ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দূষণের কবলে বিপর্যস্ত

সমাজ ভাবনা - বিষয় ॥ নগরীর দূষণ

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সমাজ ভাবনা -	বিষয় ॥ নগরীর দূষণ

সাগর কোড়াইয়া ॥ পৃথিবীতে একসময় প্রায় দূষণহীন পরিবেশে বাস করত মানুষ। কিন্তু এখনকার পৃথিবী সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। দূষণের কবলে পড়েছে সমগ্র পৃথিবী। মানুষের স্বার্থপরতা মানুষকে দিনে দিনে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ধনী দেশগুলোর মাত্রাতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহারের কারণে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলো হুমকির সম্মুখীন। আমাদের এই প্রিয় দেশও দূষণের কবলের বাইরে নয়। আমাদেরই অসচেতনতার কারণে দূষণের কবলে পড়েছে সমগ্র দেশ। দেশের প্রায় সর্বত্র বায়ু, মাটি, শব্দ, নদী ও পানি দূষণ যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে পড়েছে। নগর-মহানগরের অবস্থা তো আরও সঙ্গীণ। নগর-মহানগরের প্রাণকেন্দ্র নদীগুলো যেমন দূষণের কবলে কাহিল, তেমনি দখলের খেলা চতুর্দিকে। এ যেন মানবসৃষ্ট দুর্যোগের প্রতিযোগিতা। নগর-মহানগরের সর্বত্র অবকাঠামোগত নানা উন্নয়নের চিত্র চাক্ষুষ করা যায়; কিন্তু নগর-মহানগর তথা জনগণকে নানা দূষণের হাত থেকে রক্ষার্থে কোথা থেকে যেন বাধা এসে পথ আটকাচ্ছে। কোনভাবেই মুক্তি মিলছে না দূষণের কবল থেকে। রাজধানী শহর ঢাকার অবস্থা তো অবর্ণনীয়। ঢাকা শহরের চারদিকে তাকালে দূষণের চিত্রই শুধু চোখে পড়ে। ঢাকার বায়ু, শব্দ, পানি তথা সমগ্র পরিবেশই দূষণের করাল থাবায় আজ নিস্তেজপ্রায়। আর এই কারণেই ঢাকা শহর বায়ু দূষণের কারণে বিশে^র মধ্যে দূষিত শহর হিসাবে প্রথম সারিতে স্থান অধিকার করেছে। যা আমাদের জন্য লজ্জাজনক ও চিন্তার বিষয়। বায়ু দূষণ পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য হয়ে উঠছে ভয়াবহ হুমকিস্বরূপ। যেখানে বিশে^র অনেক শহর তাদের শহরের দূষণকে কমিয়ে আনার জন্য চেষ্টারত; সেখানে আমাদের এই প্রিয় রাজধানী শহরকে দূষণমুক্ত করার কাজ শুরু হলেও কী এক জটিলতায় তা থমকে যায়। রাস্তায় বের হলে শব্দ ও বায়ু দূষণের কারণে চলাফেরা করাই দায়। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ও বাতাসে ধুলা। অবাক লাগে যখন দেখি সড়কের পাশেই ময়লার ভাগাড় স্তূপ করে রাখা। সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ডাস্টবিনগুলো শহরের সর্বত্র খোলা অবস্থায় ভেংচি কাটছে। ডাস্টবিনগুলো থেকে ময়লা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাস্তায় এসে পড়ছে। ভূরভূর করে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। মানুষজন নাকে হাত বা রুমাল চেপে রাস্তা পার হচ্ছে বিরক্ত মুখে কিছু গালিগালাজ ব্যবহার করে। ময়লার এই ভাগাড়গুলো শহরের বাইরে তৈরি করার শুভবুদ্ধির উদয় কেন যে হয় না? আবার অন্যদিকে তো রয়েছে উন্নয়নের নামে সারাটি বছর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সব সমস্যা পোহাতে হয় সাধারণ জনগণকে। সর্বত্র এমনভাবে ধুলা উড়তে থাকে যে, দেখলে কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল ভাবতে ভুল হয় না। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এ রকম খোঁড়াখুঁড়ি হয় কিনা বড় জানতে ইচ্ছা করে। নগর-মহানগরের শব্দ দূষণ তো কোন ভাবেই কমানো যাচ্ছে না। মনে হয় দিন দিন যেন শব্দ দূষণ পাল্লা দিয়ে শুধু বৃদ্ধিই পাচ্ছে। হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ‘হর্ণ বাজানো নিষেধ’ লেখা থাকলেও কে শোনে কার কথা। যানবাহনের চালকেরা যেন হর্ণ বাজানোর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। এছাড়াও তো রয়েছে নতুন বিল্ডিং তৈরি, উচ্চশব্দে মাইক ও সাউন্ডবক্স বাজানোর শব্দ। ফলে দিনে দিনে মানুষের শ্রবণশক্তি কমে যাচ্ছে। নগরীর এই দূষণ শীঘ্র দূর করা প্রয়োজন। অনেক সময় আইন প্রণয়ন করলেও তার প্রয়োগ বেশিদিন চলমান থাকে না। তাই দূষণ দূরীকরণে আইনের প্রয়োগ চলমান রাখা অতীব জরুরী। এছাড়াও সবার সামাজিক সম্মিলিত প্রচেষ্টা, সদিচ্ছা ও দেশপ্রেমই পারবে নগর-মহানগরের দূষণ দূর করে মানব জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে। কাকরাইল, ঢাকা থেকে
×