ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিশু হাসপাতাল ও শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট একীভূত

সরকারী হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রকাশিত: ১০:৩০, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 সরকারী হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সরকারী হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসা সেবা দেয়া চিকিৎসকদের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকারী চিকিৎসকরা হাসপাতালেই চিকিৎসা সেবা দেবেন। তারা কেন বাইরে প্র্যাকটিস করবেন? এটাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্য সেবা ও ব্যবস্থাপনা যাতে ঠিক থাকে সেটি নিশ্চিত করতে স্বাস্ব্যমন্ত্রীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি করোনাভাইরাসের সুচিকিৎসা দিতে দেশের সব হাসপাতালকে প্রস্তুত করারও নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী সোমবার তার তেজগাঁও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এ নির্দেশ দেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য জানিয়েছেন। পাশাপাশি ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউকে একীভূত করতে ‘বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট আইন, ২০২০’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যে স্বাক্ষরের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সহযোগিতা চুক্তির খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভায় ‘শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউশন আইন ২০২০’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপুমনি শিক্ষা নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত ঘটান। এরপর স্বাস্ব্য শিক্ষার বিষয়টি উঠে আসে। এ আলোচনার সূত্র ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারী চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। স্ক্যানার দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া, ধরা পড়বে সব ধরনের ভাইরাস বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বাংলাদেশকে অত্যাধুনিক স্ক্যানার দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। কোরিয়ান প্রযুক্তিতে তৈরি এই স্ক্যানারের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করালে করোনাসহ যেকোন ভাইরাস ধরা পড়বে বলে জানিয়েছে দেশটি। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আমরা রেগুলার আলাপ-আলোচনা করছি। এটা নিয়ে আমরা কনসার্ন আছি। রিসেন্টলি কোরিয়া থেকে একটা স্ক্যানিং সিস্টেম এ্যাওয়ার্ড করা হচ্ছে। গত বুধবার এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের হোম মিনিস্টার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) এটা বলেছেন। ওনার কাছে একটা অফার আসছে। এটা আরও মডিফাইড জিনিস, যেকোন ভাইরাস থাকলে ওটার মধ্য দিয়ে গেলেই ধরা পড়বে। আমাদের যে সিস্টেম আছে সেটাও থাকবে, ওটা থাকবে ইন ইডিশন। এটা আরও সিকিউরড। আমার কাছে চিঠিটি আসতেছে। তারা এমনিতেই এটা আমাদের দেবে। টেস্ট কেস হিসেবে আমাদের দিচ্ছে। আমাদের সবগুলো এয়ারপোর্টেই এটি বসানো হবে। বাংলাদেশ-গ্রিস চুক্তির খসড়া অনুমোদন বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যে স্বাক্ষরের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সহযোগিতা চুক্তির খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ব-সংস্কৃতির সঙ্গে বাঙালী সংস্কৃতির মেলবন্ধন জোরদার করার লক্ষ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক চুক্তি সম্পাদন ও এর আওতায় সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ প্রক্রিয়ায় এরইমধ্যে মোট ৪৪টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যে স্বাক্ষরিত সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তিটির মূল লক্ষ্য ও বৈশিষ্ট্যগুলো হলো- দু’দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক কৃষ্টি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণ, দু’দেশের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং বিশেষজ্ঞ বিনিময়ের মাধ্যমে শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে উভয় দেশের জনগণের জ্ঞান ও সচেতনতা অর্জন, সভা ও সেমিনার প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে উভয় দেশের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি, চারুকলা, শিল্পকলা, শিল্প সংস্কৃতি ও সংশ্লিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের মাধ্যমে উভয় দেশের সংস্কৃতি সমৃদ্ধকরণ, প্রকাশনা, গবেষণা ও তথ্য দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ, সামগ্রিকভাবে সংস্কৃতি, শিল্পকলা এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণে দু’দেশের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষার সুযোগ সৃষ্টি। কোনও পক্ষ চুক্তিটি বাতিল করতে চাইলে ৬ মাস আগে লিখিতভাবে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। এ চুক্তির বিষয়বস্তু বন্ধুপ্রতীম অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পাদিত সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তির অনুরূপ হবে। একীভূত হচ্ছে শিশু হাসপাতাল ও শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট একীভূত হচ্ছে ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। দু’টি সংস্থাকে একীভূত করতে ‘বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট আইন, ২০২০’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭৭ সালে শের-ই-বাংলা নগরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে বিচ্ছিন্ন ও সীমিতভাবে দরিদ্র রোগাক্রান্ত শিশুদের জন্য চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হতো। পরবর্তী সময়ে শিশুদের সার্বিক চিকিৎসার জন্য এটি একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা শিশু হাসপাতাল কোন আইনগত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয় জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ঢাকা শিশু হাসপাতাল অধ্যাদেশ-২০০৮ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। নবম জাতীয় সংসদের বিশেষ কমিটির সুপারিশের আলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জারি করা ১২২টি অধ্যাদেশের মধ্যে ৫৪টি অধ্যাদেশ অনুমোদন করা হয়। অননুমোদিত ৬৮টি অধ্যাদেশের মধ্যে ঢাকা শিশু হাসপাতাল অধ্যাদেশও রয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা শিশু হাসপাতালের কর্মকান্ড এবং বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানের বিধান সম্বলিত কোন স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন বা অধ্যাদেশ নেই। হাসপাতালটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে উক্ত অধ্যাদেশের আলোকে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করা সমীচীন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটকে একীভূত করে ২১টি ধারা সম্বলিত বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী ইনস্টিটিউটের সুষ্ঠু পরিচালনা ও প্রশাসন সার্বিকভাবে একটি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের ওপর ন্যস্ত থাকবে। সরকারের একজন চেয়ারম্যানসহ ১২ সদস্যের ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠিত হবে। বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মনোনীত সদস্যরা তাদের মনোনয়নের তারিখ থেকে তিন বছরের জন্য বহাল থাকবেন। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, একটি আইনের মাধ্যমে ঢাকা শিশু হাসপাতাল পরিচালিত হলে সর্বস্তরের শিশুদের উন্নত চিকিৎসাসেবা দেয়ার মাধ্যমে একটি সুস্থ ও সবল জাতি গঠনে হাসপাতালটি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে আশা করা যায়।
×