতার ডাকে সারাদেশ যুদ্ধে গিয়েছিল। দেশ স্বাধীন করেছিল। দেশ গড়ার শপথ নিয়েছিল। কিন্তু সেই মানুষগুলো কেন নির্বিকার হয়ে গেল সেদিন এগুলো গবেষণা করা দরকার। এগুলো জানা দরকার, ব্যাখ্যা দরকার। এ ঘটনাগুলো জানা থাকলে কবি কামাল চৌধুরীর ‘টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে’ গ্রন্থের কবিতাগুলো অনুধাবন করা যাবে। কামাল সেদিন লিখেছিলেন ‘মহান মানব ছিলে তুমি দেবতাতো কখনও ছিলে না, দেবতা বানিয়ে যারা স্তুতি করেছে তোমার জনসভা সেমিনারে বহুবার জীবন দিয়েছে তোমার মৃত্যুর পরে তারা কেউ আর সঙ্গে নেই আজ’। কবি তারিক সুজাত বলেন, কবি কামাল চৌধুরীর ‘টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে’ কাব্য গ্রন্থের দুটি অংশ আছে। প্রথম অংশে রয়েছে কবির লেখা ১৮টি কবিতা, শেষ অংশে রয়েছে কোন সময়ে, কোন প্রেক্ষাপটে কবিতাগুলো লিখেছিলেন। এটা আমাদের জন্য একটি বাড়তি পাওয়া। এই বইটি হাতে আসার পর এর পেছনের ইতিহাস জানতে পেরেছি। সভাপতির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, কবি কামাল চৌধুরীকে অভিনন্দন। এই জন্য যে তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তখন তিনি একেবারেই তরুণ। সে সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে ভয়হীন কবিতা লিখে প্রতিবাদ করছেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে লিয়াকত আলী লাকীর রচনা ও সুরে ‘মুজিবর আছে বাংলার ঘরে ঘরে’ গানটি পরিবেশন করেন শিল্পী সাজেদ আকবর।
×