ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুজিববর্ষ নিয়ে বাড়াবাড়ি যেন না হয় ॥ শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ১২:১৫, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মুজিববর্ষ নিয়ে বাড়াবাড়ি যেন না হয় ॥ শেখ হাসিনা

সংসদ রিপোর্টার ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উদ্যাপনে অতিউৎসাহী কিংবা বাড়াবাড়ি যেন না হয় সেজন্য দলের সংসদ সদস্যদের সতর্ক করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ’৭৫-এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল সেটা আমরা দেখেছি, সেটা আমাদের মনে রাখতে হবে। তাই অতিউৎসাহী হয়ে কিছু না করে বরং নতুন প্রজন্মের সামনে জাতির পিতার আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরতে হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের নবমতলার সরকারী দলের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মুজিববর্ষকে সামনে রেখে যত্রতত্র, যেভাবে-সেভাবে জাতির পিতার ম্যুরাল বানানো চলবে না। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী ম্যুরালগুলো নির্মাণ ও স্থাপন করতে হবে। এক্ষেত্রে টিআরের টাকা ব্যবহার না করে বরং মুজিববর্ষে গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ করে দেয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব প্রদানের জন্য তিনি সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। রাত সাড়ে আটটা থেকে সোয়া ১০টা পর্যন্ত এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে উপস্থিত একাধিক সংসদ সদস্য সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সংসদ অধিবেশনে মন্ত্রী-এমপিদের অনুপস্থিতির বিষয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সূত্র জানায়, এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সংসদ অধিবেশনে আমি নিয়মিত উপস্থিত থাকি। আমার পেছনের আসনগুলোতে যেসব মন্ত্রী-এমপিরা বসেন, তারা যদি অনুপস্থিত থাকেন- সেসব আসনগুলো ফাঁকা দেখালে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যায় যে, মন্ত্রী-এমপিরা সংসদে আসেন না। এ কারণে যেসব মন্ত্রী-এমপি নিয়মিত সংসদে উপস্থিত থাকতে না পারেন, তাদের আসনগুলো দূরবর্তী স্থানে স্থানান্তরের সতর্কবার্তাও উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এ সময় সংসদ অধিবেশন চলাকালে মন্ত্রী-এমপিদের বাইরের কর্মসূচী থেকে যতটা সম্ভব কম রেখে সংসদে নিয়মিত অংশগ্রহণের জন্যও নির্দেশ দেন। মুজিববর্ষের প্রতিটি কর্মসূচীতে দলের সংসদ সদস্যদের কার্যকর উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ১৯ মার্চ সংসদে মুজিববর্ষ উপলক্ষে শিশুমেলা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সংসদ সদস্যরা যেন উপস্থিত থাকেন। এছাড়া আগামী ২২ ও ২৩ মার্চ জাতীয় সংসদে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশন বসবে। ওই অধিবেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভুটানের রাজাসহ বিদেশী অতিথিরা বক্তব্য রাখবেন। সুস্থ থাকলে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিও আসবেন। বিশেষ অধিবেশনে যেসব মন্ত্রী-এমপিরা বক্তব্য রাখবেন, তাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। স্পীকারের কাছে বক্তব্য রাখার জন্য আগে থেকেই চিঠি দিয়ে আবেদন করতে হবে। সবাইকে ইতিহাস জেনে গঠনমূলক বক্তব্য রাখতে হবে। সূত্র জানায়, বৈঠকে দুজন এমপি টিআরের টাকা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ এবং নির্বাচনী এলাকার মুজিববর্ষের সরকারী কর্মসূচীতে সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী টিআরের টাকা দিয়ে ম্যুরাল নির্মাণের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেন। এই টিআরের টাকা দিয়ে তিনি গৃহহীনদের মুজিববর্ষে গৃহনির্মাণ করে দেয়ার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করা হবে। সেটি বিশ্বের সকল দেশের স্পীকারদের কাছে শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে পৌঁছে দেয়া হবে। আর এমপিরাও নিজস্ব উদ্যোগে নির্বাচনী এলাকায় মুজিববর্ষ পালন করবেন, তবে বেশি লম্ফঝম্ফ যেন না করা হয়। একই সঙ্গে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড দেশের জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গত এক দশকে অনেক কাজ করেছি। অনেক উন্নয়ন করেছি। সেই উন্নয়নের সুফল দেশের জনগণ এখন ভোগ করছে। সরকারের সকল উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রকৃত চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে, জনগণের মন জয় করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদীয় দলের বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, আ স ম ফিরোজ, হাফিজ আহমেদ মজুমদার, মযহারুল হক প্রধান, গাজী শাহনেওয়াজ, শামীম ওসমান, ছোট মনির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
×