ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দৃশ্যমান মেট্রোরেল

প্রকাশিত: ০৭:১২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 দৃশ্যমান মেট্রোরেল

যাত্রী পরিবহনে এক অনন্য যাত্রা পথ রাজধানী ঢাকার সড়ক মহাসড়কের আশপাশে দেখা যাচ্ছে অন্য রূপে, ভিন্ন আঙ্গিকে। বর্তমানে এলোমেলো অবস্থায় মেট্রোরেলের সম্প্রসারিত কর্মযোগে মহানগরী সাময়িক অস্বস্তিতে পড়লেও এক সময় সব দুর্ভোগ অতিক্রম করে নতুন যাত্রা পথ অবারিত হবে। নির্মাণাধীন এই সংযোগ ব্যবস্থাপনার নমুনা হিসেবে জাপান থেকে নিয়ে আসা হয়েছে পরীক্ষামূলক কোচ। ২১ কিলোমিটারকে লক্ষ্যমাত্রায় বিবেচনা রেখে ২০২১ সালের বিজয়ের মাসেই এই মেগা প্রকল্প তার সমস্ত সম্ভাবনা নিয়ে যাত্রীদের সেবায় নিত্য-নিযুক্ত হবে। ফলে পাল্টে যাবে ঢাকা শহরের বর্তমান অগোছালো চেহারা। যানজট কমে আসবে, যাত্রাপথের প্রাসঙ্গিক অসঙ্গতিগুলো যথাসম্ভব নিরসন হবে। সর্বোপরি পুরো ব্যবস্থাপনায় আসবে এক আলোকিত যাত্রাপথের অপার সম্ভাবনা। নমুনাভিত্তিক এই কোচটা দিয়াবাড়ির মেট্রোরেলের ডিপোর কন্টেনার থেকে বের করে জনগণকে প্রাথমিক সেবামূলক তৎপরতায় তার পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করার অপেক্ষায়। মেট্রোরেল সম্পর্কে ধারণা দেয়াই শুধু নয়, তাতে আরোহণ-অবতরণসহ শেখা দুটো কাজই সম্পন্ন করা যাবে। নমুনা কোচ মূল মেট্রোরেলের থেকে একেবারেই ভিন্ন মাত্রার। সঙ্গত কারণেই যাত্রাপথের মূল কার্যক্রমে এর ব্যবহার দৃশ্যমান হবে না। নির্মীয়মান মেট্রোরেল আজ আকাশছোঁয়া কোন স্বপ্ন কিংবা মাটির শিকড়ে গেড়ে বসা কোন অলিক বস্তু নয়। বরং একেবারে বাস্তবের দরজায় সে কড়া নাড়ছে। জনসমক্ষে প্রদর্শনের জন্য আগামী মাস থেকে এর ব্যবহার মানুষের মাঝে নিয়ে আসা হবে। যাত্রীবাহী মূল মেট্রোরেলের কোচ জাপান থেকে জুন মাসে আমদানি করা হবে। গত এক বছর ধরে জাপান মেট্রোরেলের অত্যাধুনিক কোচগুলো তৈরি করে যাচ্ছে। দেশে আসার পর এগুলো পূর্ণ সঙ্গতিতে চলতে পারছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে। এ জন্য ট্রায়াল রান দেয়াও জরুরী হবে। নমুনা রেপ্লিকা কোচ জাপানের মিৎসুবিশি ও কাওয়াসাকি কোম্পানি থেকে উদ্ভূত বলে জানা যায়। মূল ট্রেনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই পরীক্ষামূলক কোচ প্রস্তুত করা হলেও যাত্রী পরিবহনে এই কোচ ব্যবহার করা হবে না। উত্তরায় মেট্রোরেলের তথ্য কেন্দ্রে যাত্রীদের এসব দেখানো ও শেখানো হবে। ট্রেনের টিকেট কাটা, নিয়ম মাফিক দাঁড়ানো, রেলে ওঠা ও নামার ব্যাপারেও যাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। উন্নয়নের অবধারিত পথপরিক্রমায় মেট্রোরেলের সম্প্রসারিত কার্যক্রমের এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রকল্পটির ৪০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হওয়া সাফল্যের একটি বিশেষ মাইলফলক। ছয়টি কোচ সংবলিত এই মেট্রোরেলে ১টি কোচ নির্ধারিত থাকবে নারীদের জন্য। শুধু তাই নয়, প্রতিটি কোচে অসুস্থ রোগীর জন্য দুটো করে হুইল চেয়ারও থাকবে। বিজয়ের পঞ্চাশ বছর উদ্্যাপনের সুবর্ণ সময়ে নবনির্মিত মেট্রোরেলও জনগণের সেবায় পৌঁছে দিতে জোর কদমে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। লাল সবুজের রঙে কোচগুলোকে সাজানো হবে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় স্মারক হিসেবে। এ ছাড়া পাতাল রেলের মহাপরিকল্পনাও সরকারের উন্নয়ন যাত্রার অন্যতম লক্ষ্যমাত্রা। সেটাও যত দ্রুত সম্ভব কার্যক্রমের আওতায় আনতে সরকার সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। যেহেতু মেট্রোরেলের যাত্রাপথ বাংলাদেশে এই প্রথম, সঙ্গত কারণেই এর কর্মযোগেও থাকবে নতুনত্ব। মেট্রোরেল হবে একেবারে বিদ্যুতচালিত, যা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ রেল পরিবহনে সংযুক্ত করা হবে। সরকারের মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে সাধারণ মানুষের বহু কাক্সিক্ষত স্বপ্নের জগত। আর সেভাবেই মেট্রোরেল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে উদ্দীপ্ত চেতনায় উদ্ভাসিত করবে।
×