ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে এখন অপ্রচলিত ফল ও ফসল উৎপন্ন হচ্ছে ॥ কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:১৬, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 দেশে এখন অপ্রচলিত  ফল ও ফসল  উৎপন্ন হচ্ছে ॥ কৃষিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর চীনকে বাদ রেখে অন্য দেশ থেকে ফল আমদানি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ফল আমদানিকারকরা একথা জানান। কৃষিমন্ত্রীও আপাতত চীন থেকে ফল আমদানির বিষয়ে ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহিত করেন। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান। সভায় কৃষিমন্ত্রী বলেন, এক সময়কার বাড়ির আঙ্গিনায় উৎপাদিত ফসল এখন মাঠে উৎপন্ন হচ্ছে। তেমনি রাজশাহীর উন্নত জাতের আম এখন প্রায় সকল জেলাতে উৎপন্ন হচ্ছে। দেশে এখন অর্থকরী অপ্রচলিত বিদেশী ফল ফসল উৎপন্ন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আবদুর রাজ্জাক। এছাড়াও প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর চীনকে বাদ রেখে অন্য দেশ থেকে ফল আমদানি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ফল রফতানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আবদুর রাজ্জাক ও ব্যবসায়ীরা। সভায় কৃষিমন্ত্রী বলেন, বিদেশী ড্রাগন ফল উৎপাদন যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে আর কয়েক বছর পরে চাহিদা মিটিয়ে রফতানিতে যেতে পারব। যে সকল ফল-ফসল আমাদের দেশে উৎপন্ন হয় সেগুলো আমদানি কমানো এবং দেশে উৎপন্ন ফল-ফসল রফতানির পথ বের করতে হবে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশে নতুন নতুন জাতের আম, মাল্টা, কমলা, ড্রাগন ফলসহ বিদেশী জাতের ফলের আবাদ হচ্ছে। এক সময় সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বিদেশী ফলের ওপর নির্ভরতা ছিল। এখন এই সময়ে দেশীয় ফলের সরবরাহ বাড়ছে। তাজা ও রাসায়নিকমুক্ত ফলে আগ্রহ বাড়ছে মানুষের। দেশে গ্রীষ্ম ও বর্ষা ছিল ফল উৎপাদনের ভরা মৌসুম। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাসে ফলের উৎপাদন বা সরবরাহ ছিল কম। তাই এই সময়টাতে মানুষকে বাধ্য হয়ে বিদেশী ফল কিনতে হয়। তবে সময় পাল্টেছে। বিদেশী ফল বেচাকেনার ভরা মৌসুমেও এখন পাওয়া যাচ্ছে দেশী ফল। আপনারা আমদানিকারক আবার আপনারাই রফতানিকারক হতে পারেন। কৃষিকে লাভজনক করতে আপনাদের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, চীন হতে কোন ফল এই মুহূর্তে আমদানি করা হচ্ছে না। করোনাভাইরাস দ্বারা চীন আক্রান্ত হওয়ার আগেই চীনের সরকারী একমাস ছুটি এবং ছুটির মধ্যবর্তী সময় ভাইরাস শনাক্ত এ সকল কারণে চীন হতে ফল আমদানি বন্ধ আছে এবং সামনে রমজান মাসে চীন ব্যতীত অন্য সকল দেশ হতে ফল আমদানি করা হবে। রমজান মাসে ফলের কোন সমস্যা হবে না বাজারে। এই মুহূর্তে চীন থেকে ফল আমদানির জন্য আমদানিকারকদের নিরুৎসাহিত করা হবে। যদিও ফলের মাধ্যমে এ ভাইরাস আসে না, বলেন আবদুর রাজ্জাক। কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান বলেন, এ ভাইরাসটা হিউম্যান হোস্ট ছাড়া অন্য মসলা বা ফলের মাধ্যমে ছড়ায় এ রকম কোন নিউজ (সংবাদ) আন্তর্জাতিক বা দেশীয় গণমাধ্যমে আসেনি। চীনে নিউ ইয়ারের পর যেসব আমদানি শুরু হওয়ার কথা তা আসেনি। আমরা মনে করি না ফল বা মসলার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে। ফ্রেশ ফ্রুট ইমপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন সভাপতি সেলিমুল হক ইসা বলেন, চীনে নববর্ষের ছুটি চলছিল ২০ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এর আগে যেগুলো এলসি, সেগুলো আসছে, বাকিগুলো তারা বন্ধ করে রেখেছে। ওরাও লেবার পাচ্ছে না এক্সপোর্ট করার জন্য। এজন্য সে ফল আসবে না। তিনি বলেন, রোজার মধ্যে সমস্যা হবে না। কারণ আমরা মালদ্বীপ, চিলি, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফল আমদানি শুরু করেছি। বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশের মানুষের ফল খাওয়ার প্রবণতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে এবং উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফল দেশের মোট চাহিদার মাত্র ৩৫ ভাগ পূরণ করে, যা দুই বছর আগেও ছিল ২৮ ভাগ। বাকিটা আমদানির মাধ্যমে পূরণ হয়। এজন্য আমদানিকৃত ফলের চাহিদা বেশি। দেশে সারা বছর বিদেশী ফলের চাহিদা রয়েছে। অপ-আমদানি বন্ধের দাবি জানান তারা। যে সকল ফল আমাদের দেশে যথেষ্ট পরিমাণে উৎপন্ন হয় সেগুলো আমদানি বন্ধ হলে দেশের মানুষ উপকৃত হবে। ফল রফতানির জন্য প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠান জরুরী। ফলে কোন ফরমালিন মেশানো হয় না এবং ফল রফতানির জন্য সরকারের সহযোগিতা চান।
×