ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দান

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দান

এম শাহজাহান ॥ মধ্য আয় থেকে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) আওতায় বিনাশুল্কে বাংলাদেশী পণ্য অন্য দেশের বাজারে রফতানি করা সম্ভব হবে। বেগবান হবে আমদানি রফতানির গতি। ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড ইতোমধ্যে অন্যদেশের সঙ্গে এফটিএ চুক্তি করে লাভবান হয়েছে। আগামী ‘২৪ সালের আগে অন্তত পাঁচটি দেশের সঙ্গে এফটিএ চুক্তি করতে চায় সরকার। দীর্ঘ দশ বছর পূর্বে এফটিএ করার সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হলেও এখন পর্যন্ত একটি দেশের সঙ্গে এই চুক্তি করা যায়নি। অন্যদিকে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধা নিতে দ্রুত এফটিএর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে, স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ এখন মধ্য আয়ের দেশ। আগামী ’২৪ সালে মধ্যম আয়ের দেশের আনুষ্ঠানিক তালিকায় উঠে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছ থেকে আমদানি-রফতানিতে যেসব শুল্ক সুবিধা পাওয়া যেত তা আর বহাল থাকছে না। এটাই ডব্লিউটিওর নিয়ম। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হলে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বাংলাদেশের অর্থনীতি। তবে এখন থেকে কৌশল নির্ধারণ করা হলে ‘মিডল ইনকাম ট্রাপে’র কবলে পড়বে না। বরং এফটিএ ও পিটিএ (অগ্রাধিকার বাণিজ্যচুক্তি) মতো চুক্তি করে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করা সম্ভব হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে এফটিএ ও পিটিএ চুক্তি করার কাজ এগিয়ে রাখা হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই বাছাইয়ের প্রতিবেদন ভাল এসেছে। কিন্তু খাতভিত্তিক কিছু অংশীজনের স্টেক হোল্ডার কারণে এফটিএ করা যাচ্ছে না। কিন্তু সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে দ্রুত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ করা দরকার। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. জাফরউদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি উইং এফটিএ ও পিটিএ সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভালের বছরব্যাপী কাজ করছে। এ সংক্রান্ত বেশকিছু অগ্রগতি রয়েছে মন্ত্রণালয়ের। ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া থাইল্যান্ড ও ভুটানের সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, চীন ও ভারতের মতো বড় বড় রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ করতে চায়। বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে এফটিএ ও পিটিএ সংক্রান্ত সম্ভাব্যতা যাচাই বাছাই করা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব বিষয় বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ বিষয়। তবে আমদানি রফতানির স্বার্থে দ্বিপক্ষীয় এসব চুক্তির বিষয়ে এফটিএর বিষয়ে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট চীন ভুটান থাইল্যান্ড ভারত পাকিস্তান মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া নেপাল তুরস্ক ইন্দোনেশিয়া দক্ষিণ আফ্রিকা ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সঙ্গেও এফটিএ নিয়ে আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে কয়েকটি দেশের সঙ্গে এফটিএর সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে ট্যারিফ কমিশন। যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশের বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। এছাড়া এফটিএ বিষয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি সভা হয়েছে। এফটিএর বিষয়ে চীন খুবই আগ্রহী। তারা দ্রুত এফটিএ কার্যকর করতে চায়। তবে বাংলাদেশ চাইছে এলডিসি থেকে উত্তরণের পরপরই এফটিএ কার্যকর হোক। এফটিএর ফলে দেশের অর্থনীতিতে কি ধরনের সুবিধা মিলবে কিংবা কোন আর্থিক ঝুঁকি রয়েছে কি না তা নিয়ে সরকারী-বেসরকারী খাতে রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। এ নিয়ে স্থানীয় উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয় কি না তা নিয়ে অনৈক্যও রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। দেশের পোশাক রফতানি শিল্পের উদ্যোক্তারা এফটিএ চান, অন্যদিকে যারা টেলিভিশন কিংবা ইলেক্ট্রনিক পণ্য বিশেষ করে তার ও ফ্যানের মতো পণ্য উৎপাদন করছেন তারা আবার এসব চুক্তির বিরোধিতা করছেন। তবে বিরোধিতা যাই হোক, দেশের অর্থনীতি ও বড় শিল্পের স্বার্থে এফটিএ হওয়া উচিত বলে জোর তাগিদ দিয়েছেন এফবিসিসিআইর সাবেক উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ। তিনি জনকণ্ঠকে এ প্রসঙ্গে বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে গেছে। গরিব দেশ হিসেবে এতদিন আমদানি রফতানিতে যেসব শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা ছিল তা ’২৪ সালের পর আর বহাল থাকছে না। এটি বাংলাদেশের রফতানির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ কারণে এখনই বিশ্বের যত বাণিজ্য গোষ্ঠী রয়েছে তাদের সঙ্গে এফটিএ করতে হবে। বিশেষ করে আসিয়ান এ্যাপেক ইউরোপীয় ইউনিয়ন উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মতো বড় বড় দেশের সঙ্গে এফটিএ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, এ কারণে একক দেশের চেয়ে বাণিজ্যগোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি করলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে। পোশাক রফতানি বাড়বে আগামী বছরের মধ্যে ৬০ বিলিয়ন ডলার রফতানির যে স্বপ্ন উদ্যোক্তারা বুকে ধারণ করেছেন তা পূরণ হবে নতুন মার্কেট সম্প্রসারণ ও এফটিএ করার মধ্য দিয়েই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮ দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা হচ্ছে পোশাক রফতানির প্রচলিত মার্কেট। এই ২৯ মার্কেটের বাইরে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি হচ্ছে। লাতিন আমেরিকার ব্রাজিল চিলি পেরু মেক্সিকো আর্জেন্টিনাসহ রাশিয়া দক্ষিণ আফ্রিকা অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড মধ্যপ্রাচ্য তুরস্ক চীন জাপান কোরিয়া ও ভারত অপ্রচলিত মার্কেটগুলোর অন্যতম। আশার কথা হলো প্রচলিত মার্কেটের রফতানি প্রবৃদ্ধি যখন কমছে তখন অপ্রচলিত এসব মার্কেটের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, অপ্রচলিত মার্কেটে পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধি ভাল। এফটিএ ও পিটিএর মাধ্যমে নতুন বাজার সম্প্রসারণসহ পোশাক রফতানি বাড়ানো সম্ভব হবে। এজন্য দ্রুত কয়েকটি দেশের সঙ্গে এফটিএ হওয়া উচিত।
×