নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ নওগাঁর রাণীনগরে বাড়ির ছাদে বাগান তৈরি করে বাণিজ্যিক ভাবে ঘৃতকুমারী চাষ করে (অ্যালোভেরা) আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে নারীরা। ঔষুধী গুনসম্পন্ন এই ফসল চাষ করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন উপজেলার মাধাইমুড়ী মহিলা সিআইজি দলের (কমোন ইন্টারেস্ট গ্রুপ) সদস্য হোসনে আরা। হোসনে আরার দেখাদেখি বর্তমানে ওই গ্রামের প্রায় ১০জন মহিলা তাদের নিজ নিজ বাড়ির ছাদকে আবার কেউ কেউ বাড়ির উঠানের পরিত্যক্ত জমিতে এই ফসল চাষ করে বাড়তি অর্থ আয় করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সুপরিচিত ঔষুধী গুন সম্পন্ন একটি গাছ হচ্ছে এ্যালোভেরা (ঘৃতকুমারী)। এই গাছের পুরো অংশটিই ঔষুধী হিসেবে বহুল ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে শরীর ঠান্ডা রাখতে শরবতের সঙ্গে প্রচুর এই অ্যালোভেরা (ঘৃতকুমারী) খাওয়া হয়। এছাড়াও বর্তমানে রূপচর্চাতেও এই ঔষুধী গাছটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই গাছটির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় এর চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের মধ্যে যশোর জেলা এ্যালোভেরা (ঘৃতকুমারী) চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু বর্তমানে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নের মাধাইমুড়ি গ্রামে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ভাবে এ্যালোভেরার (ঘৃতকুমারী) চাষ শুরু করেছেন ওই গ্রামের কৃষি ভিত্তিক সিআইজি (কমোন ইন্টারেস্ট গ্রুপ) দলের মহিলারা। আর তাদেরকে এই লাভজনক আবাদ চাষে আগ্রহী করে তুলেছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ওই গ্রামে প্রথমে হোসনে আরা এই চাষ শুরু করেন। আর তার দেখাদেখি বর্তমানে প্রায় ১০জন মহিলা তাদের বাড়ি ছাদে ও পরিত্যক্ত জায়গায় এ্যালোভেরার (ঘৃতকুমারী) চাষ শুরু করেছেন। এছাড়াও মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষরাও জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে এ্যালোভেরার (ঘৃতকুমারী) চাষ শুরু করেছেন। কম পরিশ্রম ও কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় এ্যালোভেরা (ঘৃতকুমারী) চাষের দিকে ঝুঁকছেন ওই গ্রামের অনেক মহিলা ও পুরুষর।
রানীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে কৃষিভিত্তিক সিআইজি দলের মাধ্যমে গ্রামীণ মহিলাদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী ও বিষমুক্ত সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় মাধাইমুড়ি গ্রামে মহিলাদের মাধ্যমে এই প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে এ্যালোভেরার (ঘৃতকুমারী) চাষ শুরু করা হয়েছে। আর এই এ্যালোভেরার (ঘৃতকুমারী) চাষে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন হোসনে আরা। এই গাছের রোগবালাই খুব কম। শুধুমাত্র পাতাতে পচন রোগ দেখা দিলে চুন ও তুঁতের মিশ্রন প্রয়োগ করলেই যথেষ্ট। এছাড়া তেমন কোন বড় ধরনের রোগ হয় না। এই গাছের চারা সহজলভ্য, পরিশ্রম ও খরচ খুবই কম হয়। এতে করে লাভের পরিমাণ খুবই বেশি। আর এই গাছের চাহিদা অনেক বেশি হওয়ায় বাজারজাত করা নিয়ে তেমন ভাবতে হয় না। পাইকাররা এসে বাড়ি থেকে এগুলো নিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে এই গ্রামের মহিলারা পরিবারের কাজের ফাঁকে ঘৃতকুমারীর বাগান তৈরির দিকে ঝুঁকছেন। আমরা তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আসছি। আশা রাখছি, আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে মাধাইমুড়ির পুরো গ্রামে ঘৃতকুমারীর চাষ ছড়িয়ে পড়বে। শুধু এই গ্রামেই নয় আমরাও চেষ্টা করবো উপজেলার অন্যান্য গ্রামেও এই চাষ ছড়িয়ে দেয়ার। যাতে করে গ্রামীণ মহিলারা অযথা সময় নষ্ট না করে সংসারের কাজের ফাঁকে ঘৃতকুমারীর এই বাগানের মাধ্যমে আর্থিক ভাবে লাভবান হন, সেই প্রত্যয় নিয়েই আমরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছি।
